খুলনার ফুলতলায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা প্রকাশ্যে গুলি করে মিলন ফকির নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করেছে। এ সময় শীতল কান্তি মন্ডল নামে অপর এক স্কুলশিক্ষক আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সকাল ৮টায় ফুলতলার জামিরা সড়কের আলকা আইডিয়াল স্কুল মোড়ের মা টেলিকম এন্ড কনফেকশনারীর সামনে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাÐে ব্যবহৃত পিস্তলের ৫টি গুলির খোসা উদ্ধার করেছে। খুলনার পুলিশ সুপার মাহাবুব হাসান, সিআইডির টিম, ডিবি, পিবিআই ও র‌্যাব-৬ এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নিহত মিলন নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পেড়োলী গ্রামের আ.ওহাব ফকিরের পুত্র এবং বর্তমান আলকা পূর্বপাড়ার বাসিন্দা। তিনি তিন সন্তানের জনক।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতকাল সকাল আনুমানিক পৌনে ৮টার দিকে মিলন ফকির ও স্কুলশিক্ষক শীতল কান্তি মন্ডল দু’জনে আইডিয়াল স্কুল মোড়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় জামিরাগামী লাল রঙের একটি মোটরসাইকেল নিয়ে অজ্ঞাত দুই যুবক ওই স্থানে এসে দাঁড়ায়। পিছনে বসে থাকা যুবক মোটরসাইকেল থেকে নেমে মিলনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় তিনি দৌড়ে মা টেলিকম এন্ড কনফেকশনারী নামক একটি দোকানের ভিতরে পালানোর চেষ্টা করেন। অস্ত্রধারী যুবক সেখানে গিয়ে তার মাথা ও বুকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে ওই মোটরসাইকেল যোগেই দ্রæত জামিরার দিকে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে ব্যবসায়ী মিলনের মৃত্যু ঘটে।
এ সময় বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ স্কুলশিক্ষক শীতল কান্তি মন্ডলকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
মিলনের পারিবারিক সূত্র জানায়, তার বড় ছেলে ফুলতলা রি-ইউনিয়ন স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র জিসাম হোসেন ইমন এবং তার এক আত্মীয় মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ভোর সাড়ে ৫টায় ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য মিলন এসে তাদেরকে ঢাকার বাসে তুলে দেয়। পরে ফজরের নামাজ পড়ে অন্যান্য দিনের মতো হাঁটাহাঁটি করে সকাল সাড়ে ৭টার সময় চা খাওয়ার জন্য আইডিয়াল স্কুল মোড়ে আসে।
মিলনের স্ত্রী রাশিদা বেগম বলেন, ফুলতলা উপজেলার শিকিরহাট, রানাগাতি ও কালিয়া উপজেলার পেড়োলী ঘাটের ইজারা নেয়ার জন্য দরপত্র সংগ্রহ করেন। খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে গতকাল সোমবার দরপত্র জমা দেয়ার কথা ছিল। কয়েক দিন আগে ঘাটের বর্তমান ইজারাদার ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন শিকিরহাট ঘাটের দরপত্র জমা না দেয়ার জন্য মিলনকে অনুরোধ জানান। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে আলমগীর হোসেন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য ফারুক মোল্যা দরপত্র জমা না দেয়ার জন্য মোবাইল ফোনে অনুরোধ জানাতে থাকেন।
নিহতের পিতা আব্দুল ওহাব ফকির বলেন, আমার জানা মতে মিলনের কোনো শত্রæ ছিল না। ঘাট ইজারাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষরা এ ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আমার ধারণা।
প্রত্যক্ষদর্শী মা টেলিকম এর মালিক রফিকুল ইসলাম সোহেল জানান, প্রতিদিনের মতো দোকান খুলে কিছুু মালামাল সাজাতে থাকি। এ সময় হঠাৎ গুলির শব্দে দেখি মিলন দৌড়ে আমার দোকানের ভিতরে ঢুকে পড়ে। কিছু বুঝে উঠার আগেই দুর্বৃত্তরা কয়েকটি গুলি করে পালিয়ে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
ওসি মো. ইলিয়াস তালুকদার বলেন, সংবাদ পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হত্যার প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনে চেষ্টা চলছে। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় কোনো আটক নেই। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।