নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ১০ উইকেটের লজ্জার হারে দুই ম্যাচের সিরিজও খোয়ালো বাংলাদেশ। গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচের পঞ্চম ও শেষ দিনে জয়ের জন্য সফরকারী লঙ্কানদের লক্ষ্য ছিল মাত্র ২৯ রানের। যা তাড়া করতে একদমই সময় নেয়নি শ্রীলঙ্কা। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করে মাত্র তিন ওভারেই বিনা উইকেটে ২৯ রান তুলে দলকে বড় জয়সহ সিরিজ এনে দেন দুই লঙ্কান ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দো ও দিমুথ করুনারাত্নে। এর আগে চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সমানে সমান লড়াই করে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। মিরপুরে জিতে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জয়ের বড় সুযোগ দেখছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় মিলেছে ১০ উইকেটের লজ্জার হার!
ঢাকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের দারুণ সেঞ্চুরিতে ৩৬৫ রানের পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে সেঞ্চুরি হাঁকান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও দিনেশ চান্দিমাল। অলআউট হওয়ার আগে শ্রীলঙ্কা পায় ৫০৬ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ। ফলে সফরকারীদের লিড দাঁড়ায় ১৪১ রানের। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ভয়াবহ ব্যর্থতার পরিচয় দেন স্বাগতিক দলের ব্যাটাররা। সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের ফিফটির পরও ১৬৯ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে জয় পেতে মাত্র ২৯ রানের লক্ষ্য পায় শ্রীলঙ্কা। ওপেনার ওশাদার ৯ বলে ২১ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে তিন ওভারেই ম্যাচ জিতে নেয় শ্রীলঙ্কা।
গতবছর শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েও প্রথম টেস্ট ড্র করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরের ম্যাচে হেরে খোয়ায় সিরিজ। এবার ঘরের মাঠেও একই ফলের পুনরাবৃত্তি। এ নিয়ে লঙ্কানদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টানা তিন সিরিজে এক ম্যাচ ড্র ও অন্যটি হারলো সাদা পোষাকের টাইগাররা।
এর আগে টপঅর্ডারের ধারাবাহিক ব্যর্থতায় বৃহস্পতিবার ম্যাচের চতুর্থ দিন বিকালে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ দিকে লিটন ও মুশফিক মিলে ৩.৫ ওভার কাটিয়ে দেন অনায়াসে। ফলে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ৩৪ রান তুলে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করে। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও লিটন-মুশফিকের কাঁধে চাপে বড় দায়িত্ব। সেই আত্মবিশ্বাস থেকে কাল দিনের শুরুতেও ইতিবাচক খেলতে থাকেন মুশফিক। ম্যাচের শেষ দিনের শুরুতে বেশ আক্রমণাত্মক ফিল্ড সাজায় লঙ্কানরা। কিন্তু লিটন-মুশফিকের সাবলীল ব্যাটিংয়ের কারণে খানিক রক্ষণাত্মক হয়ে যায় তারা। আসিথা ফার্নান্দোর ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকান মুশফিক। আসিথার তুলনায় কাসুন রাজিথার বোলিং ছিল বেশি নিয়ন্ত্রিত। অফস্ট্যাম্পের বাইরে থেকে হালকা মুভমেন্টের বেশ কিছু ডেলিভারিতে লিটনের মনে শঙ্কা জাগানোর চেস্টা করেন তিনি। ইনিংসের ১৯তম ওভারে তো রাজিথার বলে লিটনকে কট বিহাইন্ডই দিয়ে বসেছিলেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে নিজের উইকেট বাঁচান লিটন। রাজিথার পরের ওভারে মুশফিক পারেননি নিজেকে বাঁচাতে। অফস্ট্যাম্পের বাইরে লেন্থ ডেলিভারিটি হালকা স্কিড করে সোজা আঘাত হানে স্ট্যাম্পে। দ্রুত ব্যাট নামিয়েও বোল্ড হওয়া থেকে বাঁচতে পারেননি মুশফিক। আউট হয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪ চারের মারে ২৩ রান। মুশফিক ফিরে যাওয়ার পর আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। চাপ দূর করার জন্য লঙ্কানদের দুই মূল বোলার রাজিথা ও আসিথার বিপক্ষে দারুণ ব্যাট চালান সাকিব-লিটন। তাই বলে বাড়তি ঝুঁকি নেননি তারা। অফস্ট্যাম্পের বাইরে হাত খোলার মতো ডেলিভারিগুলোকে সীমানাছাড়া করেছেন এ দুজন। রাজিথার করা ২৫তম ওভারে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকান সাকিব। তিনটিই ছিল অফস্ট্যাম্পের বাইরে ফুল লেন্থের ডেলিভারি। হাত খুলে কভার দিয়ে চালিয়ে দেন সাকিব। সেই ওভার পর রাজিথাকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে নেন লঙ্কান অধিনায়ক। বাঁহাতি স্পিনার প্রবীণ জয়াবিক্রম নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে খানিক ভয়ের কারণ হয়েছেন। তবে লিটনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ের কারণে সফলতা পাননি এ তরুণ স্পিনার। আসিথার ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩০ ওভারের মধ্যেই দলীয় শতরান পূরণ করেন সাকিব-লিটন।
চট্টগ্রাম টেস্টের একমাত্র ইনিংসে খাটো লেন্থের ডেলিভারিতে পরাস্ত হয়েছিলেন সাকিব। তাই এবার আক্রমণাত্মক সাকিবের বিপক্ষে একের পর এক বাউন্সার মারতে থাকেন আসিথা। এবার বাউন্সারগুলো ছেড়ে ছেড়ে খেলতে থাকেন সাকিব। হতাশ হয়ে আসিথাকেও সরিয়ে নেন করুনারাত্নে। লিটন-সাকিবের জুটিতে ৬০ রান পেরিয়ে যাওয়ার পর দিনের ২১ ওভার শেষে দুই প্রান্ত থেকেই স্পিন আক্রমণ শুরু করে শ্রীলঙ্কা। একপাশে রমেশ মেন্ডিস ও অন্যপাশে জয়াবিক্রমের চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েন সাকিব-লিটন। দুই পাশ থেকে স্পিন আসায় রানের গতি কিছুটা কমে যায়। তবে এদিন প্রথম সেশনে কোনো বিপদ ঘটতে দেননি সাকিব-লিটন। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই ক্যারিয়ারের ২৭তম ফিফটি তুলে নেন সাকিব, বাংলাদেশ পায় ৮ রানের লিড। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনে ফিরতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। এই সেশনের প্রথম ওভারে অবশ্য ফিফটি পূরণ করেন লিটন। ক্যারিয়ারের ১৩তম ফিফটি করে তিনি আউট হন আসিথা ফার্নান্দোর দুর্দান্ত বলে তার হাতেই ধরা পড়ে। আউট হওয়ার আগে লিটন করেন ১৩৫ বলে ৫২ রান। তার বিদায়ে ভাঙে ১০৩ রানের জুটি। এরপর সাকিবকেও আউট করেন আসিথা। তার বাউন্সারে মারবেন না ছাড়বেন- এমন দ্বিধায় পড়ে কট বিহাইন্ড হন সাকিব। সাত চারের মারে ৭২ বলে ৫৮ রান করেন তিনি। মোসাদ্দেককে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন রমেশ মেন্ডিস। প্রথম ইনিংসে শূন্যের পর এই ইনিংসে ৯ রান করেন তিনি। পরের ওভারে পরপর দুই বলে তাইজুল ইসলাম ও খালেদ আহমেদকে আউট করে বাংলাদেশকে গুটিয়ে দেন আসিথা। দু’জনই আউট হন শূন্য রানে। সবমিলিয়ে ৫১ রান খরচায় ক্যারিয়ার সেরা ৬ উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হন আসিথা। এছাড়া রাজিথা ২ ও রমেশ নেন ১টি করে উইকেট। সিরিজের সেরা খেলোয়াড়ন হন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।