পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আজ। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐতিহাসিক প্রয়োজনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠার পর এর আগে দলটির ২১টি সম্মেলন হয়েছে। এছাড়াও দলটির ৭টি বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২২তম সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি এর মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। এ বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের সেøাগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা দলটির সম্মেলন নিয়ে সর্বোত্রই আলোচনা এবারের সম্মেলনে কী চমক থাকছে! দলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কী কোনো পরিবর্তন আসছে? ৪১ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনা এবারও সভাপতি থাকছেন এটা নিশ্চিত। সাধারণ সম্পাদক পদে কী পরিবর্তন আসছে? বিরোধীদল আন্দোলনে এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তনে ঝুঁকি নেয়ার সম্ভাবনা কম। বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সভাপতি পদে বহাল রেখে সম্মেলনের মধ্যদিয়ে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন নেতৃত্বের বিন্যাস করা হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ অন্য পদগুলোতে কী পুরনো নেতৃত্বই বহাল থাকছে, নাকি পরিবর্তন হয়ে আসছে নতুন মুখ- এ নিয়ে কৌতূহল এখন নেতাকর্মীদের। শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, কিংবা রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি সরাসরি রাজনীতিতে আনা হচ্ছে? নাকি নিয়ম রক্ষার সাদামাটা সম্মেলন হবে! আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, শেখ হাসিনার সহযাত্রী হয়ে যারাই নৌকার হাল ধরবেন, তাদের চ্যালেঞ্চ গ্রহণ করে আগামী দিনে বিএনপির ‘রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রুপরেখা’র আন্দোলন মোকাবিলা করে দলকে আবার বিজয়ী অবস্থানে নিয়ে যেতে হবে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসা যাবেন না এ বাস্তবতা মাথায় রেখেই দলের জাতীয় সম্মেলনে থেকেই ২০২৪ সালের নির্বাচনী দিকনির্দেশনা দেয়া হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগ কি কাজ করবে, সেসব বিষয়গুলো নেতাকর্মীদের জানানো হবে। নেতাকর্মীরা সম্মেলন থেকে নতুন নির্দেশনা নিয়ে নিজ নিজহ এলাকায় ফিরে যাবেন।
জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষ্যে সারাদেশ থেকে দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় এসেছেন। জৌঁলুসহীন সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মধ্যে আর্থিক জৌলুসে ভরপুর। গতকাল দেখা গেছে ঢাকার বাইরে থেকে আসা শত শত নেতাকর্মী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ দেখতে ভিড় করছেন। দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয় এবং ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে হাজার হাজার নেতাকর্মীর ভিড়। নেতাকর্মীরা বলছেন, তারা নেত্রীর নির্দেশনা নিয়ে এলাকায় গিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রচারনায় নামবেন। তারা শেখ হাসিনা উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরবেন বলেও জানান। তারা আরো জানান, সম্মেলনে এসে তারা ঈদের আনন্দের মতো আনন্দ উপভোগ করছেন।
সম্মেলনের কার্যসূচি জানাতে গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে জানানো হয়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসার পর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া। সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের।
স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। এবারের জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন। সস্মেলন উপলক্ষ্যে ৫০ হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রথম অধিবেশনের পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য ৩ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকার আদলে তৈরি ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। সাংস্কৃতিক পর্বের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা মঞ্চ। মূলমঞ্চে ৪ লেয়ারে চেয়ার সাজানো হবে। প্রথমে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বসবেন। দ্বিতীয়টিতে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সিনিয়র নেতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাকি দু’টোতে কেন্দ্রীয় নেতারা। মোট ১২০টি চেয়ার রাখা হবে। সম্মেলনের মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম জানান, পদ্মা সেতুর ওপরে নৌকা আদলে তৈরি ৮০ ফুট বনাম ৪৪ ফুট মঞ্চ তৈরি করা হয়। মূল মঞ্চের উচ্চতা হবে ৭ ফুট। মূলমঞ্চে ৪ ভাগে চেয়ার সাজানো হবে। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ এলিডি মনিটর থাকবে, যেখানে সম্মেলনের কার্যক্রম দেখা যাবে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কিছুটা কৃচ্ছ্রতা সাধনের লক্ষ্যে সম্মেলনে সাদামাটা আয়োজনের জন্য এ বছর বিদেশিদের আমন্ত্রণ করা হয়নি। তবে সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে সম্মেলনের সেøাগান নিয়ে কথা বললে তারা জানান, আওয়ামী লীগ সবসময়ই একটি স্মার্ট দল। আওয়ামী লীগই সবসময় প্রথমেভাবে জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে কি করতে হবে। আওয়ামী লীগের হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশও আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হবে।
জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে ১১টি উপকমিটি কাজ করেছে। প্রথা অনুযায়ী সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সদস্য সচিব সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের এই কর্মযজ্ঞ সফল করতে রাত-দিন পরিশ্রম করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। দফায় দফায় বৈঠক, দাওয়াতপত্র বিতরণ, গঠনতন্ত্র সংযোজন, বিয়োজন, ঘোষণাপত্র পরিমার্জন, মঞ্চ সাজসজ্জাসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ সুচারুভাবে করা হয়েছে।
চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের কথা বিবেচনা করে এবার সম্মেলনে কোনো জৌলুস আনা হয়নি। সম্মেলনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান, এবারের সম্মেলন সাদামাটা হলেও নেতাকর্মী কমবে না। সম্মেলনে নেতাকর্মীদের ঢল নামবে। দেশের মানুষ কষ্টে আছে ভেবেই এবার সম্মেলনে সাজসজ্জা করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের মানুষকে নিয়ে ভাবেন। দেশের মানুষের কথা ভেবেই এবারের সম্মেলনে সাদামাটা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রমোশন দেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। যারা দলে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন, তাদের যোগ্যতারভিত্তিতে প্রমোশন দেয়া হবে। জানা গেছে, বয়স বেশি হওয়ায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং কার্যনির্বাহী সদস্য থেকে বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন। একই সঙ্গে নারী ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগে বাদ পড়তে পারেন আওয়ামী লীগের দুই-একজন সাংগঠিক সম্পাদক। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম থাকলেও এই পদে নেতাকর্মীদের আলোচনায় উঠে এসেছে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য- ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফসহ প্রায় ১০ জনের নাম।
স্মার্ট বাংলাদেশ : সম্মেলনের আগে সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির মূল আলোচ্য বিষয় ছিল দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন ও ঘোষণাপত্র অনুমোদন করা। এবারের ঘোষণাপত্রের সেøাগান ঠিক করা হয়েছে: ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। এরমধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার কী কী থাকবে, সেটার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টিতেই গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানা গেছে। গেল কয়েকদিন ধরে নিজের বক্তব্যে এ বিষয়টিই তুলে ধরেছেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। এমনটি জাতীয় সম্মেলনে যোগ দেয়া কাউন্সিলর ও ডেটিগেটদেরও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০০৯ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে যাত্রা শুরু করেছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। ক্ষমতায় থাকার ১৪ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণসহ সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে এবারের ঘোষণাপত্রে। দলটির সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত ঘোষণাপত্র উপকমিটি জানায়, এই ক্যানভাসের ওপর দাঁড়িয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায় আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে আমরা শুনলাম ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হবে। এই ২০৪১ প্রকল্পে তিনি যুক্ত করেছেন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ সেøাগানটি। এর ব্যাখ্যায় শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট শাসন, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ।’ আমরা যদি স্মার্ট নাগরিক গড়ে তুলতে পারি, তবে তাদের প্রতিনিধিরা সরকারে আসবেন, জনপ্রতিনিধি হবেন। তখন তারা একটি সুশাসন উপহার দিতে পারবেন। তারাই ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতৃত্ব দেবেন। তারা যখন অর্থনীতির নেতৃত্ব দেবেন, তখন আমরা সত্যিকার অর্থে স্মার্ট অর্থনীতি পাব। তবে আমরা যদি দ্রুত স্মার্টনেস অর্জন করতে চাই, তাহলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে স্মার্ট করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।