Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কদর বাড়ছে সন্ত্রাসীদের

পাড়া-মহল্লায় উঠতি অপরাধীদের আড্ডা

হাসান-উজ-জামান | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। বিরোধী দলগুলো গত কয়েকমাস যাবত রাজপথে বেশ সরব হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশে সফলের পর তাদের নেতাকর্মীরা বেশ চাঙা হয়ে উঠেছে। বিরোধীদলের কর্মসূচিকে মোকাবিলা করতে সরকারি দলও রাজপথে কর্মসূচি পালন করছে। এতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সরকার দলীয় সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। সরকারী দল আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে বিরোধীদলের যে কোনো ধরনের অপতৎপরতারোধে পাড়া-মহল্লায়ও নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচির জবাবে আওয়ামী লীগও পাল্টা সমাবেশ করেছে। টার্গেট আগামী বছরের প্রথম দিকের জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের আগে মাঠ দখলে রাখতেই সরকার ও বিরোধীদলের চলছে নানান তৎপরতা। এ সময় রাপথের আন্দোলনকে চাঙা রাখতে সব দলের কাছে সন্ত্রাসীদের কদর বেড়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধীদলগুলো রাজপথে আন্দোলন করছে। আর বিরোধী দলের এই আন্দোলন মোকাবিলা করতে সরকারও রাজপথে তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। রাজপথে আন্দোলনে শক্তি প্রদর্শনে দরকার সন্ত্রাসীদের। এ কারনে ইতোমধ্যেই ভয়ংকর সব সন্ত্রাসীরা কে কোথায় আছে, খোঁজ নেয়া শুরু হয়েছে। অনেকে জেলে থাকা সন্ত্রাসীদেরও পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খোঁজখবর নিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা সম্পর্কেও। ছোটখাট মামলায় জেলে রয়েছেন এমন অপরাধীদের জামিনে মুক্ত করতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কারাবন্দি গডফাদার কিংবা এলাকায় প্রভাব রয়েছে এমন সন্ত্রাসীদের মুক্ত করার জন্য অনেকে প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।
দেড় বছরেরও অধিক সময় সময় জেল খেটে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পান রাজধানীর পল্লবীতে শিশুপুত্রের সামনে খুন হওয়া সাহিনুদ্দিন সাহিনের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল। বহুল সমালোচিত আউয়াল জামিনে বের হয়েই পল্লবী ও মিরপুরের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। যারা সবাই সাহিন হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। বৈঠক শেষে তাদের টাকাও দেন এই সাবেক জনপ্রতিনিধি। সন্ত্রাসী ছাড়াও প্রশাসনকে ব্যবহার করে অনেককে মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, মিরপুরের সরকার দলীয় এক প্রভাবশালী নেতার হয়ে কাজ করার শর্তে তাকে জামিনে মুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসিবুব রহমান মানিকের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন এলাকাবাসী। দখলবাজিসহ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদে গতকাল ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে মানিকের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে ২৬ নং ওয়ার্ডের জনগণ।
সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন মোহাম্মদপুরের আলোচিত কাউন্সিলর রাজীব। মোহাম্মদপুরে রয়েছে সরকারিদলের ছত্রছায়ায় থাকা নেতাদের নেতৃত্বে একাধিক গ্রুপ। প্রত্যেকের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে সন্ত্রাসী গ্রুপ। অদিত চৌধুরীর নেতৃত্বে রয়েছে কিশোর সিন্ডিকেট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যখন পাড়া-মহল্লা পাহারা দেয়ার ঘোষণা আসে এরপর থেকেই সন্ত্রাসীদের কদর বাড়তে থাকে। এসব সন্ত্রাসী এখন রাজনৈতিক শেল্টারে চলছে। বাড়তি হিসেবে রয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আশীর্বাদ। যে কারনে পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে অনেকগুলো উঠতি সন্ত্রাসী গ্রুপ। এসব নতুন সন্ত্রাসীর অধিকাংশই নাম না জানা মস্তান। এরাই নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন এলাকা। সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন নামে কিশোর গ্যাং গ্রুপ। চাঁদাবাজি-ছিনতাই এবং মাদক ব্যবসাই এদের কাজ। পুলিশের অভিযানে প্রতিনিয়তই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন ছিনতাইকারি গ্রেফতার হয়। কিন্তু ছিনতাই ও পাড়া-মহল্লার আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, চিহ্নিত সন্ত্রাসীর অধিকাংশই হয়তো বিদেশে নয়তো কারাগারে। যারা জামিনে রয়েছে তারা নিষ্ক্রিয়। কেউ বা ভিন্ন এলাকায় গিয়ে বসবাস করছে। তবে এলাকায় এখন যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে তারা অনেকটাই নতুন মুখ। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, টেন্ডার ও চাঁদাবাজি করাই এদের কাজ। এদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষজন।
গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় ছিল বিএনপির মহাসমাবেশ। ওই দিন এবং এর আগের কয়েক দিন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি দলের নেতারাই তাদের বিতর্কিত কর্মীদের খোঁজখবর নিতে। ১০ ডিসেম্বর কমলাপুরে বিএনপির সমাবেশ হলেও ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টেই ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। নেতারা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিভিন্ন পয়েন্টে চেয়ার পেতে বসে থাকলেও তাদের পাহারায় ছিলো সন্ত্রাসীরা।
বিশেষজ্ঞ মহল বলছেন, রাজনীতিতে গণতন্ত্রের ঘোর সংকট দেখা দেয়ায় ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদল দু’পক্ষই ক্যাডার পলিটিক্সে ঝুঁকেছে। সন্ত্রাসীরা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় অপরাধ করছে। সামনে নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াবে। যে কারণেই সন্ত্রাসীদের কদর বাড়বে সবগুলো দলের কাছে।
সূত্র মতে, দেশের বাইরে ও কারাগারে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা উঠতি বয়সি অপরাধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। আর এরা এসব অস্ত্র পেয়ে নিরাপদে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। ছিনতাইয়ের শিকার একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, যারা তাদের টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের বেশিরভাগই তরুণ।
এলাকাসূত্রে জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক নামে গ্রুপভিত্তিক অপরাধ করছে সন্ত্রাসীরা। উঠতি সন্ত্রাসীরা এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে এদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা করার সাহস পায় না। আবার মামলা হলেও তার জামিনে মুক্ত করার লোকেরও অভাব হয় না।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি ফারুক হোসেন বলেছেন, যারা অপরাধের সাথে জড়িত তারা সবাই নজরদারির মধ্যে আছে। এদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়েছে বলে তিনি জানান।



 

Show all comments
  • Kawsar Ahmad Rasel ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৩ এএম says : 0
    প্রতিটা বাবা মা এর উচিৎ হবে তাদের সন্তানরা কখন কোথায় যায় কি করে কাদের সাথে মিসছে এগুলো নজরদারি করা। কারন ছেলে কোথায় যায় মা যানে না মেয়ে কোথায় যায় মা যানে না ছেলে বলছে ওই বন্ধু আসছে একটু ঘুরে আসছি ঘুরতে যায় না ছেলে দেখা যায় ৫ ১০ জন বন্ধু মিলে আড্ডা দেয়। তারা যেখানে পড়ার টেবিলে পড়ার কথা সেখানে কোচিং এর নাম বলে ছেলে মেয়েরা আড্ডা দিচ্ছে এগুলোতো আমরা কেউ দেখি না। আমরা যানি তারা তো পড়তে গেছে। আসলে প্রতিটা ফ্যামিলির উচিৎ তাদের সন্তানদের খোঁজ খবর রাখা।
    Total Reply(0) Reply
  • Srabon Ahamed Taizul ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৪ এএম says : 0
    বিচার না করেই ছেরে দিবে এটাই বাংলাদেশের নিয়ম?
    Total Reply(0) Reply
  • সরকার মেহেদী হাসান পায়েল ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৪ এএম says : 0
    সবচেয়ে বাজে বিষয় এদের বেশিরভাগেরই হুন্ডা আছে বাচ্চা বাচ্চা পোলাপান স্কুল ড্রেস পরেও হুন্ডা চালায় l নিয়ম করা উচিত বিশ বছরের নিচে কেউ হুন্ডা চালাতে পারবে না l
    Total Reply(0) Reply
  • Obidur Rahman Sagor ১৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:১৪ এএম says : 0
    বাবার ঘুষের টাকা, ছেলে আর কত ভালো হবে,,,,?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দেশজুড়

১৪ জানুয়ারি, ২০২৩
১১ আগস্ট, ২০১৬
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ