মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের ডান হাত ও দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির সিনিয়র সেতা মনীষ শিশোদিয়াকে রোববার গভীর রাতে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই। সোমবার তাকে দিল্লির রোউজ অ্যাভিনিউ আদালতে হাজির করা হলে পাঁচ দিনের সিবিআই হেফাজতও মঞ্জুর করা হয়েছে।
দেশের একটি জাতীয় পর্যায়ের বিরোধী দলের প্রথম সারির এ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ভারতের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কঠোর আক্রমণ করে বিবৃতি দিয়েছে; কিন্তু দিল্লি ও পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টির যারা মূল প্রতিপক্ষ, সেই কংগ্রেস কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সিবিআই আজ আদালতে দাবি করেছে, দিল্লি সরকারের মদ কেনাবেচা সংক্রান্ত এক্সাইজ পলিসি বা শুল্ক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিরাট দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগেই শিশোদিয়াকে তারা গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে, কারণ তিনি জেরায় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছিলেন।
অন্য দিকে রোববার বেশি রাতে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী গ্রেপ্তার হওয়ার পরই অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইট করেন, ‘মনীষ নির্দোষ। তার গ্রেপ্তারি একটা নোংরা রাজনীতি। এ গ্রেপ্তারিতে মানুষ ক্ষুব্ধ, তারা সবই দেখছেন। মানুষ সবই বুঝছে, তারা এর জবাব দেবেন।’ ভারতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরাও অনেকেই বলছেন, ইদানীং সিবিআই বা এসফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেটের (ইডি) মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে বিরোধী রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে ব্যবহার করে তাদের ভয় দেখানোর যে রাস্তা সরকার বেছে নিয়েছে, মনীষ শিশোদিয়া তথা আম আদমি পার্টি তার সবশেষ ভিক্টিম।
তবে গত এক বছরে বিভিন্ন আলাদা আলাদা দলের নেতানেত্রীরা সিবিআই বা ইডির হানার মুখে পড়লেও ভারতের বিরোধী দলগুলো এ প্রশ্নে একযোগে সরকারকে নিশানা করতে পারেনি। অনেক দলই নিজেদের নেতাদের সমর্থনে মুখ খুললেও অন্য দলের ক্ষেত্রে একই পরিস্থিতিতে নীরব থেকেছে। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এই বিরোধী অনৈক্যর পুরোপুরি ফায়দা তুলেই একে একে শিবসেনার সঞ্জয় রাউত, তৃণমূলের সাকেত গোখলে, কংগ্রেসের পবন খেড়া বা এখন আম আদমি পার্টির মনীষ শিশোদিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এদিকে মনীষ শিশোদিয়ার গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা-কর্মীরা সোমবার দিল্লি, ব্যাঙ্গালোর, চন্ডীগড়, ভোপালসহ দেশের বিভিন্ন শহরে তীব্র বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। দিল্লিতে বিজেপির সদর দপ্তরের সামনে প্রতিবাদরত আপ সমর্থকদের পুলিশ আটক করতে গেলে পরিস্থিতি রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে। তবে দিল্লিতে বিজেপি ছাড়া যে দলটির সঙ্গে আম আদমি পার্টির সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেই কংগ্রেস কিন্তু মনীষ শিশোদিয়ার গ্রেপ্তারি নিয়ে একটি কথাও বলেনি।
বরং দলটির দিল্লি শাখা এই গ্রেপ্তারিকে সমর্থন করেছে এবং বলেছে যে রাজধানীর ‘মদ কেলেঙ্কারি’তে এরপর খোদ মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেই গ্রেপ্তার করা উচিত। গত বছর ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ মামলায় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা-নেত্রী সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে যখন সিবিআই দিনের পর দিন তাদের দপ্তরে তলব করে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছিল, তখনও রাজপথে ছিল শুধু কংগ্রেস কর্মীরাই – আপ তার প্রতিবাদও করেনি।
মনীষ শিশোদিয়ার গ্রেপ্তারির পর সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব, ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সোরেন, তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতির কেটিআর, সাবেক শিবসেনার সঞ্জয় রাউত বা সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির মতো যারা নিন্দা জানিয়েছেন, তাদের কারও দলের সঙ্গেই কোনও রাজ্যে আম আদমি পার্টির সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই। অর্থাৎ দেশের কোনও বিরোধী নেতা গ্রেপ্তার হলেও অন্য বিরোধী দলগুলি তখনই কেবল মুখ খুলছে যখন তাদের সঙ্গে ওই আটক নেতার দলের কোনও রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাত নেই।
দিল্লিতে প্রবীণ রাজনৈতিক বিশ্লেষক স্মিতা গুপ্তার কথায়, ‘বিজেপি খুব ভাল করেই বুঝে গেছে বিরোধী দলগুলো এখানে কতটা ছত্রভঙ্গ। সিবিআই-ইডিকে আপের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হলে কংগ্রেসকে তারা পাশে পাবে না, আবার কংগ্রেস নেতাদের তারা নিশানা করলে আপ মোটেই মুখ খুলবে না। সব রাজ্যেই কমবেশি একই ধরনের ছবি।’ বিরোধী দলগুলোর মধ্যে এখানে বিন্দুমাত্র ঐক্য নেই বলেই সিবিআই বা ইডি-কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজে লাগানোর ব্যাপারে তারা এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন গুপ্তা।
স্ক্রল.ইন পোর্টালের রাজনৈতিক সম্পাদক শোয়েব ড্যানিয়েল আবার মনে করেন, শীর্ষ বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তারির মাধ্যমে ভারত কিন্তু তার প্রতিবেশী দেশগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে তুলনীয় করে তুলেছে।“ভারতে বিরোধী হওয়াটা এখন সহজ নয়” শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে তিনি লিখেছেন, নিকট প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের রাজনীতির এতদিন একটা বড় পার্থক্য ছিল বিরোধী রাজনীতিবিদরা এখানে একটা পর্যায়ের বেশি ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতেন না। ‘অথচ, বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া সেই ২০১৮ থেকে দুর্নীতির অভিযোগে হয় জেলে, নয় তো গৃহবন্দী রয়েছেন। বা পাকিস্তানের সবচেয়ে বেশি দিনের প্রধানমন্ত্রী ব্রিটেনে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন এটা জেনেই যে দেশে ফিরলে তাকে দুর্নীতির দায়ে জেলে ঢোকানো হবে, লিখেছেন ড্যানিয়েল।
কিন্তু ভারতের সঙ্গে তার প্রতিবেশীদের সেই ‘ব্যবধান’টা এখন ক্রমশ কমে আসছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। বস্তুত বিরোধী নেতাদের ভয় দেখানো বা গ্রেপ্তারি, জাতীয় স্তরের ইংরেজি ও হিন্দি চ্যানেলগুলোর ওপর সর্বাত্মক নিয়ন্ত্রণ এবং অন্য দল থেকে নেতাদের ভাঙিয়ে এনে (ডিফেকশন) সরকার গড়া – এই তিনটি হাতিয়ারকেই বিজেপি তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে বলে পর্যবেক্ষকরা অনেকে বলছেন। এমন কী বিজেপি এখন দেশের যে আটটি বড় রাজ্যে ক্ষমতায় আছে তার তিনটিতেই তারা সরকার গড়েছে এই ডিফেকশন বা অন্য দল ভাঙিয়ে আনার মাধ্যমে! সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।