পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঐতিহাসিক প্রয়োজনে দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৪৯ সালে ২৩ জুন পুরান ঢাকার টিকাটুলির রোড গার্ডেনে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পযর্ন্ত ২১টি জাতীয় সম্মেলন করেছে। এর মধ্যে স্বাধীনতার আগে ৮টি ও স্বাধীনতার পরে ১৩টি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া, জাতীয় প্রয়োজনে দলের আরো ৭টি বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
উপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর পাকিস্তান আমলে ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন দুদিন ব্যাপী সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা হয়। তৎকালীন মুসলিম লীগ নেতৃত্বের বিরোধীতা করে দলটির প্রগতিশীল অংশ এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী নেতারা এ দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। গঠনের সময় দলটির নাম ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’ রাখা হলেও ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়,বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বাধিক ৭ বার দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানা ৪ বার দলটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি ৪ বার সাধারণ সম্পাদক এবং প্রতিষ্ঠার সময়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, অন্যান্য সভাপতির মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুল হামিদ খান ভাসানী ৪ বার, এইএচএম কামারুজ্জামান ২বার এবং আব্দুর রশীদ তকর্বাগীশ ও আব্দুল মালেক এক বার করে সভাপতি নির্বাচিত হন। এদিকে সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছাড়া জিল্লুর রহমান ৫ বার, তাজউদ্দিন আহমেদ, আবদুর রাজ্জাক ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২বার এবং শামসুল হক, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও আবদুল জলিল এক বার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
প্রতিষ্ঠা সম্মেলন : ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনের সম্মেলনে সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক নির্বাচিত হন। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন অলি আহাদ।
দ্বিতীয় সম্মেলন: ১৯৫৩ সালের ১৪-১৬ নভেম্বর ঢাকার মুকুল সিনেমা হল সম্মেলন হয়। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। ওই বছর ঢাকার আগে ময়মনসিংহেও আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
তৃতীয় সম্মেলন: ১৯৫৫ সালের ২১-২৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার রূপমহল সিনেমা হল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
চতুর্থ সম্মেলন : ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারিতে সম্মেলন অনষ্ঠিত হয়। সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান।
পঞ্চম সম্মেলন : ১৯৬৪ সালের ৬-৮ মার্চ ঢাকার মতিঝিলের ইডেন হোটেলের সম্মেলনে সভাপতি মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচিত হন।
ষষ্ঠ সম্মেলন : ১৯৬৬ সালের ১৮-২০ মার্চ ঢাকার হোটেল ইডেন প্রথমবার সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দিন আহমদ।
সপ্তম সম্মেলন : ১৯৬৭ সালের ১৯ আগস্ট ঢাকার পুরানা পল্টনে আওয়ামী লীগ অফিসে সম্মেলনে সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ নির্বাচিত হন।
অষ্টম সম্মেলন : ১৯৭০ সালের ৪ জুন, ঢাকার ইডেন হোটেলের সম্মেলনে সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ নির্বাচিত হন।
নবম সম্মেলন : স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৭-৮ এপ্রিল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনে সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান নির্বাচিত হন।
দশম সম্মেলন : ১৯৭৪ সালের ১৮-২০ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতি এএইচএম কামারুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে বাকশাল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
১১ তম সম্মেলন : ১৯৭৭ সালের ৩-৪ এপ্রিল ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে আহ্বায়ক সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন। তবে, এর অগে ১৯৭৬ সালে দল পুনরুজ্জীবনের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মহিউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দায়িত্ব পালন করেন।
১২ তম সম্মেলন : ১৯৭৮ সালের ৩-৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতি আবদুল মালেক উকিল ও সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক নির্বাচিত হন।
১৩তম সম্মেলন : ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার হোটেল ইডেন হোটেলে সস্মেলনে সভাপতির পদ নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ সময় দলীয় ঐক্য ধরে রাখার প্রয়োজনে ড. কামাল হোসেন সভাপতি পদে দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। পরে মহিউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাকশালে আবদুর রাজ্জাক চলে গেলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।
১৪তম সম্মেলন : শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলের নেতৃত্ব গ্রহণের পর ১৯৮৭ সালে ১-৩ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী নির্বাচিত হন।
১৫তম সম্মেলন : ১৯৯২ সালের ১৯, ২০ ও ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান নির্বাচিত হন।
১৬তম সম্মেলন : ১৯৯৭ সালের ৬-৭ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান নির্বাচিত হন।
১৭ তম সম্মেলন : ২০০২ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল জলিল নির্বাচিত হন।
১৮ তম সম্মেলন : ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নির্বাচিত হন।
১৯ তম সম্মেলন : ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নির্বাচিত হন।
২০তম সম্মেলন : ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় শেখ হাসিনাকে সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের এমপিকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়।
২১তম সম্মেলন : ২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর ২১তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচিত হন।
বিশেষ সম্মেলন :এ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিশেষ সম্মেলনগুলোর মধ্যে প্রথমটি ১৯৫৩ সালের ১৪ থেকে ১৫ নভেম্বর ময়মনসিংহের অলকা সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয় । এতে জোট গঠনের প্রস্তাব পাস করা হয়। যার অংশ হিসেবে ১৯৫৪ সালের পাকিস্তানের প্রথম প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট। ১৯৫৬ সালের ১৯ ও ২০ মে দ্বিতীয়বার বিশেষ সম্মেলন ডাকে আওয়ামী লীগ। এই সম্মেলনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নির্বাচন যেন ১৯৫৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর আর স্থগিত রাখা না হয়, সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে চাপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৫৭ সালের ৭ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারীতে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বিশেষ সম্মেলনটি আওয়ামী লীগের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্মেলনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয় কোনও নেতা একই সঙ্গে দলের নেতৃত্ব ও মন্ত্রিসভায় থাকতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে দলীয় সাধারণ সম্পাদক পদে আসীন থাকেন। ১৯৬৭ সালের ১৯ আগস্ট দলের কৌশল নির্ধারণে ডাকা হয় চতুর্থ বিশেষ সম্মেলন। এই সম্মেলনের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের ভোটে প্রতিকূল অবস্থায় ৬ দফার পক্ষে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার তিন বছর পর জিয়াউর রহমান নির্বাচনের আয়োজন করেন। আর নির্বাচনকে ঘিরে বিশেষ সম্মেলন ডাকে আওয়ামী লীগ। দলের পঞ্চম বিশেষ জাতীয় সম্মেলন হয় ১৯৭৮ সালের ২৩ নভেম্বর রাজধানীর হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে। ১৯৯৫ সালে ১১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলটির ষষ্ঠ বিশেষ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়। ২০০০ সালের ২৩ জুন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের সপ্তম বিশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ২ বছর বাড়াতে এই সম্মেলন ডাকা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।