বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
নাছিম উল আলম : বরিশাল বিমান বন্দর দিয়ে গতবছর প্রায় ৪৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও এখনো সরকারি-বেসরকারি আকাশ পরিবহন সংস্থাগুলো দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র এ আকাশপথে যাত্রী সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় না নিলেও ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিযোগীতা অব্যাহত রেখেছে। এমনকি খোদ বিমান মন্ত্রী নির্দেশ সত্তে¡ও গত প্রায় দু’বছরেও রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থাটি বরিশাল সেক্টরে যাত্রী সুবিধার বিষয়গুলো ন্যূনতম আমলে নেয়নি বলেও সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। উপরন্তু যাত্রী বান্ধব সময়সূচি প্রবর্তনের দাবির মধ্যেই গত নভেম্বর থেকে এয়ারলাইন্সটি তার ফ্লাইট সংখ্যা হ্রাসের পাশাপাশি বিরূপ তফসিল প্রবর্তন করেছে। অপর দিকে, গতবছর এপ্রিলে বরিশালের আকাশে ডানা মেলে বেসরকারি উড়ান সংস্থা-নভো এয়ার পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়ার পরও ১ জানুয়ারি থেকে এ সেক্টরে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে। আর এসব সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আরেক বেসরকারি এয়ারলাইন্স, ইউএস বাংলা বরিশাল সেক্টরে এক লাফে যাত্রী ভাড়া বাড়িয়েছে ৭০০ টাকা।
২০১৫ সালের এপ্রিলে বিমান সপ্তাহে দু’টি তৃতীয়বারের মতো বরিশাল সেক্টরে ফ্লাইট চালু করে। ওই বছরই জুলাইতে ইউএস বাংলা চারটি ফ্লাইট নিয়ে বরিশাল সেক্টরে যাত্রী পরিবহন শুরু করার পর ডিসেম্বর পর্যন্ত বরিশাল বিমান বন্দর দিয়ে সর্বমোট সাড়ে ১৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। যাত্রীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর এপ্রিলে নভো এয়ার আরো চারটি ফ্লাইট নিয়ে বরিশালের আকাশে ডানা মেলে। বেসরকারি দু’টি এয়ারলাইন্সই বরিশাল মহানগরী থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে বিমান বন্দরে যাত্রীদের পৌঁছে দিতে বিলাসবহুল তাপানুক‚ল গাড়িরও ব্যবস্থা করে। এমনকি শুরুতে নভো এয়ার একটি টিকেটের সাথে আরেকটি বিনামূল্যে প্রদানের মতো লোভনীয় সুযোগ দিয়ে পর্যাপ্ত যাত্রী পরিবহন শুরু করে। আর এ কারণে সরকারি ও বেসরকারি অপর দু’টি এয়ারলাইন্সও ভাড়া হ্রাসে বাধ্য হয়। এমনকি বিমান এক পর্যায়ে দুই হাজার টাকা ও ইউএস বাংলা ১৮শ’ টাকায়ও যাত্রী পরিবহন শুরু করে।
কিন্তু গত ডিসেম্বরে নভো এয়ার কোলকাতা ফ্লাইট চালু করার পরেই অভ্যন্তরীণ সেক্টরে হাত গোটাতে শুরু করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে এয়ারলাইন্সটি বরিশাল ও রাজশাহী সেক্টরে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে। তবে এ ব্যাপারে উড়ান কোম্পানিটির বরিশাল অফিসের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, অন্য কয়েকটি সেক্টরে যাত্রী চাপ বেশি থাকার পাশাপাশি উড়জাহাজ সঙ্কটে সাময়িকভাবে এ দু’টি সেক্টরে ফ্লাইট স্থগিত রাখা হয়েছে। খুব শিগগিরই পুনরায় বরিশাল সেক্টরে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। তবে নভো এয়ারের ফ্লাইট বন্ধ ও সরকারি বিমানের ফ্লাইট হৃাসের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইউএস বাংলা বরিশাল সেক্টরে তার সর্বনি¤œ ভাড়া নির্ধারণ করেছে তিন হাজার ৬০০ টাকা। যা আগে ছিল দুই হাজার ৯০০ টাকা।
এদিকে এক হিসেবে জানা গেছে, গতবছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বরিশাল বিমান বন্দর দিয়ে সরকারি-বেসরকারি তিনটি এয়ারলাইন্সে ৯০৮টি ফ্লাইটে ৪৪ হাজার ৪৯৩ জন যাত্রী যাতায়াত করেছে। গড়ে ফ্লাইটপ্রতি যাত্রী ছিল প্রায় ৫০ জন করে। তবে তিনটি এয়ারলাইন্সের মধ্যে সরকারি আকাশ পরিবহন সংস্থাটির অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। জাতীয় পতাকাবাহী বিমান গতবছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সপ্তাহে তিনটি ও নভেম্বর-ডিসেম্বর দু’টি করে ফ্লাইট পরিচালনা করে। এ হিসাবে গতবছর বরিশাল সেক্টরে বিমানের ১২৯টি করে মোট ২৫৮টি ফ্লাইট যাতায়াত করে। আর সংস্থাটি ওইসব ফ্লাইটে যাত্রী পরিহন করে ১১ হাজার ৬৬ জন। এর মধ্যে আগত ১২৯টি ফ্লইটে যাত্রী সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৮৩৪ জন। ফ্লাইট প্রতি গড়যাত্রী সংখ্যা ছিল ৪৫.২২ জন করে। আর বরিশালÑঢাকা ১২৯টি ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ২৩২ জন। ফ্লাইটপ্রতি গড় যাত্রী সংখ্যা ছিল ৪০.৫৫ জন করে।
অথচ ২০১৫ সালের এপ্রিলের প্রথমভাগ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সপ্তাহে দু’টি ফ্লাইট নিয়ে বরিশাল সেক্টরে যাত্রা শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫৪টি ফ্লাইটে সাত হাজার পাঁচজন যাত্রী পরিবহন করে। এ সময় সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির ফ্লাইটপ্রতি যাত্রী সংখ্যা ছিল ৪৫.৪৮ জন। অপর দিকে, ওই বছরই জুলাই মাসে বেসরকারি ইউএসÑবাংলা বরিশাল সেক্টরে যাত্রা শুরু করে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৬০টি ফ্লাইটে আটহাজার ৩৯২ জন যাত্রী পরিবহন করে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটির ফ্লাইটপ্রতি যাত্রী ছিল ৫২.৪৫ জন করে।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের হিসাব মতে, গতবছর বরিশাল সেক্টরে ইউএস বাংলার ৩৫০টি বিমানে ১৮ হাজার ৪৮৬ জন যাত্রী পরিবহন করে। এর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল রুটে ৯ হাজার ১৩৬ ও বরিশালÑঢাকা আকাশ পথে ৯ হাজার ৩৫০ জন যাত্রী পরিবহন করে বেসরকারি এ সংস্থাটি। এ হিসাবে ঢাকাÑবরিশাল রুটে গড়ে ৫২.২০ এবং বরিশালÑঢাকা রুটে ৫৩.৪২ করে যাত্রী পরিবহন করে। গতবছর এপ্রিলে চালু হয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে বেসরকারি নভো এয়ার তার ৩০০টি ফ্লাইটে ১৪ হাজার ৯৪২ জন যাত্রী পরিবহন করে। এর মধ্যে ঢাকাÑবরিশাল রুটে দেড়শ’ ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা ছিল সাত হাজার ৬০১ জন। গড়ে ৫০.৬৭ এবং বরিশালÑঢাকা রুটে সাত হাজার ৩৪১ জন, গড়ে ৪৮.৯৪ জন। বরিশাল সেক্টরে গত বছর সরকারিÑবেসরকারি তিনটি এয়ালাইন্সের মধ্যে রাষ্ট্রীয় বিমানের অবস্থান ছিল তৃতীয়।
কয়েকটি সমাধানযোগ্য গুরুতর সমস্যার কারণে বরিশাল সেক্টরে বিমান ভালো ফল করছে না বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা। বিমানের একাধিক দায়িত্বশীল মহল বিষয়টি স্বীকার করলেও তা থেকে উত্তরণের কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি খোদ বিমান চলাচল মন্ত্রীও বিষয়গুলো নিয়ে একাধিকবার পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিলেও সরকারি আকাশ পরিবহন সংস্থাটির আমলাতন্ত্রিক জটিলতায় কোনো ইতিবাচক ফল হয়নি। বরিশাল মহানগরী থেকে বিমান বন্দরের দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো এ সেক্টরের একটি নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে যাত্রীদের বিমান বন্দরে পৌঁছে দিলেও গত প্রায় দু’বছরেও বিমান তা করতে পারেনি। এ লক্ষে কোনো উদ্যোগও নেই, অথচ মন্ত্রীর দিক নির্দেশনা রয়েছে। বরিশাল অঞ্চলের সাধারণ যাত্রীদের দাবি, বৃহস্পতিবার বিকেলে এবং রোববার সকালে ফ্লাইট পরিচালনার। অথচ বিমানের একটি কুচক্রী মহল গত ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর শীতকালীন সময়সূচিতে দুদিনই ঢাকা থেকে দুপুর ১১.৫০টায় ও বরিশাল থেকে ১২.৪৫টায় ফ্লাইট সময়সূচি প্রবর্তন করার পাশাপাশি মঙ্গলবারের ফ্লাইটটি বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ যাত্রীদের দাবি ছিল মঙ্গলবারের ফ্লাইটটি সোম বা বুধবারে পরিচালনা করার। ওই দুদিন বরিশাল সেক্টরে সরকারিÑবেসরকারি কোনো ফ্লাটই নেই। কিন্তু উড়জাহাজ স্বল্পতার খোড়া অজুহাতে বিমান বরিশাল সেক্টরে তার তৃতীয় ফ্লাইটটি বন্ধই করে দিয়েছে। অথচ বিমান মন্ত্রী বরিশাল সেক্টরে ফ্লাইট হ্রাস না করারও নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এসব ব্যাপারে বেসমারিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, এসব বিষয়ে বিমানের দায়িত্বশীল মহলকে বলা হয়েছে। তারা মন্ত্রীর কাছে দুমাস সময় চেয়েছে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।