পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এক দশকের বেশি সময় ধরেই ১ জানুয়ারি সারাদেশের সকল শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছে সরকার। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃত্বে ২০১০ সালে এই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল। করোনা মহামারির মধ্যেও চলতি বছর নির্ধারিত সময়ে বই পেয়েছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অবহেলা ও পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে গিয়ে এবার বই উৎসবকেই অনিশ্চয়তায় ফেলে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তারা তাদের সর্বোচ্চ গতিতেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু যে সময়
কাজ দেয়া হয়েছে তাতে নির্ধারিত সময়ে বই পৌঁছানো কোনভাবেই সম্ভব না। আর নিজেদের ভুলের কারনে এনসিটিবিও আমাদের কিছু বলতে পারবে না। তবে এনসিটিবি এখনো আশা প্রকাশ করছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তারা শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিতে পারবে।
জানা যায়, ২০২২ সালে ৪ কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ কোটি এবং মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ২৫ কোটি বই ছাপাতে হবে। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত প্রাথমিকের ৯ কোটি ৫৪ হাজার বই ছাপানো হয়েছে। আর ৮ কোটি ৩৮ লাখ বই মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান থেকে ডেলিভারি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে মাধ্যমিকের ৫ কোটি ৭২ লাখ বই এখনো ছাপানোই হয়নি। যদিও মুদ্রণ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বই ছাপানো হয়নি যে সংখ্যা বলা হচ্ছে বাস্তবে তার সংখ্যা আরও বেশি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) হিসাব অনুযায়ী, প্রাথমিকে ৮ কোটি ৩৮ লাখ ৫৪ হাজার আর মাধ্যমিকে প্রায় ১৯ কোটি ছাপা হলেও তা সরবরাহে আরও কয়েকদিন লেগে যেতে পারে। কেননা বই মুদ্রণের পর তা বাঁধাই, কাটিংসহ আরও কিছু পর্যায় বাকি থাকে। এরপর তা বিভিন্ন উপজেলায় পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন সারাদেশে ১ জানুয়ারি বই উৎসব করতে হলে ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছাতেও সময় লাগবে। এখন বই ছাপার কাজ যে পর্যায়ে আছে, সে হিসেবে ১ জানুয়ারি বই উৎসবের দিনে সকল শিক্ষার্থী যে উৎসবে শামিল হতে পারবে তা অনেকটাই অনিশ্চিত। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীই বছরের প্রথম দিনের উৎসব থেকে বঞ্চিত হবে। অনেকের হাতেই বই তুলে দিতে পারবে না সরকার। এনসিটিবির দায়িত্বহীনতার কারণেই এবছর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকের ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির ৯ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৩০টি বইয়ের মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছে ৮ কোটি ৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৪০টি (৮৬ শতাংশ)। প্রাক-প্রাথমিকের ৬৬ লাখ ৫ হাজার ৪৮০টির মধ্যে ছাড় পেয়েছে ৩৩ লাখ ২ হাজার ৭৪০টি (৫০ শতাংশ)। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৪টি বইয়ের মধ্যে শতভাগ ছাড় পেয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিতে পুনঃদরপত্র আহ্বান করায় মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কাজ দেরি হয়েছে। এজন্য ১ জানুয়ারি বই উৎসব হলেও অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই দেয়ার ক্ষেত্রে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বশেষ সময় ৩১ জানুয়ারি, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেনির জন্য ২২ জানুয়ারি। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত দিনে বই হাতে পেলেও তাই মাধ্যমিকের কোটি শিক্ষার্থী এবার বই পাবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপানোর জন্য পাঁচ ভাগে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ইবতেদায়ি স্তরের (তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি), দাখিল স্তরের অষ্টম ও নবম শ্রেণির এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের ২৮০ লটের মধ্যে ৩২টি লটের বই ছাপার জন্য গত ১৪ সেপ্টেম্বর নোটিফিকেশন অফ অ্যাওয়ার্ড (নোয়া) দেওয়া হয়েছে। চুক্তির শর্তানুযায়ী ৯৮ দিনের মধ্যে বই ছাপিয়ে মাঠ পর্যায়ে সরবরাহ করতে হবে। ৩২ লটে মাত্র এক কোটি ৬৮ লাখ ৩০ হাজার ৯৭১টি বই রয়েছে। ২০৮লটে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম, ইবতেদায়ি স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয়, দাখিল স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই ছাপার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এর মধ্যে ২০টি লটে এক কোটি সাত লাখ ৫২ হাজার ৮৪০টি বই আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বই সরবরাহের চুক্তি করা হয়েছে।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক স্তরের (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ইবতেদায়ি স্তরের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণি, দাখিল স্তরের অষ্টম ও নবম শ্রেণির এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের ২৪৮ লটের বই ছাপার জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। ২৪৮ লটে ১০ কোটি সাত লাখ ৫২ হাজার ৮৪০টি ছাপানো হবে। একই স্তরের ১০ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৮টি বই ছাপানের জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১৮৮টি লটের মাধ্যমে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম, ইবতেদায়ি স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয়, দাখিল স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ১১ কোটি ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯৫টি বই ছাপার জন্য পুনঃদরপত্র দেওয়া হয় ১৯ জুলাই।
প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত বলেন, আমি জানিনা কি উদ্দেশ্যে, সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য টেন্ডারের শর্ত পরিবর্তন করে লাখ লাখ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে একটি মাত্র প্রতিষ্ঠানকে লাভবান করার জন্য এ দেরিটা হলো। সরকারের সবচেয়ে সফল কর্মসূচিটি ঝুঁকিতে ফেরা হলো। তিনি বলেন, আমরা মনে করি কিছুদিন আগে কয়েকজন কর্মকর্তা এখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে গেছে, এই কর্মকর্তাদের অতি উৎসাহ, লোভ এবং তারা লাভবান হওয়ার জন্য এ কাজটি করে উৎসবটিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া উচিত যে, কে কে এর জন্য লাভবান হলো। এখনো বোর্ডে দু’একজন কর্মকর্তা আছেন যারা এর সাথে জড়িত।
জানা যায়, দেরিতে দরপত্রের কাজ করায় এনসিটিবি বই সরবরাহের ক্ষেত্রেও এবার ‘আংশিক’ নীতি গ্রহণ করে। অর্থাৎ, ৩০ ডিসেম্বরে সব বই গ্রহণের পরিবর্তে আংশিক বই পাওয়ার ব্যাপারে চুক্তি করেছে। এবার যে ৩৫ কোটি বই ছাপানো হচ্ছে, এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে আছে ৯ কোটি ৯৮ লাখ। আর মাদরাসার দাখিল, ইবতেদায়ি, ভোকেশনাল ও সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমিক স্তর মিলিয়ে ছাপানো হচ্ছে ২৪ কোটি ৫১ লাখ ৫৬ হাজার। মাধ্যমিক স্তরের বই দুই ভাগে দরপত্র দেওয়া হয়। প্রথম ভাগে অষ্টম-নবম আর ইবতেদায়ির তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বই ছাপানোর চুক্তি হয় ৮ নভেম্বর। এই দরপত্রে মুদ্রাকরদের ৮৪ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সেই হিসাবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের সময় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এতে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ৫০ শতাংশ বই সরবরাহের শর্ত দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে চুক্তি অনুযায়ী, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি এবং ইবতেদায়ির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বই সরবরাহে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় পাচ্ছেন মুদ্রাকররা। এই দরপত্রে বই সরবরাহে সময় দেওয়া হয় ৭০ দিন। সেই হিসাবে ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে অর্ধেক বই সরবরাহের শর্ত দেওয়া হয়।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, প্রাথমিক স্তর নিয়ে হয়তো সমস্যা হবে না। এর মধ্যে অবশিষ্ট বই চলে যাবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাধ্যমিকের ছাপাই হয়নি ৭ কোটি বই। আবার ছাপা হয়েছে কিন্তু বাঁধাই-কাটিং হয়নি-বিভিন্ন প্রেসে এমন বই আছে কয়েক কোটি। এসব দৃষ্টিকোণ পর্যালোচনায় বলা যায়, ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ বই যাবে। বাকি বই সরবরাহে মধ্য জানুয়ারি লেগে যেতে পারে। আর এমনটি হলে আইনগতভাবে এনসিটিবি মুদ্রাকরদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থায় যেতে পারবে না।
তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী, ৯ নভেম্বর থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বইয়ের জন্য ৮৪ দিন সময় ধরে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বই দেয়ার সময় আছে। ষষ্ট ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের জন্য আমাদের সাথে চুক্তি হয়েছে ৭০ দিন সময় দিয়ে। এই ৭০ দিনে আমরা ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত বই দিতে পারবো। এনসিটিবি কোন অবস্থাতেই আমাদেরকে বলতে পারে না যে ৩১ ডিসেম্বরের আগে বই দিতে হবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, ইতোমধ্যে প্রাথমিকের ৯৮ শতাংশ পাঠ্যপুস্তক আমরা উপজেলায় পৌঁছে দিতে পেরেছি। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল পাঠ্যপুস্তক উপজেলায় পৌঁছে যাবে। আর মাধ্যমিকের বইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, মাধ্যমিকের ২০ কোটি বই ছাপানো হয়েছে এবং ১৬ কোটি বই ডেলিভারি দিতে পেরেছি, উপজেলায় পৌঁছে গেছে। বাকী বই ৩০ তারিখের মধ্যে মুদ্রণকাজ শেষ হবে এবং পর্যায়ক্রমে ডেলিভারি দিতে পারবো। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।