পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অব্যাহত দখল ও দূষণে মৃতপ্রায় নদী বুড়িগঙ্গা রক্ষায় গত দুই দশক ধরে নানাবিধ সরকারী উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। শুধু বুড়িগঙ্গাই নয়, ঢাকার চারপাশের নদীগুলো পুনরুদ্ধার ও রক্ষায় নাগরিক সমাজ ও পরিবেশবাদীদের দাবী এবং উচ্চাদালতের নির্দেশনা অনুসারে এসব উদ্যোগের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও এর বাস্তব ফলাফল বলতে গেলে শূন্য। হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ ও সীমানা পিলার স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়নের পর দেখা গেছে ভুল স্থানে সীমানা পিলার স্থাপনের ফলে প্রকল্পের মূল লক্ষ্য এবং শতকোটি টাকার শুধু অপচয় হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। একদিকে ভুল সীমানায় পিলার বসানো হচ্ছে, অন্যদিকে প্রভাবশালী মহল নদীর তীরগুলো ভরাট, দখল ও দূষণের বাণিজ্যিক তৎপরতা প্রকাশ্যই অব্যাহত রেখেছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মহল আদালতের নির্দেশনা মান্য করার বাধ্যবাধকতা পূরণে অথবা জনদাবী পূরণে লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। বুড়িগঙ্গাকে মারাত্মক রাসায়নিক দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে দেড় দশক আগে হাজারিবাগের টেনারি স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়। সাভারে নির্ধারিত অত্যাধুনিক টেনারিশিল্প এলাকায় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পরও হাজারিবাগের টেনারিশিল্প এখনো বুড়িগঙ্গা দূষণ করে চলেছে।
বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ ও ধলেশ্বরী নদী পুনরুদ্ধার, বর্জ্য অপসারণ এবং খাল খনন করে যমুনা থেকে পানি এনে প্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও বুড়িগঙ্গার যে অংশটি ইতিমধ্যে দখলের শিকার হয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে তা পুনরুদ্ধারের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। দীর্ঘ বিলম্বের পর গতকাল কামরাঙ্গিরচরে আদি বুড়িগঙ্গার বেদখল হওয়া অংশ পুনরুদ্ধার ও বর্জ্য অপসারণে অভিযান শুরু করছে সরকার। ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং বিআইডাব্লিউটিএ এই যৌথ অভিযান পরিচালনা করছে। নৌ সচিব ও নদীরক্ষা কমিশন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান কামরাঙ্গির চরের ইসলামবাগ এলাকার টাংকি ঘাট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন বলে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়। দীর্ঘ কয়েক দশকের অব্যাহত দখল ও দূষণে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া আদি বুড়িগঙ্গা পুনরুদ্ধারের এই প্রকল্পটি অনেক দেরিতে হলেও নদীরক্ষা ও পরিবেশ সচেতন জনসাধারণের মধ্যে একটি নতুন প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে। সাধারণত, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল নদী দখল ও দূষণের সাথে জড়িত থাকায় নদী উদ্ধার ও দূষণ রোধের সরকারী প্রকল্পগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রত্যাশিত সাফল্য পায়না। আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারের এই অভিযান যথার্থরূপে সফল হবে এবং অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর উদ্ধারকৃত নদীর পাড় রক্ষা ও স্থায়ীভাবে সংরক্ষণের যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।
একটি আন্তর্জাতিক জরিপ রিপোর্টে বিশ্বের নিকৃষ্টতম দূষিত নদীর তালিকায় আমাদের বুড়িগঙ্গাও আছে। পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায় থাকলেও বিভিন্ন ধরনের ভারী রাসায়নিক পদার্থের মাত্রা অতি উচ্চ। বুড়িগঙ্গার পানি এমনই দূষিত যে তা’ এখন শোধন করেও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বুড়িগঙ্গার পানির স্বাভাবিক উপযোগিতা হারানোর পাশাপাশি মাছসহ জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ হারিয়ে নদীটি দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত নহরে পরিণত হয়েছে। হারিয়েছে পানির স্বাভাবিক গুণাগুণ, স্বচ্ছতা ও রং। নদীর তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও নদী তীরে স্থাপিত কলকারখানায় ইটিপি স্থাপনে আইনগত বাধ্যবাধকতা বাস্তবায়ন করা হয়নি। হাজারিবাগের টেনারি ছাড়াও প্রতিদিন শত শত টন নাগরিক বর্জ্যসহ ছোট ছোট শিল্প-কারখানার তরল রাসায়নিক বর্জ্যরে হাজার হাজার চোরাই পাইপলাইন বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার চার নদীকে সরাসরি দূষিত করছে। শুধু নদীর সীমানা নির্ধারণ ও ভৌত অবকাঠামো উচ্ছেদ করলেই নদী রক্ষা হয়না। নদীর পানিকে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে হবে। পরিবেশগত ছাড়পত্র এবং বর্জ্যব্যবস্থাপনা ছাড়া কোন শিল্পপ্রতিষ্ঠান চলতে দেয়া সমীচীন নয়। বিশেষত, বুড়িগঙ্গাসহ চার নদীর দূষণ রোধে সরকার ইতিপূর্বে যে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তার যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। বুড়িগঙ্গাসহ চার নদীর দূষণ রোধ ও দখল পুনরুদ্ধারে অনেক সরকারী উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর চলতি বছর নৌ বাহিনীর অধীনে যে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে তার সাফল্য-ব্যর্থতার দিকে তাকিয়ে আছে মানুষ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশকে পরিবেশবান্ধব, বাসযোগ্য ও নিরাপদ রাখতে নদী রক্ষাকে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধারের অভিযান থেকে নদী উদ্ধার ও রক্ষার নতুন মাইলফলক সূচিত হোক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।