পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মো: দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে : বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত তাবলীগ জামাতের বিশ্ব্ ইজতিমার প্রথম পর্ব শুক্রবার বাদ ফজর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ ১৬টি জেলা থেকে সড়ক, রেল ও নৌপথসহ সব পথেই মুসল্লিদের কাফেলা টঙ্গীর ইজতিমা ময়দানের দিকে। বৃহস্পতিবার থেকে আসতে থাকা মুসল্লিদের ঢল শুক্রবারও অব্যাহত থাকে। শুক্রবার লাখ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে পবিত্র জুম্মার নামাজ আদায় করেন। শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় গাজীপুর, উত্তরাসহ আশপাশের এলাকা থেকে থেকে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি জুম্মার নামাজ আদায় করতে ইজতিমা ময়দানে ছুটে আসেন।
এ বছর ইজতিমার প্রথম পর্বে রাজধানী ঢাকাসহ ১৬টি জেলা অংশ নিচ্ছে। চটের বিশাল সামিয়ানার নীচে জায়গা না পেয়ে আশপাশের খোলা জায়গাসহ মুসল্লিরা কামারপাড়া সড়ক ও অলিগলিসহ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যে যেখানে পেরেছেন হোগলা পাটি, চটের বস্তা, খবরের কাগজ বিছিয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করতে দেখা যায়।
হজ্বের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ হলো এ বিশ্ব ইজতিমা। ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বিশ্ব ইজতিমা থেকেই দাওয়াতি কাজে বের হন।
ইজতিমা সূত্র জানায়, বাদ ফজর উর্দূতে আমবয়ান করেন ভারতের হযরত মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খোরশেদ। বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা জাকির হোসেন।
ইজতিমার প্রথম দিনে জুম্মার নামাজে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বিপিএম, পিপিএম (বার), গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
ইজতিমা ময়দানে বৃহত্তর জুমা’র নামাজের ইমামতি করেন বাংলাদেশের মাওলানা ফারুক হোসাইন। এছাড়া জুম্মার পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ওয়াসিমুল ইসলাম, পাকিস্তানের হযরত মাওলানা এহসান ও দিল্লির হযরত মাওলানা শওকত আলী। বিশ্ব ইজতিমার আয়োজক কমিটির মুরুব্বি প্রকৌশলী গিয়াস উদ্দিন আহম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এবারে প্রথম পর্বে বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের জন্য পুরো ময়দানকে ২৭টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খিত্তা অনুযায়ী এসব জেলার মুসল্লিরা অবস্থান নিয়েছেন।
এ বছরও ইজতিমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশ ও র্যাব কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করেছে। সিসি ক্যামেরা মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা কন্ট্রেল রুম থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা অবস্থান করছেন। জানা গেছে, পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা ৫টি করে স্তরে বিভক্ত হয়ে পোশাকে ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর, নৌ-টহল, চেকপোষ্ট। দুই পর্বে প্রায় ১২ হাজার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইজতিমার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন।
এদিকে টঙ্গী হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে ৪ টি অস্থায়ী ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৪৯০ জন মুসল্লি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১ জনকে ঢাকায় রেফার্ড এবং ৪ জনকে টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থদের অধিকাংশই ঠা-া, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্ট ও হৃদরোগের রোগী বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা: আলী হায়দার খান।
দুই দিনে ৬ মুসল্লির ইন্তেকাল
বিশ্ব ইজতিমায় যোগ দিতে আসা গত দুইদিনে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৬ জন মুসল্লি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বাবুল মিয়া (৬০) নামে এক মুসল্লি ইজতিমা ময়দানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ফেনীর দাগনভূইয়া উপজেলার মাছিমপুর টেকিরহাট গ্রামের আ. রশিদ ভূইয়ার ছেলে।
টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পারভেজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ নিয়ে বিশ্ব ইজতিমার প্রথমপর্বে যোগ দিতে আসা ৬ মুসল্লির মৃত্যু হলো।
এর আগে বুধবার রাতে কক্সবাজারের মো. হোসেন আলী (৬৫), বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহের নান্দাইলের মারুয়া গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে মো. ফজলুল হক (৫৬), একই দিন বিকেলে সাতক্ষীরা জেলা সদরের খেজুরডাঙ্গা এলাকার মৃত আব্দুস সোবহানের ছেলে আ. আব্দুস সাত্তার (৬০), সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি উপজেলার নিজবন্নী এলাকার মো. জানু ফকির (৭০) ও রাতে মানিকগঞ্জের সাহেব আলী (৩৫) মারা যান।
তারা সবাই বার্ধক্যজনিত কারণ এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. পারভেজ জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।