মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক কর্মজীবনকে প্রভাবিত করে, এমন ঘটনাগুলির যদি তালিকা করা হয়, তাহলে শীর্ষে থাকবে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা। এবং ভারতে তৃতীয় মেয়াদে উত্তীর্ণ হতে নির্বাচনে যাওয়ার এক বছর আগে তার সরকারের দমন প্রচেষ্টা অনেকের নজর কেড়েছে।
বিবিসির দুই-পর্বের তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’-এর বিবিসি, ইউটিউব ও টুইটার সহ অনলাইনে প্রচার বা উলব্ধতা বন্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। তথ্যচিত্রটি যুক্তরাজ্যে প্রকাশের কয়েক সপ্তাহ পরেই ‘জরুরি অবরোধ আইন’-এর অধীনে ভারতে এর প্রদর্শনী অবরুদ্ধ করেছে তারা এবং মঙ্গলবার বিবিসির ভারতের কার্যালয়গুলিতে তল্লাশি চালিয়েছেমোদী সরকারের তথাকথিত একটি তদন্তের অংশ হিসাবে। বিবিসির নয়া দিল্লি এবং মুম্বাই কার্যালয়গুলিতে হামলা চালায় আয়কর কর্তৃপক্ষ। ভারতের এডিটরস গিল্ড বলেছে, ‘এই তল্লাশির ঘটনায় তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। এসব সরকারি নীতি বা সংস্থাগুলোর সমালোচনাকারী সংবাদ মাধ্যমগুলোকে ভয় দেখানো এবং হয়রানি করতে সরকারি সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করার অব্যাহত প্রবণতার অংশ।’
গুজরাটে ২০০২ সালে মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গায় রাজ্যটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভ‚মিকা ঘিরে ওই তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়েছিল। তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বিবিসির ওই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছিল যে, মোদী কীভাবে রাজনীতিতে এসেছিলেন এবং ভারতীয় জনতা পার্টিতে কীভাবে ক্রমান্বয়ে শীর্ষ সারিতে উঠে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের রাজ্য গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বিবিসির সংগ্রহ করা একটি অপ্রকাশিত প্রতিবেদন সেখানে তুলে ধরা হয়েছিল, যেখানে ধর্মীয় দাঙ্গা চলার সময় মোদীর কর্মকাÐ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি রেলে আগুন লাগানোর পর অনেক মানুষ হতাহত হওয়াকে কেন্দ্র করে ওই দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। এরপরের কয়েকদিনের সহিংসতায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগ ছিলেন মুসলিম। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মোদী সেই সময় দায়িত্বহীন পরিবেশ তৈরি করার জন্য ‘সরাসরি দায়ী’ ছিলেন, যা সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্রর নির্দেশে করা একটি তদন্তের অংশ হিসাবে ওই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে বলা হয়, ‘সহিংসতা মাত্রা প্রকাশিত খবরের চেয়ে অনেক বেশি ছিল’ এবং ‘দাঙ্গার লক্ষ্য ছিল হিন্দু প্রধান এলাকাগুলো থেকে মুসলমানদের নির্ম‚ল করা’।
অবশ্য, নরেন্দ্র মোদী দীর্ঘদিন ধরেই তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন এবং দাঙ্গার জন্য কখনো ক্ষমা চাননি। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেলও বলেছে যে, তার বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওই তথ্যচিত্রটি দেখার জন্য জড়ো হওয়া একদল শিক্ষার্থীকে আটক করেছিল দিল্লির পুলিশ। মোদী সরকারের বক্তব্য হল, তথ্যচিত্রটি ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতায়’ তৈরি ‘ভারত-বিরোধী প্রচারণা ও আবর্জনা’। তথ্যচিত্রটির প্রথম পর্ব ২৪ জানুয়ারী প্রকাশিত হওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমআইটি) এর নিন্দা করে এবং দেশটির তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় (এমআইবি) জরুরী নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইউটিউব এবং টুইটারে এর প্রদর্শনী অবরুদ্ধ করে। এমআইবি’র উপদেষ্টা কাঞ্চন গুপ্তা টুইট করেন যে, প্রতিবেদনটি ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং অখÐতাকে ক্ষুণœ করেছে, জনশৃঙ্খলাকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং বিদেশী রাষ্ট্রগুলির সাথে ভারতের বন্ধুত্বপ‚র্ণ সম্পর্ককে সম্ভাব্যভাবে প্রভাবিত করেছে।
গত মাসে বিবিসি বলেছিল যে, ভারতের সরকারের কাছে তথ্যচিত্রে তাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য বলা হয়েছিল, কিন্তু তারা রাজি হয়নি। সংবাদ সংস্থাটি এও জানায়, ‘সেখানে প্রতিবেদন তৈরিতে নিরলস গবেষণা করা হয়েছে এবং অনেকের বক্তব্য নেয়া হয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শী এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং বিজেপির লোকজনের প্রতিক্রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মতামত তুলে ধরা হয়েছে।’ মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টির একজন মুখপাত্র গৌরভ ভাটিয়া বিবিসিকে ‹বিশ্বের সবচেয়ে দ‚র্নীতিগ্রস্ত সংস্থা’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ভারত এমন একটি দেশ যা সব সংস্থাকেই সুযোগ দেয় যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা বিষ ছড়ায়।’ তথ্যচিত্রটি নিয়ে ভারত এবং যুক্তরাজ্য উভয় সংসদে বিতর্ক হয়েছে এবং এটি অন্তত তিনটি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আটকের কারণ হয়েছে। গত মাসে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে দেশটির ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছে তথ্যচিত্রটির বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও আমরা নির্যাতনকে সমর্থন করি না।’ তবে তিনি আরও যোগ করেছিলেন যে, যেভাবে মোদীর চরিত্রায়ন করা হয়েছে, তার সঙ্গে তিনি একমত নন। এদিকে, বিবিসির কার্যালয়গুলিতে তল্লাশির প্রসঙ্গে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেসি ভেনুগোপাল বলেছেন, ‘মঙ্গলবারের এই তল্লাশি হতাশা তৈরি করছে এবং মোদী সরকার যে সমালোচনাকে ভয় পায়, সেটাই দেখিয়ে দিচ্ছে।’ তিনি টুইটারে বলেছেন, ‘আমরা এই ভয় দেখানোর কৌশলকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাই। এই অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী মনোভাব আর চলতে পারে না।’
উল্ল্যেখ্য, ভারতে সরকারের সমালোচনাকারী বিভিন্ন সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ২০২০ সালে ভারতে কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। তারা অভিযোগ করেছিল যে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ‘উইচ-হান্ট’ বা প্রতিহিংসাম‚লক কর্মকান্ড চালাচ্ছে ভারতের সরকার। গত বছর বেসরকারি আরও কয়েকটি সংস্থার পাশাপাশি ব্রিটিশ দাতা সংস্থা অক্সফামেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল। গত দুই বছরে এবং বিবিসি ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞার আগে ভারতের এমআইবি কমপক্ষে নয়টি আদেশ জারি করেছে, যার মাধ্যমে এটি ১শ’ ৪টি ইউটিউব চ্যানেল, ৪৫টি ইউটিউব ভিডিও এবং ২৫টি ওয়েবসাইট, সেইসাথে সামাচিক মাধ্যমগুলির অ্যাকাউন্ট, পোস্ট এবং অ্যাপগুলিকে বøক করা হয়েছিল। এই সমস্ত আদেশ ‘জরুরি অবরোধ আইন’-এর অধীনে জারি করা হয়েছিল। সফ্টওয়্যার ফ্রিডম ল’ সেন্টার ইন্ডিয়ার ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ভারতে ২০১৫ সালের জানুয়ারী থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর এর মধ্যে অবরোধ করা ৫৫হাজার ৬শ’ ৭টি ইউআরএলের মধ্যে ৪৭.৬ শতাংশ তথ্য প্রযুক্তি আইনের অধীনে অবরোধ করা হয়েছে এবং ৪৬.৮ শতাংশ স্বত্বাধীকার লঙ্ঘনের দায়ে অবরোধ করা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি, আলজাজিরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।