বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা কুমিল্লা নগরীর অর্ধশতাধিক ভবনে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে অবস্থান করছে হাজারো মানুষ। প্রায় আট বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তন ও অত্যধিক ভূকম্পের আশঙ্কায় কুমিল্লা শহরে জরিপ চালিয়ে প্রায় ৭৬টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এসব ভবনের হাতেগোনা ৮-৯টি ভবন ভেঙে ফেলা এবং সংস্কার করা হলেও গত আট বছরে কয়েকবার ভূকম্পনের ঘটনায় সারাদেশ কেঁপে উঠলেও কিন্তু ওই সব ভবন মালিকরা ঝুঁকির বিষয়টি মোটেই পাত্তা দিচ্ছেন না। গতকাল বিকেলে ভূকম্পনের ধাক্কায় কুমিল্লার ওই সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থেকে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে আসে নিজেদের জীবন রক্ষায়। অথচ টনক নড়ছে না কুমিল্লা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মালিকদের। ভবন মালিকরা বুঝতেই চাইছেন না যেকোনো সময় ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়ায় আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে ওই সব ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ি, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে কুমিল্লা শহরে অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভূমিকম্প হলেই এসব ভবনের লোকজন হুড়োহুড়ি করে রাস্তায় নেমে আসে। কিন্তু ভবন ভাঙা বা সংস্কারের কোনো নামগন্ধ নেই। ওই সব ভয়ানক ভবনের আশপাশের সাধারণ বাসিন্দা যারা ঝুঁকির মধ্যে নেই তারাও চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকেন প্রতিনিয়ত। কেননা, ভূমিকম্পে এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হলে আশপাশের বাড়িঘর, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরও ব্যাপক ক্ষতিসহ প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। কুমিল্লা নগরীর অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের অধিকাংশই শত বছরের পুরনো। ভবনগুলোর দেয়াল ও ছাদ থেকে আস্তর খসে পড়েছে। কোনোটির দেয়ালও ছাদের অংশে গাছ-গাছালি গজিয়েছে। আবাসিক ভবনগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লোকজন বসবাস করছে। আর বাণিজ্যিক ভবনগুলোতে কাজকর্ম চলছে অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে। আবার নতুন করে নির্মিত অনেক ভবনই বিল্ডিং কোড না মেনে করার কারণে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে পড়েছে।
কুমিল্লা শহরে বর্তমানে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে এমন সব ভবনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কান্দিরপাড়ের পূবালী ব্যাংক ভবন। গত বছর এ ব্যাংক ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে গিয়েছিল। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ব্যাংকের সামনের অংশের দোতলায় ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হলেও নিচতলায় চলছে দোকানপাট ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম। গতকাল বিকেল তিনটা ১০ মিনিটের দিকে ভূকম্পনের ঝাঁকুনি অনুভূত হলে লোকজন দোকানপাট থেকে রাস্তায় নেমে আসে। গতকাল ভূকম্পনের সময় একই দৃশ্য দেখা গেছে মনোহরপুর-রাজগঞ্জ সড়কে জাতীয় পার্টির অফিসসহ বাটা দোকান ও আফতাব ব্রাদার্স নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে থাকা লোকদের। আবার মনোহরপুরে কৃষি ব্যাংক ভবনের লোকজনও হৈ-হুল্লড় করে রাস্তায় নেমে আসে। ভূমিকম্পের চরম ঝূঁকিতে থাকা শহরের অন্যান্য ভবনগুলো হলোÑ রানীর দীঘির পূর্ব পাড়ে ফুলার হোস্টেল, চকবাজার কাশারিপট্রি মোড়ে সাবেক মারুফ রেস্ট হাউজ, মুন্সেফ বাড়ি এলাকায় অ্যাডভোকেট হাবিব উল্লাহ চৌধুরীর বাসভবন, উজির দীঘিপাড়ে দুদকের সাবেক কার্যালয় (বর্তমানে এ্যাপোলো নামে একটি স্কুল), বাদুরতলায় তিনতলাবিশিষ্ট চৌধুরী মার্কেট, একই এলাকায় সাবেক সিংহ প্রেস, অশোকতলায় এনএসআই অফিস বিল্ডিং, অশোকতলায় প্রয়াত শিল্পী নাছির উদ্দিনের সরকারি বন্দোবস্তীয় দোতলা ভবন ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, ধর্মপুরে জাতীয় মহিলা সংস্থার কার্যালয়, জেলা সমবায় ইউনিয়ন অফিস, বাগিচাগাঁও এলাকায় আনন্দকানন ভবন, গণপূর্ত বিভাগের কোয়ার্টার, রামঘাট এলাকায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়, মোগলটুলির তাজমহল বিল্ডিং, ঠাকুরপাড়ার মৃণালিনী দত্ত ছাত্রী নিবাস, ঝাউতলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত রাজল²ী ভবন ও কামিনী কুটির। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।