Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেলফিস

অয়েজুল হক | প্রকাশের সময় : ১৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০১ এএম

সকাল বেলা দাদা-দাদির চিৎকারে ঘুম ভাংগে আরিফের। শিরিনা বেগম চিৎকার করে বলেন,কাল না খুব ভেঙচি দিলে। এখন কী হবে? বলো এখন কী হবে?
আনোয়ার হোসেন বলেন,কী আর হবে তুমি সিরিয়ালের উপর উপুড় হয়ে পড়ে থেকো।
- কী! কী বললে তুমি?
শিরিনা বেগম কানে কম শোনেন বিধায় হিয়ারিং এড ব্যবহার করেন। আনোয়ার সাহেব এক টানে যন্ত্র খুলে ফেলে কষে কটা গালি দেন, বেয়াদব, বেহায়া, নির্লজ্জ মহিলা।
শিরিনা বেগম কিছু না শুনলেও সমানভাবে মুখ চালিয়ে যান, এখানে আর থাকবেন না। অসুস্থ পরিবেশ। ছেলেকে ফোন দেবেন। আজই যেন নিয়ে যায়। এই বিষধর সাপের সাথে আর না। শিরিনা বেগম মোবাইলে কথা বলার সময় লাউড স্পিকার ব্যবাহার করেন। চোখে কম দেখেন বলে টেলিভিশন দেখার সময় পাওয়ার ফুল চশমা পরিহিত অবস্থায় টেলিভিশনের খুব কাছে গিয়ে বসেন। বলা যায় ভাতের প্লেট সামনে নিয়ে বসার মতো টেলিভিশন সামনে করে বসেন। দাদার সাথে এই দাদি মানুষটার প্রধান বিরোধ হলো দাদা খেলা দেখতে মরিয়া আর তার দাদি সিরিয়াল বলতে পাগল।
আরিফ ঘুপ মেরে বিছানায় পড়ে থাকে। নতুন বছর।অনেক প্লান প্রোগাম আছে। একটু পরেই টেলিভিশনের আওয়াজ ভেসে আসে। ধুম তারা ধুম তারা না না........। বসে গেছেন মহিলা! বিশেষ কারনে বন্ধ থাকা এক দিনের মিস হওয়া সিরিয়াল গুলো দেখে শেষ করতে হবে। নিপা আরিফের একমাত্র ছোট বোন দাদির কাছে দোয়া চাইতে আসে। ‘দোয়া চাই পরীক্ষা চলছে। ’
শিরিনা বেগম সিরিয়ালের দিক থেকে চোখ ফেরান না। নিপার কথা তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করায় কিছুটা রাগান্বিত।দুদিনের মেয়ে তার কাছে পরীক্ষার কথা বলতে এসেছে! পরীক্ষায় পরীক্ষায় যার জীবন শেষ হতে চলেছে তার কাছে এসেছে পরীক্ষার কথা বলতে! মাসে চোদ্দো বার ডাক্তার আর ছাপ্পান্ন বার পরীক্ষা! টেস্ট। নিপার আবার কী হয়েছে কে জানে। কৃত্রিম দরদী গলায় বলেন,কী পরীক্ষা? কীসের টেস্ট!
- টেস্ট না ফাইনাল।
- এ বয়সে কী এমন রোগব্যাধি ধরলো? টেস্ট না একেবারে ফাইনাল!
- দোয়া করবে না বললেই তো হয়। কী সব আজেবাজে বকছো। নিপা রুক্ষ কন্ঠে কথা গুলো বলেই চলে যায়। আনোয়ার সাহেব বেশ কিছুক্ষণ বিড়ালের মতো সুযোগের অপেক্ষায় ওতপেতে ছিলেন। নিপা চলে যেতেই নড়বড়ে দাঁত গুলো কড়মড় করে বলেন, পুরাই পাগল। বুড়ো বয়সে ভীমরতিতে ধরেছে।
- কী আমি বুড়ো! আজ আর ছাড়ছি না।
- ছাড়বে কেন! ছাড়লে তো বেচেই যেতাম। বহুকাল অপেক্ষায় আছি।
- ও এই তোমার মনের খায়েশ...
টেকা মুশকিল। আরিফ ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। নাটক, সিনেমার একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। বুড়ো বুড়ির এ নাটকের সময় ও শেষ নেই। সকালের রাস্তা কিছুটা পরিচ্ছন্ন। বহুদিন সকালে হাটা হয়নি। প্রানভরে দম টেনে হাঁটতে শুরু করে।আরিফ ইদানিং যানযট আর সড়ক র্দূঘটনার ভয়ে হেঁটে চলা নীতি অবলম্বন করেছে। পাঁচ সাত কিলোমিটারের পথ হলে হেঁটেই চলে।কখনো গাড়ি যানযটে পড়লে গাড়ি থেকে নেমেও হাটা শুরু করে।আরিফের এ নীতি মানতে নারাজ সিমি।দু’জনের প্রেমের সর্ম্পক বহুদিনের, বছরের।দিন-রাত, কাল-মাস, বছর, যুগ পর্রিবতন হলেও তাদের ভালোবাসা আছে আগের মতোই।মাঝে মাঝে একটু আধটু কাদাছুড়াছুড়ি যে হয়না তা নয়।কয়েকদিন আগে গাড়ির ভেতর থেকে লাফ দিয়ে নামতে যাবার সময় খপ করে জামা টেনে ধরে সিমি।কোথায় যাচ্ছো?
-চলো নেমে যাই।
-কেন?
-গুলিস্তান, দেখেছো কি যানযট?
- হু, দেখেছি। এখন কী কড়া রোদের ভেতর দিয়ে হাটতে হবে?
বাইরে একঝাঁক মানুষ স্লোগান দেয়। মানিনা, মানিনা। কী মানেনা, কেন মানেনা- কে জানে! আসলে মানুষ সহজে কিছু মানতে চায়না। বিপক্ষে কিছু একটা হলেই না মানা মানুষ রাস্তায় নামবে। কোন যুগে রাস্তা কতো বড়ো অপরাধ করেছে আরিফের জানা নেই!
- না, হাঁটবো কেন? ভাংচুর শুরু হলে গাড়ির ভেতর থেকে চ্যাপ্টা হব। যা অবস্থা তাতে এক কিলোমিটার যেতে দিন পেরিয়ে যাবে।
সিমি কিছুটা ভয় পায়। ভাংচুর আর চ্যাপ্টা হবার ভয়। রাস্তায় নামতেই ডিম ছোড়াছুড়ির পাল্লায় পড়ে অবস্থা নাজেহাল। একটা ডিম সিমির মুখের ওপর এসে পড়ে।ফটাস করে ফেটেগলে সারামুখ একাকার হয়। সিমি ঘ্যানঘ্যান করে বলে, এই কী হলো!
- একদম কিচ্ছু হয়নি। যে শীত বাড়ি যেতে যেতে বরফ হয়ে লেপ্টে যাবে। ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ির চেয়ে ডিম ছুড়াছুড়ি ভালো। তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। এসো একটা সেলফি তুলি।
সিমি প্রচন্ড রাগে একা একা বাড়ির পথে পা বাড়ায়।
সিমির এই রাগ ঝড় বাতাসের মতো। এই প্রচন্ড রাগ, দশ মিনিট পর ফুরফুরে মেজাজের হাসি।
শীতের পড়ন্ত বিকালে পার্কে বসে বসে বাদাম চিবাচ্ছে আরিফ আর সিমি। সিমি গদগদ কন্ঠে বলে, কতো গুলো নতুন বছর পেরিয়ে গেল বলো তো?
-হু, এখন বিয়েটা করে ফেললেই হয়।
-না, না বিয়ে আপাতত না।
বিয়ের কথা উঠলেই না না বলে উঠবে সিমি। সিমির মুখ টিপে ধরতে ইচ্ছা করে। আপাতত সেটা করা যাবেনা। তীব্র শীত উপলক্ষে পার্কে অনুষ্ঠান চলছে।প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে।সাউন্ড বক্সে উচ্ছস্বরে গান হচ্ছে, কিচ মেরি ফটো তো খিচ মেরি ফটো...!
আরিফের চোখ আটকে যায়।হঠাৎ।নিপা! হ্যাঁ তার ছোটবোন নিপাই তো। টাক মতো একটা ছেলের সাথে ঢলাঢলি করে একের পর সেলফি তুলছে!
আরিফের সহ্য হয়না। মেয়েটার এস.এস.সি পরীক্ষা চলছে।কতোই বা বয়স! একটা বুড়ো ধাড়ির সাথে সেলফি!আরিফ নিপার দিকে ধাবিত হয়। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বলে, সেলফি ছোটাব- সেলফিস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন