Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তুরস্ক-সিরিয়া ছিন্নভিন্ন

দু’দফা ভূমিকম্পে নিহত অন্তত ২১০০ : ধ্বংসস্তূপে আটকেপড়াদের আর্তনাদ ১০ শহর-প্রদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-বিমানবন্দর বন্ধ : তুরস্কের পথে বিভিন্ন দেশের ত্রাণ ও উদ্ধারকা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সিরিয়ার সীমান্তের কাছে, দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের বিস্তৃত অঞ্চলে গতকাল দু’টি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ২১০০ মানুষ নিহত হয়েছে। এখনো আটকা পড়ে আছে অনেকে। ইতোমধ্যে কয়েক ডজন দেশ অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান এ ঘটনাকে গত ৮৪ বছরের মধ্যে তুরস্কের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় বলে অভিহিত করেছেন। ভূমিকম্পে তুরস্কে প্রায় তিন হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তুরস্কের ১০টি শহর ও প্রদেশের স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি হাতায়, মারাশ এবং আন্তেপের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ বা আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে।

ভূমিকম্পের ফলে তুরস্কে কমপক্ষে ১২শ’ এবং সিরিয়ায় ৭৮৩ জন নিহত হয়েছেন। মার্কিন ভূতাত্তি¡ক জরিপ জানিয়েছে যে, প্রথম ভূমিকম্পটি স্থানীয় সময় ৪টা ১৭ মিনিটে (বাংলাদেশ ভোর ৭টা ১৭ মিনিটে) একটি প্রধান শহর এবং প্রাদেশিক রাজধানী গাজিয়ানটেপ থেকে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার (২০ মাইল) দূরে ছিল। এটি প্রায় ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) গভীরে ছিল, একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের কয়েক ঘন্টা পরে বেশ কয়েকটি আফটারশক আঘাত হানে। ইউরোপীয় ভ‚মধ্যসাগরীয় ভূকম্পন কেন্দ্রে (ইএমএসসি) জানিয়েছে, গতকাল বিকালে আঘাত হানা দ্বিতীয় ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫। এর উৎপত্তিস্থল ছিল তুরস্কের কাহরামানমারাস থেকে ৬৭ কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পূর্বে এবং কেন্দ্র ছিল ভ‚পৃষ্ঠ থেকে দুই কিলোমিটার গভীরে। এ ভ‚মিকম্প সূদুর গ্রিনল্যান্ডেও অনুভূত হয়েছে।

সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আলেপ্পো, লাতাকিয়া, হামা এবং তারতুস প্রদেশে অনেক মানুষ মারা গেছে। আগামী কয়েক ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনেক ভবন ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসস্ত‚পের বিশাল স্ত‚পের নিচে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সন্ধানে উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমন সোয়লু বলেছেন, ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে: গাজিয়ানটেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালত্য, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস। গাজিয়ানটেপের উত্তর-পূর্বে মালটায়া প্রদেশে অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সানলিউরফাতে, পূর্বে, ১৭ জন মারা গেছে। এবং দিয়ারবাকির এবং ওসমানিয়েতে আরও বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ভ‚ম্পিকম্পটি রাজধানী আঙ্কারা এবং তুরস্কের অন্যান্য শহরেও অনুভ‚ত হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পুরো অঞ্চল জুড়েই কম্পন অনুভ‚ত হয়েছে। প্রতিবেশি দেশ সিরিয়া, লেবানন এবং সাইপ্রাসেও কম্পন অনুভ‚ত হয়েছে। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের শিক্ষারী মোহামাদ এর ছামা বলেন, ‘আমি কিছু একটা লিখছিলাম এবং হঠাৎ করেই পুরো ভবন কাঁপতে শুরু করে। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে কী হচ্ছে।’ ‘আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং আমার ভয় হচ্ছিলো যে সেগুলো ভেঙে পড়বে। প্রায় ৪-৫ মিনিট ধরে এটা চলে এবং পুরো বিষয়টি ভয়ংকর ছিল। এটা অভ‚তপূর্ব ছিল।’

দিয়ারবাকিরে থাকা বিবিসির তুরস্ক প্রতিনিধি বলেন, শহরটির একটি শপিংমল ধসে পড়েছে। গাজা উপত্যকায় থাকা বিবিসির প্রযোজক রুশদি আবুয়ালুফ বলেন, তিনি যে বাড়িতে থাকেন সেখানে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড ধরে কম্পন অনুভ‚ত হয়েছে। স্থানীয় সিসমোলজিস্টরা ভ‚মিকম্পটির মাত্রা ৭ দশমিক ৪ ছিল বলে জানাচ্ছেন। তারা বলছেন যে, ভ‚মিকম্পটি আঘাত হানার কয়েক মিনিট পরেই দ্বিতীয় আরেকটি কম্পন অনুভ‚ত হয়।

দুর্গত এলাকা থেকে যেসব মর্মান্তিক ছবি পাওয়া যাচ্ছে তাতে বাসাবাড়ি ও সড়কে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং ধ্বংসস্ত‚পের নিচে আটকে পড়া লোকদের সন্ধানকারী উদ্ধারকারী দলগুলিকে মরীয়া হয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। তুরস্কের ১০টি শহর ও প্রদেশের স্কুল এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি হাতায়, মারাশ এবং আন্তেপের বিমানবন্দরগুলি বন্ধ বা আংশিকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। ভ‚মিকম্পের কেন্দ্রস্থল প্রতিবেশী তুরস্কে হলেও সিরিয়াতেও বহু শত মানুষ মারা গেছে। এই দুর্যোগের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ভিডিও এবং ছবি উঠে আসছে। আলেপ্পোর উত্তর-পশ্চিমে এক শহর থেকে পাওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে ভবনগুলি ধসে পড়ার সাথে সাথে ধুলোর বিশাল মেঘের মধ্য দিয়ে বাসিন্দারা পালিয়ে যাচ্ছে এবং চিৎকার করছে।

ভ‚মিকম্পে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকা সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই সেখানে চিকিৎসা সেবা এবং জরুরি সরবরাহের সুযোগ সীমিত। সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কাজ করা একটি ত্রাণ সংস্থা হোয়াইট হেলমেট জরুরী সাহায্যের আহŸান জানিয়েছে। তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভ‚মিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলোর একটিতে অবস্থিত। এর আগে ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভ‚মিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।

সর্বশেষ ভ‚মিকম্পটি ঘটেছে তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের কাছে দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পশ্চিমমুখী ‘পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট’-এর চারপাশে। সিসমোলজিস্টরা দীর্ঘকাল ধরে বলে আসছেন যে এই ফল্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক, যদিও গত ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেখানে কোনও উল্লেখযোগ্য কার্যকলাপ হয়নি। তবে অতীতে এই এলাকায় কিছু মারাত্মক ভ‚মিকম্প হয়েছে। বিশেষ করে, ১৮৮২ সালের ১৩ অগাস্ট সেখানে ৭ দশমিক ৪-মাত্রার একটি ভ‚মিকম্প হয়েছিল, যা গতকালকের রেকর্ড করা ৭.৮-মাত্রার চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তা সত্তে¡ও, ১৯ শতকের সেই ভ‚মিকম্পে অনেক শহরের প্রচুর ক্ষতি হয়। আলেপ্পো শহরে ৭,০০০ মানুষ মারা যায়। শক্তিশালী ঐ ভ‚মিকম্পের আফটারশক চলতে থাকে প্রায় এক বছর ধরে। সূত্র : বিবিসি নিউজ, আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান।



 

Show all comments
  • Rakib Molla ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৩ এএম says : 0
    ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sakiul Rahaman ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৩ এএম says : 0
    এটা দেখে ভাবি যে কিসের আমরা অহংকার করব কোথায় গেল টাকা আর কোথায় গেলো দামি ঘর
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sakiul Rahaman ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৩ এএম says : 0
    এটা দেখে ভাবি যে কিসের আমরা অহংকার করব কোথায় গেল টাকা আর কোথায় গেলো দামি ঘর
    Total Reply(0) Reply
  • Altab Hossain ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৩ এএম says : 0
    Allah hefajot koro turoskor manush ke Amin Amin summaamin
    Total Reply(0) Reply
  • R G Poddar ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৩ এএম says : 0
    কেউ দুঃখ করো না সব আল্লাহর ইচ্ছায় হচ্ছে। আল্লাহ ওদের প্রতি সদয় হয়েছেন।।
    Total Reply(0) Reply
  • Narayon Dha ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৫ এএম says : 0
    r ভূমিকম্পের এমন ভয়াবহ ধ্বংস যজ্ঞের ভিডিও প্রথম দেখলাম। তুরস্কের প্রায় তিন হাজার বহুতল ভবন মাটিতে মিশে গেছে। সিরিয়া ও লেবাননেও ভূমিকম্প হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে তিন দেশের কয়েক হাজার মানুষের নির্মম মৃত্যু ঘটেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Tanjin Ahmed ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৫ এএম says : 0
    হে আল্লাহ এটা তুরুস্ক ভাগ্যে ছিলো সব তোমার নিয়ামত তুমি সব সময় আমাদের পাশে থেকো হে আল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shajjad Hossain ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৭ এএম says : 0
    ইয়া আল্লাহ! আমাদেরকে এসব বিপদ থেকে হেফাজত রাখুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Monsur Helal ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৭ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি তুরস্কের মুসলমানদের উপর রহমত বর্ষণ করো
    Total Reply(0) Reply
  • Rezwan Shorif ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৬:৪৭ এএম says : 0
    আল্লাহ তুমি তুরস্ক ও সিরিয়ার মুসলিম সহ সকল মুসলিমদের উপর রহমত বর্ষণ কর
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তুরস্ক-সিরিয়া

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ