মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দি গার্ডিয়ান : প্রতিটি প্রশাসনই তাদের মতাদর্শের প্রতিফলন ঘটাতে আমেরিকার নীতি পুনর্বিন্যাসের চেষ্টা করে। কিন্তু বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ওবামা ও হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার অমিল বিশেষভাবে গভীর। স্বাস্থ্য বীমা প্রবেশাধিকার থেকে গর্ভপাতের অধিকার বিষয়ে গত আট বছর ধরে দেশে যে প্রগতিশীল অবস্থান চালু রয়েছে ট্রাম্প ও তার মন্ত্রী পরিষদের সদস্য মনোনীতরা তার উল্টো পথের লোক।
রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত হাউস ও সিনেট নিয়ে নতুন প্রধান নির্বাহী ওবামার কর্মসূচির দিক পরিবর্র্তনের দিকে অগ্রসর হতে পারেন। আমেরিকাকে আজ যা দেখা যাচ্ছে আগামী বছর এ সময়ে তার চেয়ে অনেক বেশি পরিবর্তিত দেখা যেতে পারে। যে সব বিষয় নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে রয়েছেঃ
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট
এখন থেকে এক বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট দেখতে হবে সম্ভবত এ রকম... ২০০৬ সালে স্যান্ড্রা ডে ও’ কোনোরকে সরিয়ে তখন থেকে দায়িত্ব পালনরত স্যামুয়েল অ্যালিটো। অ্যান্টোনিন স্ক্যালিয়ার শূন্য আসন পূরণ করা হবে স্ক্যালিয়ার সাথে অত্যন্ত তুলনা উপযোগী এক বিচারক দ্বারা এবং সবচেয়ে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে অ্যান্থনি কেনেডি হবেন সুইং ভোট। এর অর্থ হচ্ছে এমন একটি আদালত যা সাধারণত রক্ষণশীল কিন্তু কয়েকটি প্রধান বিষয়ে উদার।
এটি হচ্ছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য সুযোগ হারানোর ঘটনা যারা নিক্সন প্রশাসনের গোড়ার দিকের সময় থেকে প্রথমবারের মত ডেমোক্র্যাটিক সংখ্যাগরিষ্ঠ কোর্ট লাভের সুযোগ হারিয়েছে। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প অবিলম্বে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য কোর্টের রূপান্তর ঘটাতে সক্ষম হবেন না।
তিন জন বিচারক যারা ৮০ বছর বয়সের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন অথবা তাদের ৮০ তম জন্মদিন ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছেন, দ্বিতীয় ট্রাম্প নিয়োগ লাভের সম্ভাবনা এখন অত্যন্ত বাস্তব। এবং যেহেতু কোর্টের পুরনো বিচারকদের মধ্যে রয়েছেন লিবারেল রুথ ব্যাডার জিনসবার্গ ও স্টিফেন ব্রেয়ার এবং মধ্যপন্থী রক্ষণশীল কেনেডি, একটি দ্বিতীয় ট্রাম্প মনোনয়নের অর্থ হবে ডানপন্থীদের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা যার শুরু হবে রো ভার্সাস ওয়েড ধ্বংস দিয়ে। ট্রাম্পকে নির্বাচনের অর্থ সুপ্রিম কোর্টের পদ্ধতি ধারণ করা অথবা এটার অর্থ হতে পারে একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যারা নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে পিছনের দিকে টেনে নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
স্বাস্থ্য সেবা প্রবেশাধিকার
যখন সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা মিচ ম্যাককনেল ঘোষণা করেন যে তার দল প্রথম দিনেই অ্যাফর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (এসিএ) বাতিলের কাজ শুরু করবে, যার পরিণতিতে শিগগিরই স্বাস্থ্যসেবা প্রবেশের স্থিতাবস্থা থেকে প্রস্থান দেখা যাবে যা ২০১৮ সালে মধ্যমেয়াদি নির্বাচনে নির্বাচনী শাস্তি বিষয়ে রিপাবলিকান উদ্বেগ সম্পর্কে জোড়া খসানো ব্যাপার হতে পারে।
যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রাক বিদ্যমান শর্ত সংশ্লিষ্টদের ক্ষতিপূরণের বিরুদ্ধে সুরক্ষার ব্যাপারে কিছু আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, অনেক কম জনপ্রিয় বীমা ম্যান্ডেট ছাড়া তা সহজে সম্ভব হবে না যা ঝুঁকি পুলকে বিস্তৃত করেছে। দি আরবান ইনস্টিটিউট সম্প্রতি দেখিয়েছে যে রিপাবলিকানদের এসিএ-র বাতিল ও বিলম্বিত করার ঘটনায় বাজার বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়াসহ ২ কোটি ৯৮ লাখ আমেরিকান তাদের স্বাস্থ্যবীমা হারাবে (সামঞ্জস্যহীনভাবে তারা যাদের কলেজ শিক্ষা নেই) যা এসিএ- পাসের আগে যে অবস্থা ছিল তার চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
স্বাস্থ্য ও মানব সেবা মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত টম প্রাইস ও হাউস স্পিকার পল রায়ান এসিএ বাতিলে তাদের ইচ্ছের কথা গোপন করেননি। নির্বাচনী ফলাফল তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সম্ভবত বাধা সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি স্বাস্থ্য ফলাফল যদি নাও করে।
অন্যথায় এসিএ মার্কেট বিলুপ্তি ও প্রাক-সুবিধা শর্তযুক্তদের জন্য প্রিমিয়াম বৃদ্ধির পুনরুদ্ধারকৃত সক্ষমতার প্রেক্ষিতে এমন হতে পারে যে লাখ লাখ লোক এ সুবিধা নেয়ার জন্য লড়াই করতে পারে।
গর্ভপাতের অধিকার
প্রজনন অধিকারের জন্য আগামী বছর যে কতটা বিপজ্জনক সময় হবে তা নিয়ে অতিরঞ্জন নেই। ইতোমধ্যে জাতীয় এন্টি-চয়েস সংগঠনগুলো রো ভার্সাস ওয়েড বাতিলের জন্য লড়াইকে জোরদার করছে যা বাস্তব সম্ভাবনা এবং অঙ্গরাজ্যগুলোর আইন প্রণেতারা গর্ভপাতকে অসম্ভব করে তোলার লক্ষ্যে অত্যন্ত কুখ্যাত নীতি পাস করতে শুরু করেছেন।
এখন থেকে এক বছর পর আমরা হয়ত এদেশে আইনগতভাবে গর্ভপাতের অবসান ও ইতোমধ্যেই উচ্চ সংখ্যায় অবৈধ গর্ভপাতের সংখ্যা আরো বৃদ্ধির শুরু দেখতে পারব। এ হবে এক জনস্বাস্থ্য সংকট। এ কথা স্মরণ করা গুরুত্বপূর্ণ যে গর্ভপাতের অধিকার বাতিল করা হলে যাদের উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে তারা হচ্ছে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণরা যাদের মধ্যে রয়েছে অশে^তাঙ্গ নারী, অভিবাসী মহিলা, তরুণী ও দরিদ্র নারী। এন্টি-চয়েস পলিসির কারণে এই নারীরা ইতোমধ্যেই দুর্ভোগের শিকার এবং এখন থেকে এক বছর পর নিঃসন্দেহে আরো মারাত্মক বিপদের মধ্যে পড়বে। এ কারণেই যারা প্রজনন অধিকারের ব্যাপারে সচেতন, খারাপ কিছু ঘটার আগেই তাদের জন্য ছোট, স্থানীয় সংঠনগুলোকে সমর্থন করা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
সরকারী শিক্ষা
আগামী বছর এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী শিক্ষার চেহারা ভিন্ন রকম হতে পারে। আগামী শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে বেটসি ডেভোসের নাম সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হওয়া প্রায় চূড়ান্ত। তার ফলে সরকারী শিক্ষার মৌলিক ভিত্তি ভেঙ্গে পড়ার শুরু হতে পারে।
২০১৫-র এভরি স্টুডেন্ট সাকসিডস অ্যাক্ট শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষমতা কর্তন করে। কিন্ত ডেভোস ভাউচার স্কিমের মাধ্যমে টাকা যোগাড়ের জন্য টাইটেল আই-তে টোকা দিতে পারেন, আগ্রাসীভাবে যাজকদের সুবিধা ব্যবহার করতে পারেন এবং বিপর্যয়কর আইন প্রণয়ন করতে পারেন যা রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেস পাস করতে পারে।
এটা ভীতিকর, তবে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও পিতামাতাদের নেতৃত্বাধীন ক্রমবর্ধমান ও অধিক সংগঠিত প্রতিরোধ আন্দোলনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বোস্টন, পোর্টল্যান্ড, মেরিল্যান্ড, নিউইয়র্ক সিটি, বে এরিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছাত্ররা ট্রাম্পের নির্বাচনের প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেছে। বিশেষ করে বোস্টনের ছাত্ররা ডেভোসের মনোনয়নের ও তার বেসরকারীকরণ কর্মসূচির নিন্দা জানায়।
আমি আশা করি যে পিতামাতাদের নেতৃত্বাধীন মানসম্মত পরীক্ষার আন্দোলনকারীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। অল্প কিছু অঙ্গরাজ্য পারফরমেন্স ভিত্তিক মূল্যায়নের অনুকূলে এ সব পরীক্ষা বর্জন করতে পারে এবং অধিকতর উদ্ভাবন মূলক, শিশু -কেন্দ্রিক স্কুল ও কর্মসূচি চালু করতে পারে যা তরুণদের জন্য আমূল পৃথক, পরীক্ষামূলক ও শেখার অভিজ্ঞতা লাভে নিয়োজিত করবে।
২০১৭ সালে আমাদের মিশন হচ্ছে জনগণকে প্রদর্শন করা যে হ্যাঁ, যখন আমাদের নিপীড়ক, আগ্রহ নির্মূলকারী সরকারী শিক্ষার ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন, তাকে অবশ্যই শতকোটিপতি শ্রেণির বাতিক থেকে রক্ষা করতে হবে।
জ¦ালানি নীতি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জ¦ালানি পরিকল্পনা বলিষ্ঠ। তার ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ তেল ও কয়লা উৎপাদনকে জোরদার করা অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক গ্যাস সেক্টরকে সমর্থন প্রদান। ভাবি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রচারণায় খনি শ্রমিকের হেলমেট পরিধান করেন সমর্থকদের এ কথা বলতে যে কয়লা শিল্পে কয়েক দশকের অবনতিকর পরিস্থিতি পাল্টে যাবে, আবার সবাই চাকরি ফিরে পাবেন।
ট্রাম্পের নির্দেশিত সমাধান হচ্ছে পরিবেশগত আইন বাতিল, ড্রিলিংয়ের জন্য সরকারী জমি উন্মুক্ত করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিষ্কার জ¦ালানি কর্মসূচির জন্য তহবিল কর্তন। তার মনোনীত পরিবেশগত সুরক্ষা সংস্থা প্রশাসক স্কট প্রুইট এবং যিনি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে সেই ক্যাথি ম্যাকমরিস রজার্স উভয়েই জীবাশ্ম জ¦ালানি শিল্পের বলিষ্ঠ সমর্থক ও এর সুবিধার জন্য কাজ করবেন। টেক্সাসের সাবেক গভর্নর রিক পেরি জ¦ালানি দফতরের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য মনোনীত হয়েছেন যে সংস্থাটি তিনি আগেই বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন। তেল ও গ্যাস ড্রিলিংয়ের এক প্রবক্তা পেরির সাথে বৃহৎ জীবাশ্ম জ¦ালানি প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।
তবে এ কর্মসূচি যে বাজার শক্তি কয়লা শিল্পকে দমিয়ে রেখেছে বা বিশ^বাজারে তেলের কম মূল্যের জন্য যারা দায়ী তাদের পরিবর্তন ঘটাতে খুব কমই কিছু করতে পারবে। রিপাবলিকানরা এ আইনটি ছাঁটাই করতে আগ্রহী , কিন্ত তার ফল হবে পরিবেশ গ্রুপগুলোর সাথে আদালতে লড়াই এবং নতুন চাকুরি সৃষ্টির বদলে বাতাস ও পানি দূষণ বিষয়ে জনগণের ক্রমশ উদ্বেগ বৃদ্ধি।
ট্রাম্প হয়ত কেন্দ্রীয় ক্লিন এনার্জি তহবিলকে সমর্থন যোগাবেন যদিও গত বছর বায়ু ও সৌর জ¦ালানির ক্ষেত্রে কর মওকুফের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কংগ্রেস এর পরিবর্তন করতে চাইবে বলে মনে হয় না। ভাবি প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তিনি বিতর্কিত কিস্টোন ও ডাকোটা অ্যাকসেস তেল পাইপ লাইন অনুমোদন করতে চান যা তুলনামূলকভাবে দ্রুত নির্মিত হতে পারে এবং আটলান্টিক ও আর্কটিক অফশোর ড্রিলিং কর্মসূচিতে ফিরে আসতে পারে।
বিপুল পরিমাণ কেন্দ্রীয় ভর্তুকি ছাড়া কয়লার খনিগুলো বন্ধ হতেই থাকবে এমনকি ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান যদি বন্ধও করা হয়। ট্রাম্পের অধীনে নবায়নযোগ্য জ¦ালানির উন্নয়ন ঘটতে পারে তার গতি শ্লথ হলেও এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতি প্রতিরোধে যথেষ্ট দ্রুত সাহায্য না করলেও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।