Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুমিল্লা ও সিলেটে ইজতেমায় লাখ লাখ মুসল্লি

| প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কুমিল্লার গোমতী নদীর তীরে জুমার নামাজ আদায় করেছেন লাখ লাখ মুসল্লি। বিশ্ব ইজতেমার অংশ হিসেবে কুমিল্লায় অনুষ্ঠিত ইজতেমায় অংশ নেয়া লাখো মুসল্লি ছাড়াও গতকাল শুক্রবার কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য মুসল্লি জুমার নামাজ আদায় করতে শরীক হন ইজতেমা স্থলে। দুপুর দেড়টায় ইজতেমাস্থলের পশ্চিম দিকে অবস্থিত মূলমঞ্চ থেকে খুতবা শেষে লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে শুরু হয় জুমার নামাজ। তাবলীগ জামাতের একজন দায়িত্বশীল মুরুব্বী জুমার জামাতে ইমামতি করেন।
জুমার নামাজ শেষে দুই বালেগ পুরুষের জানাযা অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা ময়দানে। জানাযা শেষে লাখো মুসল্লির উদ্দেশে তাবলীগ জামাতের একজন মুরুব্বী ও ইসলামি চিন্তাবিদ বয়ানে বলেন, মুসলমানের সবচেয়ে বড় মূল্যবান সম্পদ হলো তার ঈমান। কবরে হাশরে তারাই সব ছাওয়াল জবাব পরিপূর্ণভাবে দিতে পারবে যারা ঈমানের পথে চলে আল্লাহর হুকুম ও রসূলের তরিকায় ইহজিন্দেগী পার করেছে। বয়ানে আরও বলা হয়, নবী করীম সা. ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। মানুষকে আখলাক দিয়ে জয় করেছেন। মহব্বত করেছেন। আদরের সাথে মানুষকে দ্বীনের পথে ডেকেছেন। এ দুনিয়ার জিন্দেগী ক্ষণস্থায়ী। আর আখেরাতের জিন্দেগী দীর্ঘস্থায়ী। তাই আমাদেরকে মেহনত করতে হবে দীর্ঘস্থায়ী জিন্দেগী নিয়ে। নিজেদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর দরবারের সবসময় প্রার্থনা করতে হবে।
কুমিল্লার ইতিহাসের সর্ববৃহৎ জুমার জামাতে অংশ নিতে সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আলেখাচরের কাছাকাছি আমতলী এলাকায় গোমতী নদীর তীরে অনুষ্ঠিত ইজতেমাস্থলের দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসতে থাকেন মুসল্লিরা। কুমিল্লা সদর আসনের এমপি হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহার, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ধর্মপ্রাণ লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে বিশাল ইজতেমাস্থল ছাড়িয়ে গোমতী বাঁধের উপর এসে ঠেকে মুসল্লিদের নামাজের কাতার। গাড়ি, মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ যে যেভাবে পেরেছেন ছুটে এসেছেন ইজতেমাস্থলে। লাখ লাখ মুসল্লির এমন অভূতপূর্ব মিলনমেলা ইতিপূর্বে আর কুমিল্লায় ঘটেনি।
খলিলুর রহমান সিলেট থেকে জানান, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোল্লারগাঁও ইউনিয়নের সিলেট-সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়ক সংলগ্ন লতিপুর-খিদিরপুর ইজতেমা ময়দানে লাখ লাখ মুসল্লি গতকাল শুক্রবার জুমআর নামাজ আদায় করেছেন। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের ঢলে গোটা এলাকায় পরিণত হয়েছিল জনতার মহাসমুদ্রে। এদিকে, গতকাল ইজতেমা ময়দানে ৭ নর-নারীর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শনিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমা।
গত বৃহস্পতিবার থেকে সিলেটে শুরু হয় ইজতেমা। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে জড়ো হয়। একপর্যায়ে ইজতেমা ময়দান ছাড়িয়ে যায় জনস্রোত। ময়দানে ওয়াজ-নসিহতের পর একসাথে জুমআর নামাজ আদায় করেন অন্তত ১০ লাখ মুসলিম জনতা। এসময় মুসল্লিদের ‘আল্লাহু আকবার’ ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত ছিল গোটা এলাকা। লাখো জনতা ক্রন্দনে নত মস্তকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে অতীত জীবনের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মুসল্লিদের উপস্থিতিতে গোটা এলাকায় জনতার মহাসমুদ্রের রূপ ধারণ করে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার জুমআর নামাজ শেষে ইজতেমা ময়দানে একসাথে ৭ জনের জানাজা পড়া হয়েছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে সিলেটের ১নং মোল্লারগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মাহমুদ আলী ইজতেমা ময়দানেই মারা যান। এছাড়া ইজতেমা ময়দানের আশপাশ এলাকায় শুক্রবার আরো ছয়জনের মৃত্যু হয়। এ ৭ জনের লাশ ইজতেমা ময়দানে নিয়ে আসা হয়। পরে জুমআর নামাজ শেষে একসাথে তাদের জানাজা পড়া হয়।
এদিকে, আজ শনিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ইজতেমার সিলেটপর্ব। আখেরি মোনাজাতে অন্তত ১৫ লাখ মুসলিম জনতা অংশগ্রহণ করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে গোটা এলাকায় নেওয়া হয়েছে কঠোরতর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট, ওয়াচ টাওয়ার, সাদা পোশাকের টিমসহ নানা ব্যবস্থা।
হাটহাজারীতে আজ আখেরি মোনাজাত
হাটহাজারী, উপজেলা সংবাদদাতা : হাটহাজারীতে চট্টগ্রাম জেলার আঞ্চলিক ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে নামাজ আদায় করতে লাখো মুসল্লির ঢল নেমেছে। গতকাল শুক্রবার ফজরের নামাজের পর থেকে দলে দলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে অবস্থান নিতে শুরু করে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বেলা ১০টা থেকে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট মহাসড়কের দক্ষিণে হাটহাজারী বাসস্টেশন এবং উত্তরে চারিয়া মুসার দোকান এলাকায় সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। জুমার নামাজ শুরুর আগ পর্যন্ত নামাজে অংশ নিতে ইজতেমাস্থলে মুসল্লিদের ঢল নামে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ইজতেমা ময়দান লোকে লোকারন্য হয়ে যায় । নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে যেতে ৪/৫ কিঃ মিঃ পথ পায়ে হেঁটে যেতে হয়েছে।
গতকাল জুমাবার ইজতেমায় জুমার নামাজের ইমামতি করেন ঢাকাস্থ কাকরাইল মসজিদের খতিব ও মুরব্বি মাওলানা হাফেজ জোবায়ের। নামাজে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নদভী, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সামশুল আরেফিন, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম সালাম , বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আলম চৌধুরী, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মৌলানা নাচির উদ্দীন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুল ইসলাম সরদার, হাটহাজারী থানার ওসি বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু, ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল, মির্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছারসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • ফোরকান ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৩৮ পিএম says : 0
    আল হামদু লিল্লাহ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুমিল্লা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ