শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
এই বরফ জমা শীতের রাতেও নেহার কপালের বারান্দা চুয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে লোনা জল। নিজের কাছে বিশ্বাস করতেও দ্বিধা হচ্ছে। অন্ধকারে কোন রকমে পথ খুঁজে নিয়ে নিজের রুমে এসে সটান শুয়ে পড়ে।
আজ নেহার বিয়ের প্রথম রজনী। প্রতিটি মেয়ের বুক পকেটের সদর দরজায় নানা রকম স্বপ্নরা উঁকি মারে এই রাতকে নিয়ে। নেহার কপালে কি এটাই লেখা ছিল? তাও কি না ফুল সজ্জিত বাসর রাতে। অনেক রাত অতিবাহিত হলেও নেহার স্বামী আকিজ সাহেবের কোন পাত্তা নেই। নেহার চোখে নেমে আসছে রাজ্যর ঘুম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত্রি তিনটে একুশ মিনিট বাড়ি জুড়ে শুনশান নীরবতা। নেহা অপেক্ষার বাঁধ ভেঙে এক সময় নিজের রুম থেকে বাহিরে চলে আসে। তিন তলা বিশিষ্ট বাড়ির ছাদে গিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে, বেলকনিতে খুঁজে, কোথাও নেই আকিজ সাহেব। নেহা উদাস মনে নিজের রুমে ঢোকার আগ মুহূর্তে শুনতে পায় পাশের রুম থেকে ফিস ফিস কথার শব্দ ভেসে আসছে। সাবধানে জালানার ফাঁক গলে ডিম লাইটের আলোতে যা দেখতে পায় নেহা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারে না। আকিজ সাহেব নিজের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী কে বাসর ঘরে একা রেখে পরোকিয়ায় লিপ্ত নিজের মেজো ভাবির সাথে। নেহার চোখের অশ্রæতে ভিজে যায় বিছানার চাদর। কার কাছে বলবে একটু আগের ঘটনা? নেহা কিছু ভেবে পায়না। যে দিকে তাকায় চোখের সামনে ভেসে উঠে আকিজ সাহেব ও তার ভাবির অন্তরঙ্গ মুহূর্তের দৃশ্য। রাত শেষে কখন যে ভোর হয়েছে! বাড়ির ছোট ছেলে মেয়েদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় নেহার। উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে। আকিজ সাহেব তখনও ঘুমাচ্ছে। কে জানে ভাবির রুম থেকে কখন এসেছে? নেহা এসব জানতেও চায় না। আকিজ সাহেবের জন্য সকালের নাস্তা তৈরিতে মন দিল। এক সময় আকিজ সাহেব উঠে ফ্রেশ হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করতে করতে নেহাকে বলল। তোমার হাতে বানানো খাবার খাওয়ার মতো সময় এই মুহূর্তে আমার হাতে নেই। বন্ধুরা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে জরুরী একটা কাজে যাচ্ছি। নেহা কিছু বলার আগে আকিজ সাহেব চলে গেল। নেহা সেদিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইল। মনে মনে পরিকল্পনা করল বড় ভাবির কাছে, মেজো ভাবির বিষয়ে জানার চেষ্টা করবে। নেহার সেই জানার ইচ্ছেটার জলাঞ্জলি দিতে একটুও সময় লাগল না। যখন বড় ভাবি নিজে থেকে নেহার কাছে এসে বলল। কালকে রাতের বিষয়ে সে সব কিছু জানে। এমন কি আকিজের বাবা ও মা খুব ভালো করে জানে। আর ওনারা সবাই জানে বলেই চাল চুলোহীন গরিব ঘরে গিয়ে আত্মীয়তা করেছে। শত অন্যায় দেখার পরেও যেন মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারে। নেহাকে সকল প্রকার কসমেটিক ও স্বর্ণ অলংকার দিয়ে সাজিয়ে এনেছে। নেহার কাছে সব কিছু নদীর চকচকে পানির মতো পরিস্কার হয়ে গেল। নেহা ছলছল চোখে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে লাগলো। আল্লাহর কাছে বলতে লাগলো, হে আল্লাহ তুমি যখন থেকে আমাকে বোঝার মতো তৌফিক দিয়েছ ঠিক তখন থেকে কোন পরপুরুষ আমার স্পর্শে আসে নাই। কিন্তু আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে তুমি আমাকে এ কেমন স্বামী দান করলে? আমাকে এ কেমন পরীক্ষায় ফেললে? দরজায় কারো নক করার শব্দ শুনে নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খুলে নেহা। আকিজ সাহেব রুমে ঢুকে শুয়ে পরল। এই ঘরে যে আরো এক জনের অস্তিত্ব আছে এ কথা যেন এক দম ভুলে গেছে আকিজ সাহেব। আজ বিয়ের সাত দিন হতে চলছে। প্রতি রাতের মতো আজকে রাতেও আকিজ সাহেব অপেক্ষা করছে নেহা কখন ঘুমিয়ে পড়ে। নেহা যে আকিজ সাহেবের সমস্ত কিছু এই কয়েক দিনে জেনে গেছে। আকিজ সাহেব তা ভাবতেও পারে নাই। আল্লাহ ভীরু ধার্মিক মেয়ে নেহা। সব কিছু বড় ভাবি ও শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে জানার পরে। মনে মনে পরিকল্পনা করেছে আকিজ সাহেবকে বলে কয়ে কাজ হবে না। বিষয়টি যদি ওর বাড়ির কেউ জানতে পারে তবে এ সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না নেহার গরিব বাবা মা। নেহা রাতের খাবার খেয়ে অযূ করে জায়নামাজ বিছিয়ে নামায আদায় করতে লাগলো।
আকিজ সাহেবের সে দিকে কোন খেয়াল নেই। সুযোগের অপেক্ষায় বসে আছে। এক সময় রুমের বাহিরে এসে কিছু সময় পায়চারি করে আবারও রুমে ঢুকে। এমন করে আরো কয়েক দিন চলল। নেহা রোজ রাতে খাবার খাওয়া শেষ করে জায়নামাজ বিছিয়ে নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনায় কান্না করে। শেষ রাতে ভোরের নামায আদায় করে একটু ঘুমিয়ে নেয়। আকিজ সাহেব এই প্রথম নেহার নামায আদায় করার দিকে তাকিয়ে আছে। বিয়ের সাতাশ দিন পরে আজ প্রথম নেহার দিকে মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নেহা নামাজ শেষে মোনাজাতে কান্না করতে করতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে খুব পিপাসা পেয়েছে। পানি ভর্তি জগের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতে আকিজ সাহেব বলল নেহা তোমার খুব পিপাসা পেয়েছে? এই নাও জগ ভর্তি পানি।
নেহা ঢকঢক করে জগের সমস্ত পানি খেয়ে নিল। আকিজ সাহেব নেহার দিকে একটু ঝুঁকে বলল। রোজ রাতে এভাবে একাকি নামায আদায় করবে না কি আমাকেও তোমার সাথে নেবে?
আকিজ সাহেবের কথা শুনে, নেহা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে দুই রাকাত নফল নামায আদায় করে। খুশিতে আত্মহারা হয়ে আকিজ সাহেবকে জড়িয়ে ধরে। আকিজ সাহেব নিজের ভুল বুঝতে পারে। নেহার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলল, তুমি যেদিন থেকে নামায আদায় করা শুরু করলে, সেদিন থেকে আমি অনেক চেষ্টা করেও ভাবির রুমে যেতে পারি না। আমার ভিতর থেকে কে যেন আমাকে বারবার বাঁধা দেয়। আমি আমার বিবেকের কাছে পরাস্থ। নেহা আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। তোমার সাথে আমি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি। এত দিন স্বামীর অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বড় পাপ করেছি। নেহা তুমি হয়তো জানো আমার মেজো ভাই বিদেশে থাকে। ভাইয়া বিদেশে থাকার কারণে ফুঁসলিয়ে আমাকে দিয়ে ভাবি জোর করে এই সব অন্যায় কাজ করাতো প্রথম প্রথম। এক সময় আমার কাছে এসব পাপের কাজ নেশায় পরিণত হয়। আমি লিপ্ত হয়ে পড়ি মেজো ভাবির পরোকিয়া প্রেমে। আমাদের বিষয়টি বাবা মা এমন কি বড় ভাবিও এক সময় বুঝতে পারে। অনেক চেষ্টা করেও আমাকে ও ভাবিকে আলাদা করতে পারে নাই। বাহিরের মানুষ জানলে পরে বাবার মান ইজ্জত ধূলোয় মিশে যাবে। এই ভয়ে আমাকে ভালোর পথে ফিরিয়ে আনতে এক সময় তোমার সাথে বিয়ের ব্যাবস্থা করে। তুমি গরিব হলেও পরিবারের সবাই রাজি হবার এক মাত্র কারণ হলো। আমার এসব কিছু জানার পরেও তুমি কোন প্রতিবাদ করবে না গরিব বলে। আকিজ সাহেবের কথা শেষ হতে না হতে নেহা বলল যা হয়েছে ওসব অতীত। এসো আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে। আকিজ সাহেব নেহার কথায় মাথা নাড়িয়ে বলল দাঁড়াও রুমের লাইট নিভিয়ে দেই। নেহাকে শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে আকিজ সাহেব বলতে লাগলো। আজকের পর থেকে মৃত্যুর আগমুহূর্ত এই আমার মাঝে শুধু তোমার অধিকার। আজ আকিজ সাহেব ও নেহার বিয়ের সাত মাস হতে চলছে। ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। নেহা দুই মাসের গর্ভবতী। আকিজ সাহেব মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে খুশি মনে বাড়ি আসে। রিপোর্ট দেখিয়ে বাড়ির সবাইকে মিষ্টি মুখ করায়। আকিজের বড় ভাবি ও মা নেহার কাছে এসে বলে এবার যদি ছেলেটা ভালোর পথে ফিরে আসে। নেহা ওনাদের কথার সাথে তাল মিলিয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে। খুশি হতে পারে না শুধু সেই একজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।