মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর নাটকীয় উত্থানের পেছনে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা ও কারসাজি আছে, বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী পার্লামেন্টে সরাসরি এই অভিযোগ তোলার পরও প্রধানমন্ত্রী মোদি তার জবাব এড়িয়ে গেলেন।
রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার ওপর ধন্যবাদজ্ঞাপক বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বুধবার লোকসভায় প্রায় দেড় ঘণ্টার দীর্ঘ 'জবাবি ভাষণ' দিয়েছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে বিরোধীদের তোলা সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলোর একটিরও জবাব দেননি তিনি।
তার বক্তৃতায় আদানি তো দূরের কথা, কোনো শিল্পগোষ্ঠীর নাম পর্যন্ত একবারের জন্যও আসেনি।
বরং তিনি দুর্নীতির প্রশ্নে বেছে নিয়েছেন কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণের রাস্তা। বলেছেন, ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যে কংগ্রেস আমল ছিল, সেই দশকটি ভারতের ইতিহাসে আর্থিক কেলেঙ্কারি আর সহিংসতার একটি ‘অন্ধকার পর্ব’।
প্রধানমন্ত্রী মোদি যখন পার্লামেন্টে বক্তৃতা শুরু করছেন, ঠিক তখনই প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী টুইট করেন, “প্রধানমন্ত্রীজি, আপনি গণতন্ত্রের আওয়াজকে স্তব্ধ করতে পারবেন না। ভারতের মানুষ আপনাকে সোজাসুজি কিছু প্রশ্ন করেছে। জবাব দিন।”
তবে নরেন্দ্র মোদি সোজাসুজি তো নয়ই, এমনকি পরোক্ষভাবেও বিরোধীদের তোলা প্রশ্নগুলোর কোনো জবাব দেননি।
সভায় তার বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষ নেতারা বলতে থাকেন, যে অভিযোগগুলোর স্বপক্ষে বিরোধীরা কোনো প্রমাণ পেশ করতে পারেননি, সেগুলোর জবাব দেয়ারও কোনো প্রয়োজন নেই।
আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজুর কথায়, “রাহুল গান্ধী শুধু বললেই তো হবে না দুর্নীতি হয়েছে! সেটা প্রমাণ করার মতো নথিপত্র পেশ করতে না পারলে এগুলোতে কান দেয়ারও কোনো দরকার নেই।”
কী ছিল মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ?
হিন্ডেনবার্গ রিসোর্চের রিপোর্টের জেরে আদানির শিল্পসাম্রাজ্য টালমাটাল হয়ে ওঠার পর বেশ কয়েক দিন বিরোধীদের বাধায় ভারতের পার্লামেন্টে কোনো আলোচনাই হতে পারেনি। অবশেষে মঙ্গলবার থেকে বিরোধী এমপিরা ফের অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন।
সদ্য ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শেষ করা রাহুল গান্ধী তাতে অংশ নিয়ে সরাসরি আক্রমণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। অভিযোগ করেছেন "তার বদান্যতাতেই ২০১৪ সালে বিশ্বের ৬০৯ নম্বর ধনী থেকে গৌতম আদানি উঠে এসেছেন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে।"
রাহুল গান্ধী তার বক্তৃতায় মোদি-আদানি যোগসাজসের যে মূল অভিযোগগুলো করেছেন তা এমন :
ভারতের বিদেশনীতি, প্রতিরক্ষানীতি, অভ্যন্তরীণ নীতি বা কেন্দ্রীয় বাজেট সব কিছুই এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে তা আদানি শিল্পগোষ্ঠীর কাজে লাগে বা তাদের সুবিধা হয়।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বার বার তার বিদেশ সফরে গৌতম আদানিকে সাথে নিয়ে গেছেন বা সফরের কোনো পর্যায়ে আদানি প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগ দিয়েছেন। ঠিক তারপরই দেখা গেছে, সেই সব দেশে আদানি বড় বড় প্রকল্পের ঠিকাদারি পাচ্ছেন এবং ভারতের ব্যাংক বা বিমা সংস্থাগুলো তাতে আদানিকে ঋণ দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে দু’টো নির্দিষ্ট উদাহরণও দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, “মোদিজি বাংলাদেশে গেলেন, আর তার পরেই দেখলাম, সে দেশের পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড আদানির সাথে ২৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে ফেলল।”
“আবার ধরুন, মোদিজির সাথে আদানি অস্ট্রেলিয়ায় গেলেন। তার পরেই স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া সে দেশে প্রকল্প চালু করার জন্য আদানি গোষ্ঠীকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়ে দিল।”
বিমানবন্দর নির্মাণ বা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টিতে ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এয়ারপোর্ট মুম্বাইয়ের ভার আদানির হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এর জন্য সব নিয়মকে পাশ কাটানো হয়েছে এবং মুম্বাই এয়ারপোর্ট আগে যাদের হাতে ছিল, সেই জিভিকে গোষ্ঠীকে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে।
গৌতম আদানির ব্যক্তিগত জেটে নরেন্দ্র মোদি যাত্রী হিসেবে বসে আছেন (যখন তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী) এমন ছবিও পার্লামেন্টে তুলে ধরেন রাহুল গান্ধী।
তিনি আরো বলেন, “রাজনীতির সাথে বিজনেসের কী ধরনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হতে পারে, তাতে ভারতের এই কেসটাকে ধরে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিও একটা কেস স্টাডি করতে পারে। তাতে দেখবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় স্বর্ণপদক পাবেন।”
পার্লামেন্টে মোদির জবাব
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদজ্ঞাপক প্রস্তাবে সমাপনী বা জবাবি ভাষণ সাধারণত লোকসভার নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীই দিয়ে থাকেন।
কিন্তু মঙ্গলবার বিরোধীদের চাঁছাছোলা আক্রমণের পর রাষ্ট্রপতির ভাষণের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো।
সেই সব অভিযোগ খণ্ডন করার জন্য নরেন্দ্র মোদি কিছু বলেন কিনা, সে দিকে যথারীতি নজর ছিল গোটা দেশের।
প্রধানমন্ত্রী মোদি কিন্তু সে সবের জবাব দেয়ার রাস্তাতেই হাঁটেননি। বরং কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করে বোঝাতে চেয়েছেন, দুর্নীতি বা সরকার পরিচালনা নিয়ে তাদের প্রশ্ন করাটাই মানায় না।
বুধবারের ভাষণে তিনি বলেন, “২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের কথা আমাদের সবারই মনে আছে। সেই দশকটাই ছিল আর্থিক কেলেঙ্কারি আর সহিংসতার। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী তখন সন্ত্রাসবাদের কবলে চলে গিয়েছিল।”
“আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতের অবস্থান তখন এতটাই দুর্বল ছিল যে ভারতের কথা কেউ শুনত না।”
রাহুল গান্ধীর তোলা প্রসঙ্গগুলোর মধ্যে কেবল একটির কথাই উল্লেখ করেছেন তিনি। সেটা হল হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিকে কেস স্টাডি করতে বলার প্রস্তাব।
সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ভারতে কংগ্রেস দলটার উত্থান আর পতন কিভাবে হল, সেটা নিয়ে বরং হার্ভার্ড গবেষণা করতে পারে। তারা বোধ হয় করছেও!”
বিরোধী দলগুলো ‘হতাশায় ডুবে আছে’ বলেই ভারতের উন্নয়ন তাদের চোখে পড়ছে না বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সূত্র : বিবিসি
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।