Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আওয়ামী লীগকে উৎখাত এত সহজ নয়

পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসির হুকুম দেয়া হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর আজ গণঅবস্থান কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল, আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেল, এত সহজ নয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৬ মার্চ গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের একটি কারাগারে নিয়ে বন্দি করে রেখেছিল। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসির হুকুম দেওয়া হয়েছিল। এমনকি জেলাখানার পাশে কবরও তৈরি করা হয়েছিল। জাতির পিতা ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান তিনি। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু যে কথাগুলো বলেছিলেন পরে একে একে সব করেছিলেন তিনি। মাত্র ৯ মাসে সংবিধান দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের সংবিধান দিতে ১১ বছর লেগেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বিদেশি ব্যক্তি ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করার জন্য ইন্দিরা গান্ধী দেশে দেশে ধরনা দিয়েছিলেন। বিভিন্ন দেশের চাপেই শেষ পর্যন্ত ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম। কিন্তু আমাদের বিজয় অধরা ছিল। ১০ জানুয়ারি যখন বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে ফিরে আসেন, তখন যেন আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণ হলো। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আগে জনগণের কাছে যান। পরিবারের কাছে পরে গিয়েছিলেন। তিনি যখনই সুযোগ পেয়েছেন, তখনই এ দেশের মানুষের জন্য কিছু না কিছু করে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শিখেছি বাবার কাছ থেকে। দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়াই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। যখনই সুযোগ পেয়েছেন বাঙালির জন্য কিছু করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন এই ঘুনে ধরা সমাজ ভেঙে দিয়ে নতুন সমাজ গড়তে। চেয়েছিলেন ব্রিটিশ আমলে গড়ে তোলা প্রশাসনিক ব্যবস্থা, পাকিস্তানি শাসন ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে তৃণমূলের মানুষকে শক্তিশালী করা। গ্রামের মানুষের কাছে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, তাদের অথনৈতিক অধিকার, তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধিকার পৌঁছে দেওয়া ছিল জাতির পিতার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য সামনে নিয়েই তিনি দেশকে গড়ে তুলছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রবৃদ্ধি ৯ ভাগের ওপরে বঙ্গবন্ধুর আমলেই একবার উঠেছিল। এরপর আর কেউ পারেনি।

শেখ হাসিনা বলেন, খুব একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল ১০ তারিখ (১০ ডিসেম্বর) নিয়ে। এত ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ১০ তারিখ চলে গেল গোলাপবাগে। সেটা আমি বলতে চাই না। সেখানে যেতে হলো। এখন আবার বলে ১১ তারিখ থেকে তারা আন্দোলন করবে। আবার সাথে জুটে গেছে অতি বাম, অতি ডান। সব অতিরা এক জায়গায় হয়ে, আতি-পাতি নেতা হয়ে, তারা নাকি একেবারে ক্ষমতা থেকে আমাদের উৎখাত করবে। আওয়ামী লীগকে উৎখাত সহজ নয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা আমি বলে দিতে চাই। আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। আর আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আওয়ামী লীগকে ধাক্কা দিল, আর আওয়ামী লীগ পড়ে গেল, এত সহজ নয়।

তিনি বলেন, অবৈধ ক্ষমতাকে বা কেউ যদি ভোট চুরি করে তাকে ক্ষমতা থেকে হটানো সেটা আওয়ামী লীগ পারে, এটা আমরা প্রমাণ করেছি। এটা আমরা প্রমাণ করেছি বার বার। আমরা গণতন্ত্রের চর্চা নিজের দলে করি। দেশেও গণতন্ত্র চর্চা করি। বর্তমান সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে আজ জানুয়ারি বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। ২০০৮ সালের নির্বাচনে স্বল্প আসনে পাওয়া বিএনপির ভরাডুবি এবং আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা উল্লেখ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর জনগণের স্বার্থে কাজ করে, জনগণের কল্যাণে কাজ করে, আর্থসামাজিক উন্নতি করে জনগণের কল্যাণ সাধন করেছি বলেই আজ জনগণ ভোট দেয়। কাজেই আওয়ামী লীগের এ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ইন শা আল্লাহ অব্যাহত থাকবে। কিছু ভাড়াটে লোক সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার অধীনে দুই দুইটি নির্বাচন। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন আর ২০০৬ সালের জানুয়ারির নির্বাচন। দুটি নির্বাচনই তো বাতিল করতে বাধ্য হয়। কারণ জনগণের ভোট চুরি করার ফলে জনগণই তাদের বিতাড়িত করে। বারবার যারা জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত, বিতাড়িত, তারা গণতন্ত্রটা চর্চা করলো কবে? তিনি বলেন, তাদের নিজেদেরই গণতন্ত্র নেই। তাদের দলের কোনো ঠিকানা নেই। তাদের কিছু ভাড়াটে লোক আছে, দেশে-বিদেশে বসে সোশ্যাল মিডিয়াতে সারাদিন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাবে, আর মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে।

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আলী আরাফাত, তারানা হালিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ভিসি ফারজানা ইসলাম, অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ