পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থনৈতিক সংকটে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা হলেও ফাঁকফোকর বের করে চাকরিজীবনের শেষ সময়ে সেই সুযোগ নিতে দৌড়াঝাঁপ করছেন ৯ সচিব। প্রতিজন ১৫ লাখ করে মোট ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে চলতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন রাখা হয়েছে। অথচ ৯ জনের ছয়জনই এপ্রিল থেকে নভেম্বর ও অন্য তিনজন ২০২৪ সালে অবসরে যাবেন। ফলে তাদের এই প্রশিক্ষণ দেশের কাজে লাগবে না। এ নিয়ে প্রশাসনে কানাঘুষা হচ্ছে।
তাদের হার্ভার্ড দর্শন হবে অবশ্য, তবে গচ্চা যাবে সরকারি অর্থ। গত বছর নভেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশে রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর স্থগিত করে সরকার। নিজের টাকায়ও তারা বিদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন না। তবে আদেশে বলা হয়, শর্তসাপেক্ষে সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। এই সুযোগই নিতে চাচ্ছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৯ সচিব। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি আদায়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তারা। যুক্তি দেখাচ্ছেন, জনপ্রশাসনের উন্নয়নের জন্য এ ধরনের প্রশিক্ষণ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডলার সংকটে এলসি খুলতে ব্যবসায়ীদের বিড়ম্বনা হচ্ছে। আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রা, বিশেষ করে ডলারের রিজার্ভ ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি ব্যয় কমাতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর। অথচ ডলার সংকটের এই সময়ে তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণ কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, সুশাসন নিশ্চিতে পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জনপ্রশাসনের উন্নয়নে বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের জ্ঞান, যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। বিদেশে স্নাতকোত্তর, পিএইচডি ফেলোশিপ ও স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ খুবই দরকার। বিদেশে প্রশিক্ষণে যেতে চেষ্টা চালানো ৯ জনের মধ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর অবসরে যাবেন আগামী ২৯ এপ্রিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম ৩০ মে, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আবদুস সালাম ২৬ সেপ্টেম্বর, ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) আবু বকর ছিদ্দীক ৩১ অক্টোবর, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এহছানে এলাহী ২৫ নভেম্বর, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব কামাল হোসেন ২৯ নভেম্বর অবসরে যাবেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ ২০২৪ সালের মধ্যেই অবসরে যাবেন। হাতে আসা নথিপত্র অনুযায়ী এই ৯ কর্মকর্তার জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় চলতি জানুয়ারি, আগামী মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুলাই মাসে প্রশিক্ষণের তারিখ জানিয়েছে। এর মধ্যে যেকোনো সময় প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন তারা। তবে জুলাইয়ের আগেই চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে দুজন সচিবের। তাদের জন্য এই প্রশিক্ষণ সরকারি টাকায় বিদেশে আনন্দ ভ্রমণ ছাড়া আর কিছু নয়।
চারজন সচিব প্রশিক্ষণ নেওয়ার চার মাসের মধ্যে অবসরে যাবেন। বাকি তিনজন অবসরে যাবেন এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে। সাত দিনের এই প্রশিক্ষণে প্রতিজন সিনিয়র সচিব ও সচিবদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এতে ৯ জনের জন্য মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন বলেন, আগামী ছয় মাস বা এক বছর পর যে কর্মকর্তারা অবসরে যাবেন, তাদের জন্য এই প্রশিক্ষণ প্রযোজ্য হবে কি না, তা নিয়ে সরকার চিন্তা করছে। প্রশিক্ষণ থেকে কী পাওয়া যাবে, সেটাও দেখার বিষয়। যাদের চাকরি অন্তত দুই বছর আছে, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, অবসরের আগে আগে প্রশিক্ষণে যাওয়ার ঘটনা পূর্বে থাকলেও এবার সেটা হবে না। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, যে ৯ সচিব বিদেশে প্রশিক্ষণে যেতে চাচ্ছেন, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, বিস্তারিত জানা নেই। জনপ্রশাসনকে শক্তিশালী করতে সরকারেরই প্রকল্প রয়েছে। বিসিএস ক্যাডারদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ-দ্বিতীয় পর্যায় (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় ২০২৫ সাল পর্যন্ত। এর আওতায় ৯ জন সচিবকে মনোনীত করা হয়। তবে চাকরির মেয়াদ শেষের দিকে থাকায় সুযোগটি নিতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তারা।
সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সভায় বিদেশে প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৯ জন সচিব যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রিফ্রেশার কোর্সে যাবেন বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এটি অনুমোদনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। সরকারি অর্থে বিদেশ ভ্রমণে কঠোরতা থাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সেটি ফেরত পাঠানো হয়। এরপরই শুরু হয় ভিন্ন পথে তোড়জোড়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নেওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকেও অর্থ মন্ত্রণালয়ে বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। সম্মতি পেলেই প্রশিক্ষণের শেষ সুযোগটি নিতে পারবেন তারা- এমনটি শোনা যাচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় গত দুই অর্থবছরে (২০২০-২১ ও ২০২১-২২) রিফ্রেশার কোর্সের সংখ্যা ছিল ৩০টি। এর আওতায় ৩০ জন সিনিয়র সচিব ও সচিবকে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত করা হয়। এর মধ্যে ১৭ জন যুক্তরাষ্ট্রে রিফ্রেশার কোর্স সম্পন্ন করেছেন। বাকি ১৩ জন নানা কারণে ওই প্রশিক্ষণে যেতে পারেননি। এখন ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। বাকি চারজন কর্মকর্তা পারিবারিক ও প্রশাসনিক কারণে প্রশিক্ষণে অংশ নেবেন না বলে প্রকল্প দপ্তরকে জানিয়েছেন। পাঁচ বছর মেয়াদি রিফ্রেশার প্রকল্পটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। তবে করোনা মহামারির কারণে মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি আরেকটি ধাক্কা খায়, যার প্রভাব বাংলাদেশেও রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সরকারি টাকায় বিদেশে প্রশিক্ষণ বন্ধ করা হয়। সেই সঙ্গে প্রকল্পের সব কর্মসূচি স্থগিত রাখা হয়। তবে সবকিছু পাশ কাটিয়ে ৯ সচিবকে বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠানোর জন্য প্রস্তাব করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।