Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২৮ মাস পর হোয়াইট ওয়াশের লজ্জা

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : এক সময়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের উপরের সারির দলগুলোর কাছে হোয়াইট ওয়াশে বাধ্য হওয়াকে নিয়তি বলেই মেনে নিত বাংলাদেশ দল। বিচ্ছিন্ন জয়ে হতো দেশজুড়ে উৎসব। দৃশ্যপট বদলে ধারাবাহিক দলে পরিণত বাংলাদেশকে দেখেছে বিশ্ব। যে ধারাবাহিক দলের সুখ্যাতিটা এবার আর বজায় রাখতে পারেনি মাশরাফিরা। ২০১৪ সালের আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে হোয়াইট ওয়াশের দু:সহ স্মৃতি ফিরে পেলো বাংলাদেশ ২৮ মাস পর! বিদেশের মাটিতে, বিশেষ করে বাউন্সি উইকেট এবং ভিন্ন কন্ডিশনের পরীক্ষাটা ছিল নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে অতীতে বাংলাদেশের নেই কোনো জয়, সেই অতীত বদলে নতুন অধ্যায় রচনার মিশনও ছিল এই সফর। সর্বশেষ দুইটি দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে বাংলাওয়াশের (২০১০ সালে ৪-০,২০১৩ সালে ৩-০) স্মরণীয় স্মৃতিও ছিল সঙ্গে। তবে অতীতের পথেই হেঁটেছে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিক দলের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডে সিরিজে বিপর্যস্ত হয়েই হোয়াইট ওয়াশে বাধ্য হতে হলো বাংলাদেশ দলকে। নিউজিল্যান্ডের কাছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হারের ব্যবধানও কম বড় নয়, সিরিজের প্রথম ২ ম্যাচে ৭৭ এবং ৬৭ রানের পর শেষ ম্যাচে ৮ উইকেট। প্রথম ম্যাচ দুইটিতে বাংলাদেশ খেলতে পারেনি ৩১ এবং ৪৪টি বল, শেষ ম্যাচে ৫২ বল হাতে রেখে ৩৮ মাস আগে হোয়াইট ওয়াশের বদলা নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ৯৫ র‌্যাঙ্কিং পয়েন্ট নিয়ে শুরু করে পয়েন্ট বাড়িয়ে নেয়ার মিশনে উল্টো বাংলাদেশ ৩ পয়েন্ট হারিয়ে এখন পড়েছে বড় ধরনের শংকায়। ২০১৯ বিশ্বকাপে সরাসরি অংশগ্রহণে র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা ৮ এ থাকার লড়াইয়ে এখন পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে লড়তে হবে বাংলাদেশকে। যে লড়াই ফয়সালা হবে এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর।
আশ্চর্য হলেও সত্য, নিউজিল্যান্ডকে দেখে শিখতে পারেনি বাংলাদেশ দল একটি ম্যাচেও। টপ অর্ডারদের দারুণ শুরুর পরও হয়নি উজ্জীবিত বাংলাদেশ দল। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে দ্বিতীয় উইকেট জুটির ৭৫ রানে জয়ের স্বপ্ন দেখা বাংলাদেশ দল শেষ ৯ উইকেট হারিয়েছে ৭৯ রানে। এ রান আউটেই বদলে গেছে দৃশ্যপট। শেষ ওয়ানডে ম্যাচেও দারুণ সম্ভাবনার জানান দেয়া ওপেনিং জুটির ১০২ রানের পরও ব্যাটিং বিপর্যয়ের কবলে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। শর্ট থার্ডম্যানে নিল ব্রুমের অবিশ্বাস্য ক্যাচে ইমরুলের ফিরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু বিপর্যয়। সর্বনাশা সেই আউট দিয়ে শুরুÑ১৩৪ রানে পড়েছে ১০ উইকেট! উইকেটহীন ১০২ রানে এক পর্যায়ে স্কোরটা যেখানে স্বপ্ন দেখিয়েছে ৩শ’ ছাড়িয়ে যাওয়ার, সেই ইনিংসটাই থেমেছে ২৩৬-এ তাও আবার অষ্টম জুটির ৩৩ রানের কল্যাণে!
দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে বাগে পেয়ে ২৫১ তে ইনিংস গুড়িয়ে দিয়ে জিততে না পারার ছবিটাই যেনো ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশ দল গতকাল। দ্বিতীয় ম্যাচে ইমরুলের রান আউটে মূল্য দিতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। গতকাল নেলসনে সিরিজের শেষ ম্যাচেও ইমরুল কায়েসের উইকেট ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। হেনরিকে সাব্বির ২৩ এবং ২৫ তম ওভারে ২টি করে বাউন্ডারি মেরে দ্বিতীয় ম্যাচের পাপমোচন করছেন বলে মনে করেছেন যারা, তাদেরকে হতাশ করেছেন সাব্বির। সেই হেনরির লেগ স্ট্যাম্পের বাইরে পিচিং ডেলিভারি অকরাণে গøান্স করতে যেয়ে কট বিহাইন্ডে সঁপে দিয়েছেন নিজেকে (১৪ বলে ১৯)। ০, ১’র পর ৩Ñএমন তিন ইনিংসে মাহামুদুল্লাহ ও প্রশ্নবিদ্ধ ( ০,১,৩)। যেভাবে সাউদিকে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়ে করেছেন আত্মহত্যা,তা দৃষ্টিকটু। প্রথম ম্যাচে অল রাউন্ড পারফর্ম করেও ( ৩/৬৯ এবং ৫৯রান) সাকিব পাননি হাততালি। উইকেট বিলিয়ে দিয়ে খলনায়ক সাকিব। দ্বিতীয় ম্যাচে বোলিংয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে তার ব্যাটিংয়ে (৭ রান)। সিরিজের শেষ ম্যাচে প্রথম রানটির জন্য অপেক্ষা পঞ্চম বল পর্যন্ত, দ্বিতীয় রানের আগে আরো তিনটি ডট ! অষ্টম রানের পর নবম রানের জন্য ডট বলের সংখ্যা তিনটি। ফ্লিক করতে যেয়ে পিচের উপর বল রেখে তার দৌঁড়টাই ডুবিয়েছে বাংলাদেশ দলকে রান আউটে কাঁটা পড়ে ইনিংস শেষ হয়েছে তার ১৮ রানে, যে ইনিংসে রানের জন্য ধুঁকতে থাকা সাকিবকে খেলতে হয়েছে ৩৫টি বল! স্ট্রাইক রেট মাত্র ৫১.৪২!
লেগ স্পিনার কাম ব্যাটসম্যান তানবীরের অনুজ্জ্বল অভিষেক (২ ম্যাচে ৫ রান এবং ০/৬৭) এক অর্থে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে। মুশফিকুরের ইনজুরিতে ওয়ানডে অভিষেকে ৩ ডিসমিসাল এবং ২৪ রানের ইনিংসের পর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে লড়াকু ৪৪ রানে প্রতিভার জানান দিয়েছেন নুরুল হাসান সোহান। পুরো সিরিজ জুড়ে বাংলাদেশের ভঙ্গুর ব্যাটিংয়ে ব্যতিক্রম শুধু দুই বাঁ-হাতি ওপেনার। তিন ম্যাচে বাংলাদেশ দলের রানের সমষ্টি যেখানে ৬৮৭, সেখানে এই দু’জনের অবদান ২৩২! সিরিজের শেষ ম্যাচে তামীমের ফিফটি (৫৯), ইমরুলের ৪৪ ছিল প্রশংসিত। জুটিবদ্ধ হয়ে এই দু’জন তিন ফরমেটের ক্রিকেট মিলে ৪ হাজার রানের (৪ হাজার ৯৭) মাইলস্টোনে রেখেছেন পা শনিবার। হাফ ফিট মুস্তাফিজুরকেও রাখতে হচ্ছে ব্যতিক্রর্মীদের সংক্ষিপ্ত তালিকায়। ৫ মাস পর খেলতে নেমে সিরিজের প্রথম ম্যাচে পেয়েছেন ২ উইকেট এই কাটার মাস্টার (২/৬২)। বিশ্রামে কাটিয়ে নিউজিল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যানকে গতকাল ফিরিয়েছেন। বাংলাদেশের অর্জিত ২টি উইকেটই তার (২/৩২)। তার প্রথম স্পেলে (৪-২-৬-১) নিউজিল্যান্ড টপ অর্ডাররা চোখে সরষেফুল দেখেছে। অথচ কি জানেন, ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মার্টিন গাপটিলের ইনজুরিতে শংকিত না হয়ে এই ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডকে টেনে তুলেছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামস (৯৫ নট আউট) এবং নিল ব্রæম (৯৭)। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তাদের ১৭৯ রানের রেকর্ড নিউজিল্যান্ডকে দিয়েছে বড় জয় উপহার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লজ্জা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ