Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বদঅভ্যাস

কনক কুমার প্রামানিক | প্রকাশের সময় : ২৩ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

কদিন হলো বেশ শীত পড়েছে। তার মধ্যে উত্তরাঞ্চল বলে কথা। শীতকালে উত্তরে অনেক বেশী শীত পড়ে। যাকে বলে হাড়কাঁপানো শীত। শীতে চারদিকে জবুথবু অবস্থা। সন্ধ্যেটাও খুব আগেই নেমে পড়ছে। রাত্রি দশ-এগারটার মধ্যেই পথ-ঘাট নিরব সুনসান হয়ে পড়ছে। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে তেমন একটা বের হচ্ছে না। টুপটাপ করে টিনের চালে শিশির পড়ছে বৃষ্টির মত। সকাল বেলায় রাস্তার ধারে আগুন জ্বেলে ছেলে-বুড়োরা শীত তাড়ানোর চেষ্টা করে। কৃষকের ঘরে আমন ধান তোলা হয়ে গেছে। তাই তাদের মধ্যে তেমন ব্যস্ততা নেই। সকাল সকাল খেয়ে দেয়ে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। গ্রামাঞ্চলে যেন একটু তারাতারি রাত ঘনিয়ে আসে। ফজলু একজন দিনমজুর। যাকে বলে দিন এনে দিন খাওয়া অবস্থা। ফজলু তাদেরই একজন। ওর একটু হাতটানেরও অভ্যাস আছে। মাঝে মধ্যে ছোটখাটো চুরিটুরিও করে। ধান কাটা মারা শেষ বলে হাতে কোন কাজ নেই ওর। একেবারে বেকার হয়ে পড়েছে। হাতে কোন টাকা পয়সাও নাই। স্ত্রী সন্তান নিয়ে আজ দুদিন যাবৎ উপোস করে আছে। ওর স্ত্রী রহিমা প্রতিবেশী সালমার কাছে কিছু চাল ধার করতে গিয়েছিল। ধার তো দেয়নি উপরন্ত চোরের বউ বলে খানিকটা কটু কথা শুনিয়ে দিয়েছে। আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বাড়ি ফিরে আসে রহিমা। চুরি করাটা প্রায় ছেড়ে দিয়েছিল ফজলু কিন্তু আজ কোন উপায়ন্তর না দেখে সে সিদ্ধান্ত নিল আজ রাতে সে মোড়লের বাড়িতে চুরি করতে যাবে। ক্ষুধায় সবার কাহিল অবস্থা। শীতের রাত যেন যেতে চায় না। দীর্ঘতর হচ্ছে। বেশী রাত না হলে লোকজন ঘুমায় না। জেগে থাকে। স্বামী স্ত্রীরা ফিসফাস করে কথা বলে। এ সময় চুরি করতে গেলে ধরা পরার ভয় আছে। রাত গভীর হওয়ার অপেক্ষায় সে রাত জেগে জেগে হির হির করে কাঁপতে থাকে। কথায় আছে প্রতীক্ষার সময় সহসাই যেতে চায় না। সপ্তাহখানেক আগে ফজলু মোড়ল গিন্নীর কাছে কিছু ধান চাইতে গিয়েছিল। তাকে ধান না দিয়ে অপমান করে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। অনেক ধান পেয়েছে ওরা । তবুও একটু ধান ওকে দেয় না। সেদিনই সিদ্ধান্ত নেয় ফজলু, মোড়লের বাড়িতে চুরি করার। কোদাল, শাবল দিয়ে নিঃশব্দে খুঁড়ে খুঁড়ে মাটির দেয়াল কেটে নিজের ঢোকার মত সিদ কেটে বাড়ির মধ্য ঢুকে পড়ে সে। সাথে নিয়ে আসা একটা বস্তাতে গোলাঘর থেকে মণখানেক ধান ভরে নিয়ে বেরিয়ে আসে সে। কাটা সিদ দিয়ে বেরিয়ে আসবে তখনই রান্নাঘর থেকে নাকে ভেসে আসে খাবারের সুগন্ধ। দুদিন থেকে না খাওয়া তাই লোভ সামলাতে পারেনা সে। রান্নাঘরে ঢুকে হাতের নাগালে যা পায় তাই সে দু হাতে গোগ্রাসে গিলতে থাকে। হঠাৎ উঁচু থেকে বিরিয়ানির হাড়িটা পড়ে গিয়ে ঝনাৎ করে একটা বিকট শব্দ হয়। যাতে সবাই জেগে ওঠে। ধরা পড়ে যায় ফজলু। সারা গাঁয়ে হই হই পড়ে যায়। সবাই এসে মোটা রশি দিয়ে বাইরের বিশাল তেঁতুলগাছের সাথে শক্ত করে বেঁধে রাখে ওকে। অনেক মারধর করে তাকে। হাত পা বাঁধা থাকায় বেদম প্রহারে পরে পরে কাঁতর অবস্থায় তিব্র শীতে থরথর করে কাঁপতে থাকে সে। দূর থেকে ওর স্ত্রী আর ছেলে মেয়ে দুটো এমন দৃশ্য দেখে নিরবে চোখের জল ফেলে। কিছু করার নেই যে ওদের। চুরি করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েছে সে। সারারাত ধরে এমন নির্মম ভাবে বেঁধে রাখা হবে তাকে। সকালে বিচার হবে ফজলু চোরার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন