Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইরানের বিপ্লবী গার্ডকে এবার সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করবে ব্রিটেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫৫ পিএম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি 'সন্ত্রাসী সংগঠন' ঘোষণা করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। এধরনের ঘোষণার পর এই সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকা বা তাদের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা যুক্তরাজ্যে ফৌজদারি অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।

ব্রিটিশ দৈনিক দি ডেইলি টেলিগ্রাফে এ মর্মে একটি খবর বেরুনোর পর লন্ডনে সরকারি সূত্রগুলো অবশ্য বলেছে, এ ঘোষণা খুব শিগগির আসছে না এবং এর অনেক খুঁটিনাটি দিক এখনো পরীক্ষা করে দেখা বাকি রয়েছে। তবে সূত্রগুলো বলছে “এটা ব্যাপক অর্থে সঠিক” খবর যে ব্রিটিশ সরকার আইজিআরসিকে নিষিদ্ধ করতে চাইছে।

এখন থেকে ৪০ বছরেরও বেশি আগে ইরানে বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (সিপাহ-ই পাসদারান) প্রতিষ্ঠিত হয়। এর লক্ষ্য ছিল ইরানের ইসলামি বিপ্লবকে সুরক্ষিত করা। এ বাহিনীর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা ১,৯০,০০০ এবং তাদের নিজস্ব স্থল, বিমান ও নৌবাহিনী আছে। তা ছাড়া ইরানের কৌশলগত অস্ত্রসমূহেরও দেখাশোনা করে তারাই। যুক্তরাষ্ট্রের মতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানের হাতেই সবচেয়ে বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে। এ ছাড়া বাসিজ প্রতিরোধ বাহিনী নামের আধাসামরিক বাহিনীকেও নিয়ন্ত্রণ করে আইজিআরসি – যারা ইরানের ভেতরে ভিন্নমত দমনের কাজে সহায়তা করে।

ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এখন মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী আধাসামরিক বাহিনীগুলোর অন্যতম। সংগঠনটির সামরিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা বিপুল এবং তারা তাদের এই বিপুল তহবিলকে ব্যবহার করে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের মিত্র দেশগুলোর সরকার ও জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দেবার কাজে। আইজিআরসির একটি বৈদেশিক কার্যক্রম বিভাগ আছে যারা নাম কুদস (জেরুসালেম) বাহিনী। ইরান সরকারের কথায়, এ বাহিনীকে সেদেশের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করা হয়।

ইরান স্বীকার করেছে যে, সিরিয়া ও ইরাকে কুদস বাহিনী ভূমিকা পালন করছে। সিরিয়ায় তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের অনুগত বাহিনীর পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে এবং তাদের পাশে যুদ্ধরত শিয়া মুসলিম মিলিশিয়াদের অস্ত্র দিচ্ছে। আর ইরাকে তারা শিয়া-প্রধান আধাসামরিক বাহিনীকে সমর্থন দিয়েছে যারা ইসলামিক স্টেট বাহিনীকে পরাজিত করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এ সংঘাতগুলোর সময় কুদস ফোর্সের কমাণ্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ইরানে একজন জাতীয় বীরের মর্যাদা পান – যিনি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এক মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৯ সালে আইজিআরসিকে একটি “বিদেশী সন্ত্রাসী সংগঠন” বলে ঘোষণা করেন। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন বাহিনীকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলে ঘোষণা করে। ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থায় এ খবর প্রচার করা হয়।

ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গত বছর ব্রিটিশ নাগরিক বা ব্রিটেনে থাকেন এমন কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১০টি পরিকল্পনার কথা উদ্ধৃত করে বলেছে যে- ইরান যুক্তরাজ্যের প্রতি সরাসরি হুমকির কারণ। গত নভেম্বর মাসে প্রকাশিত কিছু রিপোর্টে বলা হয়, একটি ইরানি ঘাতক দল লন্ডনে ব্রিটিশ ইরানি সাংবাদিকদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করছে।

গত সপ্তাহেই আইজিআরসি ইরানে এমন সাত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে যাদের সাথে যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক আছে। ইরান জুড়ে গত কয়েক মাসে যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে তার সাথে সম্পর্কিত কারণে এদের গ্রেফতার করা হয়। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি গত মাসে ঘোষণা করেছেন যে পুরো আইজিআরসি সংগঠনটির ওপরই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেবার জন্য সরকারের ওপর পার্লামেন্টের চাপ বাড়ছিল।

ব্রিটেনে ২০০০ সালের সন্ত্রাসবিষয়ক আইনের আওতায় এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকার যে শুধু কোন সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডই পর্যালোচনা করবে তা নয়- যুক্তরাজ্য এবং বিদেশে থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদের প্রতি সুনির্দিষ্টভাবে কী হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে তাও বিবেচনা করা হয়। একটি বিষয় হলো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সীমিত করার যে আন্তর্জাতিক চুক্তিটি এখন অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে – তা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আলোচনা আবার শুরু করার চেষ্টা চলছে। এ সময় যদি আইজিআরসিকে নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে এ প্রক্রিয়াটি চালু করা আরো কঠিন হয়ে পড়বে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইজিআরসিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার পাশাপাশি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান – যার পর থেকে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। সূত্র: বিবিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রিটেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ