Inqilab Logo

শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জার্মান ও মার্কিন ট্যাঙ্ক কি ভূমিকা রাখবে?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:৩৪ পিএম

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে এ মূহুর্তে আলোচনায় ‘লেপার্ড টু’ বা ‘এমওয়ান অ্যাব্রামস’ শব্দগুলো। প্রথমটি জার্মানির তৈরি ট্যাঙ্ক, যা কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা ও সিদ্ধান্তহীনতার পর শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনে পাঠাতে রাজি হয়েছে দেশটি। জার্মানি ১৪টি লেপার্ড টু ট্যাঙ্ক সহায়তা দেবে ইউক্রেনকে, এমন ঘোষণার ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র জানায়, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তারাও ইউক্রেনকে ৩১টি এমওয়ান অ্যাব্রামস ট্যাঙ্ক পাঠাবে। সবমিলে ইউরোপ থেকে অন্তত ১০০টি ট্যাঙ্ক পাওয়ার আশা করছে ইউক্রেন। যা রাশিয়ার কাছ থেকে দখল হওয়া অঞ্চল উদ্ধার ও যুদ্ধের মোড় ঘুরাতে গূরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু আসলেই কি তাই?

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া হামলা শুরুর পর থেকে অন্তত ৩০টির বেশি দেশ ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে। তবে এই পুরোটা সময় তারা ব্যবহার করেছে টি-৭২ ট্যাঙ্ক, সোভিয়েত আমলের অন্তত ৩০ বছরের পুরনো এই ট্যাঙ্কগুলো ইউক্রেনে আগে থেকেই ছিল। এর পাশাপাশি পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্র প্রায় আরো ২০০টি এই টি-৭২ ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে সরবরাহ করেছে। কিন্ত যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ার পর থেকে বিশেষ করে গত কয়েক মাস ধরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি পশ্চিমাদের কাছে আধুনিক ট্যাঙ্ক চেয়ে আসছিলেন। এবং তিনি দাবী করেন ৩০০টি ট্যাঙ্ক পেলে ইউক্রেন রাশিয়ান বাহিনীকে হটিয়ে তাদের হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

ট্যাঙ্ক হল সাঁজোয়া যান, যুদ্ধের ভারী সমরাস্ত্র। যা অনেক দূর থেকে যেমন গোলা বর্ষণ করতে পারে, আবার শত্রুর ট্যাঙ্কও ধ্বংস করতে পারে। এখন আক্রমণাত্মক যুদ্ধের সময় অত্যাধুনিক লেপার্ড টু ও এমওয়ান অ্যাব্রামস ট্যাঙ্কগুলি ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন সমর বিশেষজ্ঞ এবং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মাহমুদ আলী।‘যারা এগুলো ব্যবহার করবে তাদের যদি প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং সে সমস্ত সরঞ্জাম দরকার সেগুলো যদি সরবরাহ করা হয় তাহলে এগুলো দিয়ে বেশ কার্যকর আক্রমণাত্মক অভিযান চালানো সম্ভব যার সামনে রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’ আলী বলছিলেন, পশ্চিমা নেতাদের আশঙ্কা শীতকাল শেষ হতেই রুশ বাহিনী একটা বড় আক্রমণে যাবে, আর এই সময় তাদের ট্যাঙ্ক দেয়ার উদ্দেশ্য যাতে সেই আক্রমণের আগেই ইউক্রেন পাল্টা আক্রমণ করে তাদের হারানো অঞ্চল উদ্ধার করে নিতে পারে।

তাই এই সময় ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক পাঠানো রাজনৈতিক ও সামরিক দু’দিক থেকেই গূরুত্বপূর্ণ। ইউক্রেন যে দাবী করেছে যুদ্ধ জয়ের জন্য তাদের ৩০০টি ট্যাঙ্ক প্রয়োজন ঠিক সেই পরিমাণ ট্যাঙ্ক তারা এখনি পাচ্ছে না। তবে বিবিসির প্রতিরক্ষা সংবাদদাতা জোনাথন বিয়াল মনে করেন পশ্চিমা দেশগুলো থেকে যদি ১০০টির মতো ট্যাঙ্কও ইউক্রেনের হাতে পৌঁছায় – তাহলে সেটা যুদ্ধক্ষেত্রে বিরাট পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। সবার প্রথমে যুক্তরাজ্য ঘোষণা দেয় কিয়েভকে ১৪টি চ্যালেঞ্জার টু ট্যাঙ্ক পাঠানোর। এটিও বেশ পুরনো তবে এই ট্যাঙ্কে এমন কামান রয়েছে যার সাহায্যে নিখুঁতভাবে আক্রমণ চালানো সম্ভব।

জার্মানিও জানিয়েছে তারা ১৪টি লেপার্ড টু ট্যাঙ্ক দেবে। যা তুলনামূলকভাবে হালকা, ব্যবহার করা সহজ, দ্রুত গতির এবং জ্বালানিও কম লাগে। আর যুক্তরাষ্ট্র দিচ্ছে ৩১টি অ্যাব্রামস ট্যাংক। ‘ইউক্রেনের একটা ট্যাঙ্ক ব্যাটালিয়ন ৩১টি ট্যাঙ্ক মিলেই হয়ে থাকে’—বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে জার্মানি লেপার্ড টু দিতে সম্মত হওয়ায় এখন ইউরোপের অন্য দেশগুলোর ইউক্রেনে ট্যাঙ্ক পাঠাতে আর বাধা থাকছে না। কারণ ইউরোপজুড়ে বেশ কটি দেশে প্রায় ২ হাজার লেপার্ড টু ট্যাঙ্ক রয়েছে। যার নির্মাতা জার্মানি এবং রপ্তানি লাইসেন্সও তাদের হাতে। এরইমধ্যে পোল্যান্ড জানিয়েছে লেপার্ড ছাড়াও তারা আরো বাড়তি ৫০-৬০টি সোভিয়েত সময়ের ট্যাঙ্ক পাঠাবে ইউক্রেনের কাছে।

তবে এখনো এই ট্যাঙ্কগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে পৌছাতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। বিশেজ্ঞরা বলছেন যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে প্রাইভেট কন্ট্রাকটরদের থেকে কিনে তারপর পাঠাবে। তাদের সংরক্ষিত ট্যাঙ্ক দেবে না। জার্মানির তৈরী লেপার্ড টু অবশ্য বর্তমান মজুদ থেকেই পাঠানো হবে এবং আশা করা হচ্ছে ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যেই সেটি পৌঁছে যাবে। প্রতিশ্রুত ট্যাঙ্ক হাতে পেলে ইউক্রেনের বাহিনী আরো শক্তিশালী হবে সন্দেহ নেই। তাদের আক্রমণের গতি যেমন বাড়বে, নিশানাও নিঁখুত হবে। আর সঠিক কৌশল অবলম্বন করে ঠিকঠাক আক্রমণ করতে পারলে রুশ বাহিনীকে পিছু হটানোও সম্ভব।

তবে সে লক্ষ্য অর্জনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ দেখছেন সমর বিশেষজ্ঞ সৈয়দ মাহমুদ আলী। ‘একটা সমস্যা হচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো খুব জটিল, এগুলো সঠিকভাবে চালাতে প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এতদিন ইউক্রেনীয় বাহিনী পুরনো ট্যাঙ্ক চালিয়েছে এখন তাদের নতুন করে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।’ প্রতিটি ট্যাঙ্কের সাথে থাকে আরো বেশ কিছু যুদ্ধ সরঞ্জাম। সেই সরঞ্জামগুলো দেখাশোনা করা বা যুদ্ধক্ষেত্রে ভেঙে গেলে তা মেরামত করার জন্য কারিগরি ব্যবস্থা এবং ওয়ার্কশপ থাকাটা জরুরী বলছেন আলী। এছাড়া জ্বালানী ও গোলাবারুদের মজুদ নিশ্চিত করা আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে এই ট্যাঙ্কগুলো চালানোর ক্ষেত্রে। ‘এই ট্যাংকগুলোর ওজন ৭০ থেকে ৮০ টন। এগুলোর চলাচলের জন্য ভূমি দরকার, বরফ বা কাদা হলে কঠিন। নদী পার হবার জন্য সেতু লাগবে এবং সেটাকে এই ওজন বহনের ক্ষমতা নিতে হবে,’ বলছিলেন মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

ইউক্রেনে জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাঙ্ক পাঠানোর ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। ক্রেমলিন বলছে এই সিদ্ধান্ত সংঘাত আরো বাড়িয়ে দেবে। বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন এখন আর আলোচনার টেবিলে নয়, রাশিয়া-ইউক্রেন লড়াইয়ের ভাগ্য নির্ধারিত হবে যুদ্ধক্ষেত্রেই। রাশিয়ার নিজেদেরও অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক রয়েছে। তবে এসমস্ত অত্যাধুনিক ট্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার মতো অস্ত্র রাশিয়ার কতোটা আছে সেটা জানা যাবে ভবিষ্যতে।

তবে আলীর বিশ্বাস রাশিয়ার কাছেও এর জবাব থাকবে। ‘এগুলো সঠিকভাবে যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে পাল্টা প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে এরকম খুব একটা দৃষ্টান্ত আমরা সম্প্রতি দেখিনি। ইরাকে, আফগানিস্তানে, এসব বাহিনীর কাছে এ ধরণের ট্যাঙ্ক ছিল না। কাজেই পাল্টা অভিযানের দৃষ্টান্ত নেই। তবে রাশিয়ার কাছে এ ধরণের ট্যাঙ্কের মোকাবেলায় অত্যাধুনিক অস্ত্র আছে বা থাকবে বলে ধরে নিতে পারি।’ সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ