পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকার যানজট সমস্যা একটি বহুচর্চিত ও বহুল আলোচিত বিষয়। গত দুই দশকে ঢাকার যানজট নিরসনে বহু সরকারী প্রতিশ্রুতি শোনা গেছে, অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়িতও হয়েছে। তবে যানজটের চিরচেনা চিত্র লক্ষণীয়ভাবে বদলে গেছে, এমন দাবি কেউ করতে পারবে না। এ কারণেই ঢাকার যানজট সমস্যা নিয়ে গবেষণাও চলছে নিরন্তর। এসব গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ঢাকার যানবাহনের গতিশীলতা ক্রমেই নাজুক হচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ আয়োজিত ‘নগর পরিস্থিতি ২০১৬ : ঢাকা মহানগরে যানজট, শাসনব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রকাশিত গবেষণা রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ২০০৪ সালে যেখানে ঢাকার গণপরিবহনের ঘণ্টায় গড় গতি ছিল ২১.২ কিলোমিটার সেখানে ২০১৫ সালে এসে তা ৬.৮ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। যানজট ও ধীরগতির কারণে সাধারণ কর্মজীবী মানুষের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। যানজট ও যানবাহনের ধীরগতির কারণে বছরে ক্ষতি ১১.৪ বিলিয়ন ডলার বা লক্ষ কোটি টাকা। শুধুমাত্র ধীরগতির কারণেই বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকা। গবেষণা রিপোর্ট অনুসারে, যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন ৮.১৬ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা সময় নষ্ট হচ্ছে। শুধুমাত্র উৎপাদনশীলতা বা আর্থিক মানদন্ডে এই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ সম্ভব নয়। দেশ ও নগরবাসীর উপর ঢাকার যানজটের অর্থনৈতিক, সামাজিক-মনস্তাত্বিক ক্ষয়ক্ষতি আরো ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারি।
যানজটে কর্মঘণ্টা অপচয়, জ্বালানি অপচয়, পরিবেশগত দূষণ, শব্দদূষণ, বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও পরিবহনে স্থবিরতার ক্ষতির পাশাপাশি স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, ইমার্জেন্সি রোগী পরিবহনে বিড়ম্বনা ইত্যাদি বিষয়গুলো যে কোন বাসযোগ্য নগরীর অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। অর্থনীতির নানা সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে আমরা যখন দাবি করছি, তখন আমাদের রাজধানী শহরটি বিশ্বের অন্যতম দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য নগরীর তালিকায় স্থান পাচ্ছে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ ও শিক্ষার মান ক্রমে অধ:গামী হচ্ছে। শহর ও জনপদ অনিরাপদ ও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে, নদীগুলো বিশ্বের অন্যতম দূষিত নদীর তালিকায় স্থান পাচ্ছে। একইভাবে আমাদের সামাজিক অনিরাপত্তা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা ও অনিশ্চয়তা জাতির অনেক সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে। এভাবে নিশ্চয়ই একটি জাতির সামনে এগিয়ে চলা হয় না। উন্নয়নশীল বিশ্বের অনেক দেশ যখন সুপারসনিক গতির গণপরিবহন সংযুক্ত করছে, তখন আমাদের রাজধানী শহরে গণপরিবহনের গতিঘণ্টায় গড়ে ৬ কিলোমিটার বা গরুর গাড়ির গতির সমান। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গবর্নেন্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইডিজি)’র এই রিপোর্টে শুধুমাত্র ঢাকার যানজট সংক্রান্ত বিষয়গুলোর তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হলেও উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে শাসনব্যবস্থার সামগ্রিক অবস্থা এবং করণীয় সম্পর্কে আরো বেশী গবেষণা ও মূল্যায়ণ হওয়া জরুরী।
দেশের অবকাঠামো দুর্বলতা, শাসনব্যবস্থায় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ণের কারণে অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। প্রতিবছর দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ অবৈধ পথে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে বিনিয়োগে অনাস্থা, অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার পেছনের কারণগুলোর সাথে সুশাসন ও জননিরাপত্তায় আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর ব্যর্থতার পাশাপাশি বন্দর, সড়ক মহাসড়ক ও নগরীতে যানজট পরিস্থিতি অন্যতম অনুঘটক। গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও ফুটপাতের দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখার পেছনে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের দুর্নীতিবাজরা সর্বদাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। এসব খাতে বছরে চাঁদাবাজি ১৮২৫ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়ে থাকে বলে বিআইজিডি’র রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ঢাকার নাগরিক সমস্যা নিরসনে নগর সরকারের প্রয়োজনীয়তার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলা হলেও সে বিষয়ে কোন উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে কখনো দেখা যায়নি। ঢাকা শহরের যানজটসহ বহুবিধ এবং নাগরিক সমস্যা হয়তো রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে নগরীর ৩০টি সেবা সংস্থার কাজে সমন্বয় করা সম্ভব হলে অর্ধেক কমে আসতে পারে। ইতোমধ্যে নগরীর দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদ্বয় সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়। সেই সাথে নগরীর শিল্প-কারখানা ও প্রশাসনিক কর্মকা-ের বিকেন্দ্রীকরণের বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে। যানজটমুক্ত, নিরাপদ, গতিশীল ও পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তুলতে হলে আধুনিক ও দীর্ঘমেয়াদী নগর পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বোপরি দখলবাজি, চাঁদাবাজিমুক্ত স্বচ্ছ- গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জনদুর্ভোগ দূর করে একটি প্রগতিশীল সমাজ বিনির্মাণে সুশাসন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ অন্যতম পূর্বশর্ত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।