Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভয়াবহ ভূমিকম্প : ধ্বংসস্তূপের পরতে পরতে লাশ

মৃতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:৫৯ এএম

সময় যত যাচ্ছে, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় ততই ফিকে হচ্ছে জীবনের আশা। কষ্ট হলেও মানুষ মানতে বাধ্য হচ্ছে তাদের স্বজনরা আর বেঁচে নেই। তাই এখন তারা স্বজনের মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছে। ভূমিকম্পে এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা দিগুণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও সিএনএনের।
বিধ্বস্ত এলাকায় শুরু থেকেই উদ্ধারকাজে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রচণ্ড ঠান্ডা, বৃষ্টি ও তুষারপাত। তবে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় লোকবল। দেশ দুটিতে এত বিপুল সংখ্যক ভবন ধসে পড়েছে যে, সেখানে উদ্ধার কাজ চালানোর মতো প্রয়োজনীয় লোকজন ছিল না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। কারণ, বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকর্মীদের বিধ্বস্ত এলাকায় পৌঁছাতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায়। এতেই মানুষের মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে।
অনেকেই স্বজনদের মৃত্যুর জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছে। তেমনই একজন হলেন আনতাকিয়া এলাকার বাসিন্দা জাফের মাহমুত বনকুক (৬০)। ভূমিকম্পে যখন তাদের ভবনটি ধসে পড়ে, তখন তিনি বুঝতে পারেন তার ৭৫ বছর বয়সী মা বেঁচে আছেন; কিন্তু তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েছেন। তিনি জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মাকে উদ্ধারের জন্য অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছি; কিন্তু মাকে বাঁচানোর জন্য তেমন কেউ এগিয়ে আসেনি।
আমি মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তার হাত ধরে পানি পান করাতেও সক্ষম হয়েছি; কিন্তু কেউ এগিয়ে না আসায় ভূমিকম্পের পরের দিন মঙ্গলবার তার মা মারা যান। অন্য অনেকের মতোই বনকুকের কষ্ট, বিপর্যয় এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। ভবনটি ধসে পড়ার এক সপ্তাহ পর গত রোববার তার মায়ের মরদেহ সরিয়ে নেওয়া হয়। তার বাবার মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আছে। চিৎকার করে তিনি বলেন, প্রিয় রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান—যদি আপনার নিজের মা হতো তাহলে কী করতেন? আমি মাকে পানি পান করিয়েছিলাম। ধ্বংসস্তূপের কিছুটা সরিয়েছিলাম আমি। বলেছিলাম তাকে বাঁচাব; কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি। আমার চোখের সামনে মা মারা গেছেন।
এমন গল্প বিধ্বস্ত এলাকগুলোতে অহরহ রয়েছে। গত কয়েকদিন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী পুরোদমে উদ্ধারকাজ চালিয়েছে। ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে উদ্ধার অভিযানের গতি। ভূমিকম্প আঘাত হানার ৮ দিন পার হয়েছে। এতদিন ধরে খাবার ও পানি ছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচে বেঁচে থাকা অলৌকিক ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই উদ্ধারকারীরা বলছেন, এখন শুধু মরদেহই পাওয়া যাবে।
আভসারোগলু নামের এক উদ্ধারকর্মী বলেন, তুরস্কের প্রাচীন শহর আনতাকিয়ায় ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়ে আমার বোন, তার স্বামী ও তাদের দুই সন্তান। ৭ ফেব্রুয়ারি রাত পর্যন্ত তারা বেঁচে ছিল; কিন্তু ধ্বংসস্তূপের গভীরে থাকা একটি জেনারেটর থেকে আগুন লাগার পর তাদের আর কোনো সাড়া পাইনি। কান্না করতে করতে তিনি বলেন, গত ১২ ফেব্রুয়ারি ভবনটির অবশিষ্টাংশ সরিয়ে আমার বোন ও তার পরিবারের সদস্যর মরদেহ বের করার চেষ্টা করি; কিন্তু মরদেহ তো দূরের কথা, তাদের কোনো চিহ্নই পাইনি। সম্ভবত তারা সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আগুন লেগে যাওয়া ভবনটিতে প্রায় ৮০ জন ছিল। আগুন লাগার আগে সেখান থেকে ২১ জনকে উদ্ধার করা হয়। পরে ১২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়; কিন্তু কিছু মরদেহের হাড় ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। ভূমিকম্পে ধসে পড়া বেশ কয়েকটি ভবনেই আগুন লাগার খবর পাওয়া গেছে। সেসব ভবনের নিচে চাপা পড়া মানুষগুলোর অবস্থাও হয়তো এমনই হয়েছে। হাড় ছাড়া হয়তো তাদের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
ভয়াবহ ভূমিকম্পের একের পর এক পরাঘাতে সহ্য করে তুরস্কের হাতায়া প্রদেশের প্রাচীন শহর আন্তাক্যায় এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে বেশকিছু ভবন। প্রতিটি ভবনেই রয়েছে বড় বড় ফাটল, কিছু ভবনের অর্ধেক টিকে আছে, আবার কোনোটি ঝুঁকিপূর্ণভাবে হেলে আছে। যে কোনো সময় সেগুলো ধসে যেতে পারে। ভবনগুলোর দেয়াল যেন মুহূর্তের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া প্রাণগুলোর অস্তিত্ব প্রকাশ করে। এসব ভবনের প্রায় প্রতিটিতে ভাঙা কংক্রিট ও পেঁচানো রডে বেঁধে থাকা আসবাবপত্র, হাস্যোজ্জ্বল পারিবারিক ছবির অ্যালবাম, জামাকাপড় ও খোলা আলমারি চোখে পড়ে। কত হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করেছেন মারা যাওয়া মানুষ। এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। জীবন কতটা অনিশ্চিত, এ ভবনগুলো যেন তা বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্কের ৮৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে একটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। তুর্কিশ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড বিজনেস কনফেডারেশন বলছে, হাজারো ঘরবাড়ি মেরামতের সম্ভাব্য ব্যয় ৭০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। জাতীয় আয়ে ক্ষতি ১০ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। আর কার্যদিবসের ক্ষতি ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
বাড়ি, বিদ্যুৎ লাইন ও অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং স্বল্প, মাঝারি ও স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা তৈরির পেছনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, আগামী এক বছরের মধ্যে বাড়িঘর মেরামত ও পুনর্র্নিমাণ করা হবে। দেশকে সচল করতে সরকার কর্মপন্থা নির্ধারণ করছে।



 

Show all comments
  • aman ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১০:০৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি তুরস্ককে হেফাজত করো
    Total Reply(0) Reply
  • Tutul ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১০:১০ এএম says : 0
    দোয়া করি যারা এ ভূমিকম্পে মারা গেছে তাদেরকে যেন মহান আল্লাহ জান্নতবাসী করেন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তুরস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ