শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
আলিম পুর হলো একটি ছোটো বাজার।তার এলাকাটি ছোট-বড় আটটি গ্রাম নিয়ে গঠিত। প্রত্যেক গ্রামে দুই তিনটি করে চায়ের দোকান থাকলেও অনেক মানুষ সকাল ও সন্ধ্যায় বেলা আলিমপুর বাজারে চা খেতে আসে। চায়ের দোকানে রাজনৈতিক ও সামাজিক নানান ধরনের বিষয়ের উপর আলোচনা সমালোচনা হয়। গ্রামের মানুষের বিনোদনের জায়গা হল চায়ের দোকান। চায়ের দোকানে বসে গল্প গুজব করতে করতে অর্ধেক রাত অতিবাহিত করে অনেক মানুষ। চায়ের দোকানে বসলে জানতে পারা যায় এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি।
আজ প্রত্যেকটি চায়ের দোকানে একটি বিষয়ের উপর আলোচনা চলছে। তাহলো কাজিরুল এলাকায় প্রথম ব্যাক্তি যে সরকারি অফিসার নিয়োগের পরীক্ষায় সফল হয়েছে। তার পোষ্টিং হয়ছে পাশের জেলায়।কয়েকদিনের মধ্যেই সে সরকারি অফিসার হিসাবে নিযুক্ত হবে। অধিকাংশ মানুষ আনন্দে উৎফুল্লিত যেন তারা আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে।এবার বুঝি তাদের সকল সমস্যার সমাধান হবে। আলিমপুর এলাকার প্রতিটি গ্রাম শহরের মত চকচকে হবে। তবে অনেকের আশঙ্কা এলাকার অন্যান্য চাকরি প্রাপ্ত ব্যক্তিদের মত সেও গ্রাম থেকে চলে যাবে। বসবাস করবে শহরে। ফলে কে অফিসার হল আর না হল তাতে গ্রামের লোকের কি এসে যায়।
আসলে এলাকার যে সব ছেলেরা চাকুরি পাচ্ছে তারা বেশিরভাগ শহরে বাড়ি ভাড়া করে থাকছে। যেন তাদের কাছে সমাজের মানুষের কোনো দাবি নেই। গ্রামীণ সমাজের অগ্রগতির জন্য তারা কোন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে চাইনা।তাই গ্রামের মানুষ ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষেরা পাকা রাস্তা থেকে বঞ্চিত অথবা পাকা রাস্তা হলেও সংস্কারের অভাবে কাঁচা রাস্তার থেকেও বিপজ্জনক হয়। প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা এসব দুরবস্থা থেকে গ্রামকে মুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা না করে বরং নিজেকে বাঁচানোর জন্য শহরের রঙিন পরিবেশে জীবনযাপন করতে ভালোবাসে। তাছাড়াও যে কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তি গ্রামে রয়েছেন তারা নিজের কথা ছাড়া আর অন্যের কথা ভাবেন না। গ্রামের মানুষেরা যে সব নক্ষত্রেরও ওপর নির্ভর করে গ্রামকে আলোকিত করার জন্য তাকিয়ে থাকে সেইসব নক্ষত্রগুলো নিজেকেই লুকিয়ে রাখে দূরের কোন উন্নত জায়গায়। তাছাড়া যে সকল নেতা সমাজ সেবা করার জন্য নিজেদের নিয়োজিত করেছেন তারা তাদের নিজেদের গাড়ি বাড়ি সম্পত্তির বৃদ্ধির জন্য এমনভাবে মত্ত থাকেন যে নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে ভুলে যান। তাদের চোখের সামনে যতই অঘটন ঘটুন না কেন তারা দেখতে পান না। স্বার্থপরতার চাদরে ঘিরে রেখেছে সামনের সকল কিছু।
ঘড়ির কাটার সমদ্রুতির জন্য ঋতু বৈচিত্রের নানান ছবি উদ্ভাসিত হতে থাকে সমাজের দর্পণে। তবে সূর্যের আকার আকৃতির কোন রকম পরিবর্তন ঘটে না। সূর্য পৃথিবীকে আলোকিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সারাক্ষণ। ঠিক সেরকমই সকলের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করার জন্য সূর্য হয়ে সমাজের আকাশের বুকে জ্বলে উঠেছে কাজিরুল। সূর্য কোন ধর্মীয় চেতনার নয়, মানবিকতার আলোক। সে মনে করে একজন গ্রামের মানুষ হিসাবে গ্রামের অগ্রগতির জন্য কিছু না কিছু অবদান রাখতে হবেই।তাই সে অফিস হওয়ার পর থেকে সে যে কয়দিন ছুটি পায় সেই দিন গুলিতে গ্রামের মানুষের জন্য ছুটে আসে। গ্রাম থেকে না পালিয়ে নিজের বাড়িতে রয়ে গেছে। সকল শ্রেণীর মানুষের সাথে খুব সহজেই মিশে যায়।অচেনা কোন মানুষ হঠাৎ তাকে দেখলে বুঝার উপায় নাই যে সে এত বড় একজন অফিসার।আসলে সে মনে করে মানুষের মধ্যে বৈষম্য খুঁজে বেড়ানো ঠিক নয়।তাই সে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়। নানারকম পরামর্শ দিয়ে অনেক এর সমস্যা সমাধান করার প্রচেষ্টা চালায়। কখনো কখনো নিজে সরাসরি যোগাযোগ করে অনেকের অনেকদিনের আটকে থাকা কাজ খুব সহজেই সমাধান করে দিয়েছে।তাই সে খুব কম সময়ে মধ্যে অধিকাংশ মানুষের বুকের ভেতর একটা জায়গা করে নিয়েছে।ভেঙেছে অনেকের ভুল।সকল মানুষ একই রকম নয়।এলাকার প্রায় সবাই মনে করে কাজিরুলের মত অন্যান্যরাও সমাজের অগ্রগতিতে কথা ভাবলে গ্রামটি আলোর মত চকচকে হয়ো থাকতো।
কাজিরুলের পরিবারের সাথে একরামুলের পরিবারের পারস্পারিক শত্রুতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আছে অনেক বছর আগে থেকেই।কি কারনে তাদের শত্রুতা কেউ জানে না।কাজিরুলের সাথে একরামুলের কোনদিন সামান্যতম ঝগড়া হয়নি।একরামুল কাজিরুলের সমবয়সী। কাজিরুল এলাকার সকল মানুষের মত একরামুলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলেও সে তার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাই না।যেন তারা একই মুদ্রার দুই পিঠ।যতই চেষ্টা করো তাকে সাথে রাখা যাবে না।তাই একরামুল কাজিরুলের নাম শুনলে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে।সে যেনো কজিরুলের বিরোধিতা করার জন্যই জন্মেছে।তবে সে একরামুলের এরকম ব্যবহারের জন্য সামান্যতম কষ্ট অনুভব করে না। বন্ধুত্ব স্থাপন করার জন্য সার্বিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।সে মনে করেছে পারিবারিক শত্রুতার অবসান ঘটানোর জন্য যে কোন প্রকার পদক্ষেপ নিতে ব্যস্ত।এলাকার সকল মানুষকে এক সুতোয় বেধে ফেলতে চাই।
হঠাৎ একবার বিশাল বড় বন্যা সৃষ্টি হলে এলাকার প্রায় সকল কাঁচা বাড়ি পড়তে শুরু করলে ভয়ে সবাই বাড়ি ছেড়ে রেল লাইনের ধরে আশ্রয় নিলো।আর কয়েক দিনের মধ্যে খাদ্যাভাব দেখা দিলো।আশঙ্কার কালো মেঘ জমতে শুরু করল অধিকাংশ মানুষের হৃদয়ে।সরকারি কোন ত্রাণ এসে পৌঁছায় না।এমন সময় সকল অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কাজিরুলের হৃদয়ে কষ্টের বিশাল অনুভূতি সৃষ্টি হলো।সে নিজে থেকে বিভিন্ন বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে।তাদের সহযোগিতায় এলাকার অনেক মানুষের ঘরে ঘরে মুড়ি চিড়া গুড় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।একরামুলের তাবুতেও পৌঁছে দেয় এক বস্তা মুড়ি গুড় ও চিড়া। একরামুল ক্ষুধার্থ ছেলেমেয়েরা মুড়ি খেতে খেতে চিৎকার করে বলে এরকম অফিসার যেনো আরো অনেক জন্মায়।একরামুলের মনে মনে বলছে - কাজিরুল একজন বিশাল মনের মানুষ।তাকে এত অপমান করার পরেও সে সব কিছু ভুলে ত্রাণ সমগ্রী দিয়ে গেলো।
তার হৃদয়াকাসে জমে থাকা আতঙ্ক গুলো কিছুক্ষণের মত অপসারিত হল।তবে তার হৃদয়ে অনুশোচনার ঝড় সৃষ্টি হল।নিজের ভুল বুঝতে পারল।তার মনে হলো এখনও ভালো মানুষ আছে বলে পৃথিবী টিকে আছে।
সে মনে মনে তার ছেলেদের তালমিলিয়ে মনে মনে বলছে - কাজিরুলের মত ছেলে যেন প্রতিগ্রামে গ্রামে জন্মায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।