মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে এবার চীনের সঙ্গে সামরিক চুক্তির দ্বারপ্রান্তে ফিলিপাইন। বিগত গত কয়েক সপ্তাহের তৎপরতায় চীনের সঙ্গে ফিলিপাইনের নতুন বন্ধুত্বের রূপরেখাগুলো পরিষ্কার হয়ে গেছে। কেননা, দেশ দুটির মধ্যে নতুন অর্থনৈতিক ও সামরিক চুক্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। গত ২১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, প্রতিবেশী দেশ ফিলিপাইনকে সহজ শর্তে অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে চীন। দেশটি ফিলিপাইনকে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া ফিলিপাইনকে সহজ শর্তে ৫০ কোটি ডলারের ঋণপ্রস্তাবও দিয়েছে। দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে এসব প্রস্তাব দেয়া হয়। ম্যানিলায় প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চীনের রাষ্ট্রদূত এই প্রস্তাব দিয়েছেন। ঋণের অর্থ ফিলিপাইনকে ২৫ বছর মেয়াদে পরিশোধ করতে হবে বলেও খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। চীনা অর্থ ও অস্ত্র ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তেকে অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করবে। খবরে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে দুতার্তের বেইজিং সফরের সময়ই এগুলো নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছিল। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, দৃশ্যত চীন ফিলিপাইনকে সাদরে গ্রহণ করলেও তারাও পা ফেলছে বেশ সাবধানতার সঙ্গে। এই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির প্রচলিত সামরিক সহযোগিতাপূর্ণ কর্মকা-ও সীমিত করে আনা হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলতি বছর জুনে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই প্রচলিত মিত্রবলয় থেকে বেরিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তে। অথচ কিছুদিন আগেও দেশটির অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ইস্যুতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। যদিও সেখানকার সেনাঘাঁটিগুলোতে এখনো অবস্থান করছে মার্কিন সেনারা, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মৈত্রী রূপান্তর হচ্ছে বৈরিতায়। ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডেলফিন লরেনজানা বলেন, চীন অস্ত্রের যে তালিকা দিয়েছে, তাতে দ্রুতগামী নৌকা, ক্ষুদ্র অস্ত্র এবং অন্ধকারে অবলোকনোপযোগী নাইট ভিশন গগলস (চশমা) রয়েছে। চলতি ডিসেম্বরের শেষদিকে এ সংক্রান্ত চুক্তি হবে এবং আগামী বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের মধ্যে এসব অস্ত্র ফিলিপাইনে পৌঁছবে। ম্যানিলায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাও জিয়ানহুয়া এমন প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি জানান, খুব শিগগিরই ফিলিপাইন থেকে একটি বিশেষ টেকনিক্যাল টিম বেইজিংয়ে পাঠানো হবে। চুক্তিটি চলতি বছরের মধ্যেই সম্পাদিত হতে যাচ্ছে। ফিলিপাইন সরকার আশা করছে, ২০১৭ সালের শুরুতেই অস্ত্রগুলো তাদের হাতে এসে পৌঁছবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক চুক্তির আওতায় ২০১৬ সালে ১২ কোটি ডলার সহায়তা পেয়েছে ফিলিপাইন। এর আগে ২০১৫ সালে এই সহায়তার পরিমাণ ছিল পাঁচ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র দৃশ্যত দেশটির সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে অর্থসাহায্য বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছিল। তবে দুতার্তে প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের নিম্ন হারের অর্থসহায়তার জন্য অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন। কিন্তু দুতার্তে ক্ষমতায় আসার আগে চীন এবং ফিলিপাইনের সম্পর্কে তীব্র টানাপড়েন চলেছে। দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জের ওপর সার্বভৌমত্ব নিয়ে তুমুল বিরোধিতা ছিল এই দুই দেশের মধ্যে। কিন্তু দুতার্তের মাদকবিরোধী অভিযানকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অভিযোগ করার পরই বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পথ বেছে নেয় ম্যানিলা। তখন থেকেই ফিলিপাইনের এই নেতা প্রকাশ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের তীব্র সমালোচনা শুরু করেন। চলতি বছর জুলাইয়ে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুতার্তে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত ছয় হাজার মানুষ তার মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছে। তাদের মধ্য প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নিহত হয়েছে পুলিশি অভিযানে। বাকিদের মোটরসাইকেল আরোহী ছদ্মবেশীরা হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ফিলিপাইনের কাছে অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব দেয় আরেক বিশ্বপরাশক্তি রাশিয়াও। মার্কিন সরকার ফিলিপাইনের কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করার পর ভøাদিমির পুতিনও এমন প্রস্তাব দিয়েছেন। এমনকি, একটি কিনলে একটি ফ্রিÑ এমন লোভনীয় প্রস্তাবও দেয়া হয় দুতার্তকে। তখন পেরুতে এক সম্মেলনে পুতিনের সঙ্গে বৈঠককালে দুতার্ত অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটন ম্যানিলার সঙ্গে দাম্ভিক আচরণ করছে। অক্টোবরে মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির শীর্ষস্থানীয় সদস্য বেন কার্ডিন ফিলিপাইনের কাছে অস্ত্র বিক্রির বিরোধিতা করলে ওয়াশিংটন-ম্যানিলার মধ্যে অস্ত্র বিক্রির চুক্তি স্থগিত হয়ে যায়। দ্য ডিপ্লোম্যাট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।