মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনের যেসব অঞ্চল রাশিয়া দখল করে নিয়েছে সেগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য কিয়েভ পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে কয়েক শ আধুনিক ট্যাঙ্ক চাইছে। ইতোমধ্যে ব্রিটেন এধরনের ১৪টি ট্যাঙ্ক দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আর কোনো দেশের পক্ষ থেকে এখনও এরকম কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি।
ইউক্রেনের প্রধান যুদ্ধ ট্যাঙ্কের নাম টি-৭২। এসব ট্যাঙ্ক তৈরি হয়েছে ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে। এবং ইতোমধ্যেই এগুলো পুরনো হয়ে গেছে। ‘ইউক্রেনের অনেক ট্যাঙ্কই সম্ভবত আর ব্যবহারযোগ্য নয়, কারণ রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার আগে এগুলোকে যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি,’ বলেন কিংস কলেজ লন্ডনের একজন প্রতিরক্ষা গবেষক ড. মারিনা মিরন। একারণে ইউক্রেন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ৩০০টির মতো আধুনিক ট্যাঙ্ক চেয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে রাশিয়া ইতোমধ্যে যেসব এলাকা দখল করে নিয়েছে, সেগুলো পুনর্দখল করার করার জন্য ইউক্রেন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পশ্চিমা দেশের এসব আধুনিক ট্যাঙ্ক ব্যবহার করতে পারে। ‘রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙে দেয়ার জন্য ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আধুনিক ট্যাঙ্ক প্রয়োজন। কারণ রাশিয়ার রয়েছে ভারী ভারী কামান,’ বলেন প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউটের সিনিয়র গবেষক ড. জ্যাক ওয়াটলিং।
পশ্চিমারা ইউক্রেনকে কী কী ট্যাঙ্ক দিতে পারে
যুদ্ধের শুরুতে পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র সরবরাহ করেছে তার মধ্যে রয়েছে শুধুমাত্র ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। তাদের আশঙ্কা হচ্ছে- ট্যাঙ্কের মতো যেসব অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালানো যায়, ইউক্রেনকে সেসব অস্ত্র দেয়া হলে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হবে এবং তার ফলে যুদ্ধ আরো বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে। পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া এবং চেক প্রজাতন্ত্র গত বছর ইউক্রেনকে যে ট্যাঙ্ক দিয়েছে সেটি হচ্ছে টি-৭২। এর সংখ্যা প্রায় ২০০।
এখনও পর্যন্ত ব্রিটেনই একমাত্র দেশ যারা ইউক্রেনকে আধুনিক ট্যাঙ্ক দেয়ার কথা বলেছে। তারা কিয়েভকে ১৪টি চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাঙ্ক দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। এই ট্যাঙ্কে এমন কামান রয়েছে যার সাহায্যে নিখুঁতভাবে আক্রমণ চালানো সম্ভব। তবে চ্যালেঞ্জার ২ ট্যাঙ্কে, নেটো জোটের সদস্য দেশগুলোর ব্যবহৃত অন্যান্য ট্যাঙ্কের চেয়ে ভিন্ন ধরনের গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়। এর ফলে ইউক্রেনে ব্রিটিশ এই যুদ্ধ ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা অনেক বেশি জটিল হতে পারে। ‘চ্যালেঞ্জার ট্যাঙ্কের গোলাবারুদের জন্য ইউক্রেনকে নতুন একটি সরবরাহ লাইন গড়ে তুলতে হবে যা অন্যান্য ট্যাঙ্কের গোলাবারুদের সরবরাহ লাইনের চেয়ে আলাদা হবে,’ বলেন ড. মিরন।
তবে ইউক্রেন জার্মানির তৈরি লেপার্ড ২ ট্যাঙ্ক পেতে অনেক বেশি আগ্রহী। এই ট্যাঙ্ক তুলনামূলকভাবে হালকা এবং দ্রুত গতির। এগুলোতে প্রচলিত মানের গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়। জার্মানি ছাড়াও আরো কয়েকটি দেশ তাদের সামরিক বহর থেকে এই ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে পারবে। পোল্যান্ড এবং ফিনল্যান্ড জার্মানির কাছ থেকে লেপার্ড ২ ট্যাঙ্ক কিনেছে। এই দুটো দেশ বলছে যে, তারা ইউক্রেনকে মোট ২৫টি লেপার্ড ট্যাঙ্ক দিতে চায়। তবে ইউক্রেনকে এই ট্যাঙ্ক দিতে হলে জার্মানির অনুমতি প্রয়োজন। কারণ তারা এই ট্যাঙ্ক তৈরি করেছে। কিন্তু জার্মানি এখনও অনুমতি দেয়নি। পশ্চিমা দেশগুলো এই অনুমতির জন্য জার্মানির ওপর প্রচণ্ড চাপ তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও তাদের তৈরি কিছু এম১ অ্যাব্রামস ট্যাঙ্ক চেয়েছে ইউক্রেন। কারো কারো মতে এটি বিশ্বের সর্বাধুনিক ট্যাঙ্ক। ইউক্রেনকে এই ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে ওয়াশিংটন এখনও রাজি হয়নি।
জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্র কেন ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক দিচ্ছে না?
‘অন্যান্য পশ্চিমা দেশ যেহেতু কিয়েভকে ট্যাঙ্কের মতো অস্ত্র দিচ্ছে না, সেকারণে জার্মানি ইউক্রেনের কাছে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন,’ বলেন ড. মিরন। ‘তারা উদ্বিগ্ন এ কারণে যে এর ফলে রাশিয়া তখন জার্মানিকে এককভাবে চিহ্নিত করে বলতে পারে: তোমরা সীমা অতিক্রম করেছে, এখন আমরা তোমাকে শাস্তি দেব।’ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কেন তাদের অ্যাব্রামস ট্যাঙ্ক দিচ্ছে না? ড. ওয়াটলিং মনে করেন বাস্তবিক কিছু কারণে এটা দেয়া হচ্ছে না। ‘এই ট্যাঙ্কের প্রচুর জ্বালানি প্রয়োজন এবং ইউক্রেনের জ্বালানির অভাব রয়েছে। এছাড়াও অ্যাব্রামস ট্যাঙ্ক সচল রাখতে হলে এর প্রচুর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন,’ বলেন তিনি। তবে এমনও হতে পারে যে এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে বার্তা দেয়া হচ্ছে: “আমাদের নিজেদের ট্যাঙ্ক দেয়ার আগে আমরা দেখতে চাই যে তোমরা চ্যালেঞ্জার্স এবং লেপার্ড ট্যাঙ্ক দিয়ে কেমন করছো,” বলেন ড. মিরন।
পশ্চিমা ট্যাঙ্ক ইউক্রেনকে কতোটুকু সাহায্য করবে?
পশ্চিমা ট্যাঙ্কগুলো রাশিয়ার ট্যাঙ্কের চেয়ে ভারী। এর ফলে এগুলোর ব্যবহার সীমিত হবে, বলেন ড. ওয়াটলিং। ‘এসব ট্যাঙ্ক এতো ভারী যে এগুলো ইউক্রেনের সেতুর ওপর দিয়ে চলতে পারবে না। ফলে এসব ট্যাঙ্কের সঙ্গে এমন যানবাহনও থাকতে হবে যেগুলো সাহায্যে ট্যাঙ্ক চলাচলের জন্য বিশেষ ধরনের সেতু তৈরি করা যায়,’ তিনি বলেন।
এর অর্থ হচ্ছে ইউক্রেন এসব ট্যাঙ্ক শুধুমাত্র সীমিত সংখ্যক কিছু জায়গায় ব্যবহার করতে পারবে, বলেন ড. মিরন। ‘ইউক্রেনের যেসব অংশে নদীনালা কম, শুধুমাত্র সেরকম কিছু জায়গাতেই কিয়েভ এসব ট্যাঙ্ক ব্যবহার করতে পারবে,’ বলেন তিনি।“এছাড়াও যেসব এলাকা খুব বেশি কর্দমাক্ত নয়, সেসব জায়গাতেই এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। কারণ এগুলো নিশ্চিতভাবেই মাটিতে বসে যাবে।”
তিনি বলেন, ইউক্রেনে যেসব পশ্চিমা ট্যাঙ্ক পাঠানো হবে, সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবেই রাশিয়ার আক্রমণে লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠবে।“এগুলোকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করে ফেলার জন্য রাশিয়া তৎপর হয়ে উঠবে,” বলেন তিনি। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।