পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসব উদযাপন করেছে দুই মন্ত্রণালয়। একই দিনে দেশের সকল শিক্ষার্থীদের হাতেও নতুন বই তুলে দেয়া হয়েছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। তবে নতুন বছরের সাত দিন পরও এখনো দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই (স্কুল ও মাদরাসা) পৌঁছেনি এই বই। কোথাও কোথাও কিছু বই পৌঁছালেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই দুটি থেকে সাতটি পর্যন্ত বই হাতে পায়নি ছাত্রছাত্রীরা। বই দিতে না পারায় ক্লাসই শুরু হয়নি বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ইবতেদায়ী মাদরাসগুলোতে। এবছরই প্রথমবারের মতো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় নতুন বই দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও নাটোরে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বইও গতকাল পর্যন্ত ওই জেলায় পৌঁছেনি। যদিও আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে সকল বই তুলে দেয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা।
ঘটা করে বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে ২০১০ সাল থেকে বই উৎসব পালন করছে সরকার (শিক্ষা মন্ত্রণালয়)। একই দিনে একই সাথে সারাদেশের সকল শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়ার সাফল্যের জন্য বাহবাও পেয়েছে সংশ্লিষ্টরা। তবে প্রতিবছরই বই বিতরণ নিয়ে বিশৃঙ্খলা, বিলম্বে বই পৌঁছানো, টাকার বিনিময়ে বই দেয়ার মতো ঘটনায় মøান হতে চলেছে সেই সাফল্য। এবারও বই বিতরণে বিশৃঙ্খলা পাওয়া গেছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। রাজধানীসহ বড় শহরের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সব বই শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হলেও। এখনো পর্যন্ত অনেক প্রতিষ্ঠানে বাকী রয়েছে বই বিতরণ। দুটি থেকে সাতটি পর্যন্ত বই হাতে পায়নি তারা। বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ১৭ ইবতেদায়ী মাদরাসার ৩টি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত হাতে বই পায়নি। প্রতিদিনই ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন বই পাওয়ার আশা নিয়ে মাদরাসায় আসলেও ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে। টাঙ্গাইলের ৫ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯২ হাজার ৮৮০ জন শিক্ষার্থীকে ৩ বিষয়ের বই দেয়া হয়নি। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ২৯টি মাদরাসার ৪টি শ্রেণির ৩ হাজার ৩০০ জন শিক্ষার্থীর হাতে এখনো কোনো বই পৌঁছায়নি। এভাবে দেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আংশিক বই বিতরণের মাধ্যমে বই বিতরণ উৎসব পালন করেছে। বিনামূল্যের বই টাকার বিনিময়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। বই নিয়ে বিশৃঙ্খলার জন্য ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন তারা।
ঠাকুরগাঁও জেলা স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আল শাহরিয়ার শিশির বলেন, গত সাত দিনে দুই দফায় ৯টি বই দেয়া হয়েছে। তবে এখনো বাংলা, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং ধর্ম বই দেয়া হয়নি। ওই শ্রেণির কোন শিক্ষার্থীই এই বই পায়নি। একই অবস্থা সপ্তম থেকে নবম শ্রেণির অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরও। আগামী ১০ জানুয়ারি বাকী বইগুলো চলে আসলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সাত বিষয়ের বই পায়নি ১৯ হাজার শিক্ষার্থী। বাঞ্ছারামপুরে ২২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২৭ হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৮ হাজার ৮০০, সপ্তম শ্রেণিতে সাড়ে ৭ হাজার, অষ্টম শ্রেণিতে সাড়ে ৬ হাজার ও নবম শ্রেণিতে ৫ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, হিন্দু ধর্ম শিক্ষা, অষ্টম শ্রেণির আনন্দপাঠ (বাংলা সহপাঠ), গণিত, ইসলাম ধর্ম শিক্ষা, হিন্দু ধর্ম শিক্ষা এবং নবম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞান বই পায়নি। এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিনটি শ্রেণির সাতটি বিষয়ের বই সরবরাহ হয়নি, এমনটা আমার জানা নেই।’ শাহ রাহাত আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল করিম বলেন, ‘সপ্তম শ্রেণির দুটি, অষ্টম শ্রেণির চারটি ও নবম শ্রেণির একটি বিষয়ের বই পাইনি। তাই শিক্ষার্থীদের এসব বই দিতে পারিনি। উপজেলা পর্যায়ে যোগাযোগ করা হলে এসব বই পেতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে বলে জানতে পেরেছি।’ রূপসদী বৃন্দাবন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর মোহাম্মদ জমদ্দার বলেন, ‘বই না পাওয়ায় আমরা তিনটি শ্রেণির সাতটি বিষয়ের বই শিক্ষার্থীদের দিতে পারিনি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে না পাওয়া বইয়ের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শিগগিরই পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন।’
একটি বইও হাতে না পেয়ে হতাশ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ১৭ ইবতেদায়ী মাদরাসার ৩টি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত হাতে বই পায়নি। প্রতিদিনই ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন বই পাওয়ার আশা নিয়ে মাদরাসায় আসলেও ফিরে যেতে হচ্ছে খালি হাতে। ইবতেদায়ী ক্লাসের ১ম, ২য় ও ৫ম শ্রেণির কোন বই শিক্ষার্থীরা হাতে পায়নি। ১ জানুয়ারী ৯ম শ্রেণির জীব বিজ্ঞান ৪০৫টি ও অর্থনীতি ৩৬০টি বই বিতরণ করা হয়নি। ইবতেদায়ী মাদরাসার ১ম শ্রেণি, ২য় শ্রেণি ও ৫ম শ্রেণির কিছু বই পৌঁছালেও ১ম শ্রেণির ইংরেজী ৮২০, ২য় শ্রেণির আরবী ৭৫০, বাংলা ৭৫০, গণিত ৭৫০টি বই এখনও পাওয়া যায়নি। একই অবস্থা টাঙ্গাইলের ৫ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯২ হাজার ৮৮০ জন শিক্ষার্থী ৩ বিষয়ের বই ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পায়নি। বই না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষ বলছে, আগামী সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে যাবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ও ধর্ম শিক্ষা বই এখনো ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট পৌঁছেনি। টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, জেলার ৫ উপজেলায় তিনটি বিষয়ের বই বুধবার পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেনি। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যেই বইগুলো ছাত্র-ছাত্রীরা পেয়ে যাবে।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিলাহাটি মার্চেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্ষর্থীরাও এখনো নতুন বই ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। বই না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সিরাজুম মনিরা বলেন, বছরের প্রথম দিন বিদ্যালয়ে সকাল থেকে অবস্থান করে বই হাতে পাইনি। হেড স্যার বলছেন, নতুন ক্লাসে ভর্তি ছাড়া বই দেয়া হবে না। ওই বইয়ের জন্য বিদ্যালয়ে পর পর তিন দিন গিয়ে ফেরৎ এসেছি। নবম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী সিদ্ধাতুল মোনতাহাব লাবিব বলেন, আমাদের ক্লাসের কাউকেই এখনো নতুন বই দেয়া হয়নি। রোজিনা বেগম নামের এক অভিভাবক বলেন, ছেলে রিকুনুজ্জামান ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে এবার। নতুন বইয়ের জন্য বিদ্যালয়ে তিন দিন গিয়ে ফিরে এসেছে। ছেলের কাছে শুনেছি নতুন ক্লাসে ভর্তি ছাড়া বই হাতে দিবে না হেড স্যার।
পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ২৯টি মাদরাসার ৪টি শ্রেণির ৩ হাজার ৩০০ জন শিক্ষার্থীর হাতে এখনো কোনো বই পৌঁছায়নি। এসব মাদরাসায় ৮ হাজার ৫০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা চার বিষয়ের বই পায়নি। উপজেলার ১৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ৮ হাজার ৫০৩ জন শিক্ষার্থী এখনো চার বিষয়ের বই পায়নি। বই না থাকায় ক্লাসও শুরু করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানায়, প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সব বিষয়ের বই পেলেও পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের হাতে শুধু দুই বিষয়ের বই তুলে দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পঞ্চম শ্রেণীর সব বই আনার চেষ্টা চলছে।
বগুড়ার শাজাহানপুরের ১৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনো সব বই বুঝে পায়নি। ওই উপজেলায় সাড়ে ৯ হাজারের বেশি বই এসে পৌঁছায়নি। আজকের মধ্যে সব বই বিতরণ কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ রানা। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, উপজেলার ১৯৪টি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৭ হাজার ৪২৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা দেয়া হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে। কিন্তু ১ জানুয়ারির বই উৎসবে দেখা যায় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার বই ছাড়া আর কোনও বই পৌঁছায়নি। আর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা, ইংরেজি এবং সমাজ বই পৌঁছালেও গণিত, বিজ্ঞান এবং ধর্মীয় শিক্ষার বই আসেনি। পরে গত ১ জানুয়ারি রাতে তৃতীয় শেণির বিজ্ঞান বই বাদে অন্য ৪টি বিষয়ের বই এবং পঞ্চম শ্রেণির অবশিষ্ট ৩টি বিষয়ের বই শাজাহানপুরে পৌঁছে। শাজাহানপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সব বই পাওয়া যায়নি। আগে যেসব বই এসেছে তা বিতরণ করা হয়েছে। আশা করছি আগামী রোববারের মধ্যে বই বিতরণ শেষ হবে।
এবারই প্রথম ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের মাতৃভাষায় বই দেয়ার ঘোষণা ছিল। তবে নাটোরের পাঁচ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির শিক্ষার্থীরা এখানো সেই বই তাদের হাতে পায়নি। শিক্ষা অফিস বলছে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের জন্য আলাদা কারিকুলাম না থাকায় তাদের নিজস্ব ভাষার বই দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। শংকরভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা নার্গিস বলেন, দিন দিন আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বছর সরকার ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য বই দেয়ার ঘোষণা দিলেও আমার স্কুলে এখন পর্যন্ত বই আসেনি। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে ফোন দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।