মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গৌতম আদানির ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের পতন ঘটেছে। আর এর থেকেই ভারতের 'গণতান্ত্রিক পুনরুজ্জীবনে'র সূচনা হতে পারে। এমনই বিতর্কিত মন্তব্য করলেন মার্কিন বিলিয়নিয়ার বিনিয়োগকারী জর্জ সোরোস। তিনি দাবি করেন, আদানি গোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে ভারতীয় শেয়ার বাজারে ঝড় উঠেছে। বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে ভারতের প্রতি আস্থা টলিয়ে দিয়েছে এই ঘটনা।
মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের পর ধস নামে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারে। এর প্রভাবে আগামী দিনে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ভারতে টাকা ঢালার বিষয়ে ভরসা কমতে পারে বলে দাবি করছেন অনেকে। একইসাথে ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রকদের বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এমনকি গৌতম আদানির সাথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক নিয়েও সরব হয়েছেন দেশটির বিরোধীরা।
আর এরই মধ্যে এই বিষয়ে বিতর্ক আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে দিলেন মার্কিন ধনকুবের। মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের আগে এক বক্তৃতায় জর্জ সোরোস বলেন, 'মোদি এই বিষয়ে নীরব রয়েছেন। কিন্তু তাকে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এবং পার্লামেন্টে তোলা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এই ঘটনার ফলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উপর মোদির প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারেরও সূচনা হবে। আমি ভুলও হতে পারি, কিন্তু আমি আশা করব, এর থেকে ভারতের গণতন্ত্রে একটি নবজাগরণের শুরু হবে।'
বিশ্বের অন্যতম বিনিয়োগকারী জর্জ সোরোসের মোট সম্পদ প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর পাশাপাশি সামাজিক কাজ হিসাবে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার প্রচার করেন। 'ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনে'র প্রতিষ্ঠাতা তিনি। এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা এবং বাকস্বাধীনতার প্রচার করেন। শুধু তাই নয়, এই জাতীয় বিষয় নিয়ে কাজ করে, এমন গোষ্ঠী এবং ব্যক্তিদের আর্থিক অনুদান দেয় তার এই সংস্থা।
গত ২৪ জানুয়ারি মার্কিন শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শেয়ার কারচুপি, বিপুল অঙ্কের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের অভিযোগ তোলা হয়। অভিযোগে বলা হয়
* আদানি গোষ্ঠী বেনামে বিদেশে ‘শেল’ কোম্পানি খুলেছে। আর তার মাধ্যমে ভারতে নিজেদের কোম্পানিরই শেয়ার বেনামে কিনেছে। এদিকে কোনো শেয়ার যত বেশি কেনা হয়, তত তার দাম বাড়ে। এভাবে কৃত্রিমভাবে শেয়ারের চাহিদা ও দাম বৃদ্ধির অভিযোগ তোলা হয়েছে।
* এই অতিমূল্যায়নের শেয়ারে আরো বিনিয়োগ করেছে এলআইসি, এসবিআই-এর মতো সংস্থা। ফলে আরও দ্রুত হারে সেই শেয়ারগুলির দাম বেড়েছে।
* এবার সেই বিপুল দামের শেয়ার বন্ধক রেখে সরকারি ব্যাঙ্কের সমষ্টি থেকে প্রচুর ঋণ তুলেছে আদানি গোষ্ঠী।
এরপর থেকে ক্রমেই নিম্নমুখী হয়েছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার দর। আদানি গোষ্ঠী বারবার এই রিপোর্ট 'ভিত্তিহীন' বলে জানিয়েছে। তবে তাতে লাভ হয়নি। দ্রুত হারে নিম্নমুখী হয়েছে সংস্থার স্টক ও বন্ডের দাম। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে আদানি এন্টারপ্রাইজের এফপিও-ও ভণ্ডুল হয়ে যায়। গত মাসের শেষে এফপিওর মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কোটি রুপি তোলার কথা ছিল আদানি গোষ্ঠীর। বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের দৌলতে, সেই এফপিও সম্পূর্ণ সাবস্ক্রাইবডও হয়ে যায়। তবে টালমাটাল বাজার পরিস্থিতিতে এফপিও বাতিল করে দেয় আদানি এন্টারপ্রাইজের বোর্ড। সমস্ত বিনিয়োগকারীর টাকা ফিরিয়ে দেয়া হবে বলে জানায় সংস্থা।
হিসাব অনুযায়ী, এই রিপোর্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত শেয়ার বাজার থেকে প্রায় ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মূলধন খুইয়েছে আদানি গোষ্ঠী।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।