মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের হরিয়ানাতে গত সপ্তাহে দুজন মুসলিম যুবককে গরু পাচারের অভিযোগে নৃশংসভাবে জ্বালিয়ে হত্যার পর মূল অভিযুক্তদের যাতে গ্রেফতার করা না হয়, সেই হুঁশিয়ারি দিয়ে কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠনগুলো একের পর এক সমাবেশের আয়োজন করছে।
মঙ্গলবার হরিয়ানার মানেসরে এই ধরনের একটি সমাবেশের পর গতকাল বুধবারও ওই রাজ্যের হাথিনে আরেকটি ‘হিন্দু মহাপঞ্চায়েতে’র আয়োজন করেছিল বজরং দল, ভিএইচপি ও হিন্দু সেনার মতো নানা সংগঠন।
দুটি সমাবেশ থেকেই মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে হিংসার ডাক দেয়া হয়েছে এবং পাশের রাজ্য রাজস্থানের পুলিশ যাতে মুসলিম যুবকদের হত্যায় মূল অভিযুক্ত মোনু মানেসর ও তার সহযোগীদের আটক করার স্পর্ধা না দেখায়, সে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
জুনাইদ ও নাসির নামে রাজস্থানের বাসিন্দা দুই যুবক বেআইনিভাবে গরু পাচার করছিল, এই অভিযোগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হরিয়ানার ভিওয়ানিতে তাদের গাড়ির ভেতর জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ।
এই হত্যায় রাজস্থান পুলিশ যে এফআইআর দায়ের করেছে, তাতে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত মোনু মানেসর বজরং দলের একজন নেতা এবং হরিয়ানা রাজ্যের গোরক্ষা টাস্ক ফোর্সেরও একজন সদস্য।
রাজস্থান পুলিশ তাদের এফআইআরে আরো জানিয়েছে, নিহতদের গাড়িতে কোনো গবাদি পশু বহন করা হচ্ছিল এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থল থেকে বিবিসি হিন্দির সংবাদদাতা অভিনব গোয়েল জানাচ্ছেন, পুরো বিষয়টি কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান আর বিজেপি-শাসিত হরিয়ানার পুলিশের মধ্যে সংঘাতের চেহারা নিয়েছে– এমনকি হরিয়ানা পুলিশ রাজস্থান পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর পর্যন্ত দায়ের করেছে।
তিনি আরো জানাচ্ছেন, “ওদিকে রাজস্থানের ঘাটমিকা গ্রামে নিহত জুনাইদ ও নাসিরের পরিবার বিচারের জন্য গুমরে মরছেন– তাদের লাশ এমন ভস্মীভূত অবস্থায় এসেছিল যে পরিবার তাদের শেষ দেখাটাও দেখতে পাননি, তাদের জানাজা পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়নি।”
কী ঘটেছিল জুনেইদ ও নাসিরের সাথে?
রাজস্থানের ভরতপুরের কাছে ঘাটমিকা গ্রামের বাসিন্দা জুনায়েদ তার বন্ধু নাসিরের সাথে একটি বোলেরো গাড়িতে চেপে হরিয়ানার পথে রওনা দিয়েছিল গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ৮টা নাগাদ।
নাসিরের ছোট ভাই হামিদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, জুনাইদের এক ভাতিজির জন্য পাত্র দেখতেই তারা এক বন্ধু গাড়ি ধার করে হরিয়ানাতে যাচ্ছিলেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি ভোররাতের দিকে রাজস্থানের পিরুকা গ্রামের কাছে আরো দুটি গাড়ি তাদের ঘিরে ধরে হামলা চালায় ও গাড়িতে ভাঙচুর করে। জুনাইদ ও নাসিরকে তখনই প্রচণ্ড মারধর করা হয়।
সেই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় একজন দোকানদার কাশিম বিবিসিকে জানান, লোকজনের আওয়াজ পেতেই ওই হামলাকারীরা সবাই বোলেরো গাড়িটি নিয়েই হরিয়ানার দিকে পালিয়ে যায়।
বিবিসির অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি বেলার দিকে জুনাইদ ও নাসিরকে নিয়ে ওই হামলাকারীরা, যারা নিজেদের গোরক্ষক বলে পরিচয় দিয়েছিল, তারা পিরুকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে হরিয়ানার ফিরোজপুর ঝিরকা থানায় নিয়ে যায়।
কিন্তু জুনাইদ ও নাসিরকে থানা তাদের হেফাজতে নেয়নি। ওই গোরক্ষক বাহিনী এরপর তাদের নিয়ে চলে যায়, ইতোমধ্যে রাজস্থান থেকে জুনাইদ ও নাসিরের পরিবারের সদস্যরা খবর পেয়ে ফিরোজপুর ঝিরকাতে এলেও তাদের দেখা পাননি।
আশেপাশের বহু হাসপাতালে দিনভর খোঁজখবর করেও তারা অপহৃত জুনাইদ ও নাসিরের কোনো সন্ধান পাননি।
এদিকে ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যবর্তী রাতে সাড়ে ১২টা নাগাদ ফিরোজপুর ঝিরকা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ভিওয়ানি জেলার বরওয়াস গ্রামে বোলেরো গাড়িটিসহ জুনাইদ ও নাসিরকে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয়া হয়।
তাদের দেহ একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল বলা চলে, পলিথিনে মোড়া কঙ্কালের কিছু হাড়গোড় স্পর্শ করেই তারা জুনাইদ ও নাসিরকে শনাক্ত করেছেন বলে পরিবারের সদস্যরা বিবিসিকে জানিয়েছেন।
কে এই অভিযুক্ত মোনু মানেসর?
এই হত্যাকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে রাজস্থান পুলিশের এফআইআরে যার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, সেই মোনু মানেসর নিজেকে বজরং দলের ‘গোরক্ষা প্রান্ত প্রমুখ’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
অর্থাৎ গরু পাচারের বিরুদ্ধে যে সব গোরক্ষা বাহিনী বা ভিজিল্যান্তে দল হরিয়ানায় সক্রিয়, তিনি একটি এলাকায় তার প্রধান।
সোশ্যাল মিডিয়াতে তিনি নিজেকে নির্দোষ বলেও দাবি করেছেন, বলেছেন এই হত্যার সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই।
বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে তিনি গত কয়েকদিনে মোবাইল ফোনে সাক্ষাৎকার পর্যন্ত দিয়েছেন, তবে পুলিশ এখনো তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
ইতোমধ্যে মোনু মানেসর ও তার সহযোগীদের প্রতি সমর্থন জানাতে হরিয়ানার নানা প্রান্তে একের পর এক হিন্দু মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করা হচ্ছে।
হাথিনে বুধবার এরকমই একটি সমাবেশ থেকে বজরং দলের নেত্রী ‘আস্থা মা’ হুমকি দিয়েছেন, “মুসলিম ছেলেরা যদি হিন্দু মেয়ে-বোনদের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস দেখায় তাহলে তাদের চোখ ফুঁড়ে দেয়া হবে।”
শত শত মানুষ এই সব সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন, অভিযুক্তদের সমর্থনে শ্লোগান দিচ্ছেন। রাজস্থান পুলিশ অবশ্য এখনো দাবি করছে, তারা এই মামলায় মোনু মানেসর, লোকেশ সিংলা-সহ আরো আটজনকে খুঁজছে। সূত্র : বিবিসি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।