মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলি একের পর এক ধ্বংস হয়ে একটি বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে রূপ নিয়েছে। যুদ্ধের শুরুর দিকে ধারণা করা হয়েছিল যে, ২০২৩ সালে শুধুমাত্র মৌলিক ব্যয় মেটাতে কিইভের কমপক্ষে ৫হাজার ৫শ’ কোটি মার্কিন ডলার বিলিয়ন বিদেশী সহায়তা প্রয়োজন হবে, যা এর যুদ্ধ-পূর্ব মোট বার্ষিক ব্যয়ের চেয়েও বেশি। কিন্তু এখন, এর মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত অবকাঠামো, জ¦ালানী ব্যবস্থা এবং প্রলম্বিত যুদ্ধের সম্ভাবনার মধ্যে ইউক্রেনীয় নীতি নিরর্ধরাকরা আশঙ্কা করছেন যে, ইউক্রেনের প্রতি মাসে আরও অন্তত ২শ’ কোটি ডলার প্রয়োজন হতে পারে এবং তারা ইতিমধ্যেই পশ্চিমা সমর্থকদের কাছে আর্থিক সহায়তা চাইতে শুরু করেছেন।
দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ওলেগ উস্তেনকো বলেছেন, ‹আপনি যখন আপনার ঘর গরম করতে পারবেন না, আপনি আপনার দোকান, কারখানা বা প্রকল্পগুলি চালাতে পারবেন না এবং আপনার অর্থনীতি কাজ করবে না, তখন আপনি কী করবেন? আমাদের আরও আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন হবে এবং পুতিন মিত্রদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট করতে এটি করছেন।’ উস্তেনকোর মন্তব্যে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জোট মিত্রদের আগ্রহে ভাটা পড়তে শুরু করেছে, ফলে আগের মতো সহায়তা না পাওয়ার আশঙ্কা করছে ইউক্রেন।
গত সপ্তাহে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, যুদ্ধ আরও তীব্র হলে লোকেরা নিজেদের অর্থ নিয়ে দলে দলে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যেতে পারে এবং যখন তারা সেগুলিকে ইউরো বা ডলারে বিনিময় করতে চাইবে, ইউক্রেনীয় জাতীয় মুদ্রা হৃভনিয়ার মূল্য বিপর্যয় ঘটতে পারে। মঙ্গলবার প্যারিসে এক আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিহাল বলেছেন যে, দেশটির অর্থনীতি এই বছরে ৩৩ শতাংশ সংকোচনের পরেও আগামী বছর আরও ৯ শতাংশ সংঙ্কোচিত হতে পারে। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন যে, সরকার গূরুত্বপূর্ণ আমদানিগুলির অর্থ প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক রিজার্ভ শূন্য হয়ে পড়তে পারে এবং তার বিদেশী ঋণ নিয়মমাফিক পরিশোধে অক্ষম হতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে দেশটির ওপর কেয়ামত নাজিল হওয়ার শামিল।
যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে আগামী বছর ইউক্রেনকে ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ সহায়তা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু সেই সমস্ত অর্থ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত নয়। এমনকি, এই বছরের জন্য প্রতিশ্রুত কিছু আর্থিক সাহায্যও ধীর লয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। এটি কিইভকে অর্থ ছাপতে এবং মুদ্রার অবমূল্যায়ন করতে বাধ্য করেছে, যাতে তার অর্থনীতি প্রতিযোগিতামূলক থাকে, যার প্রেক্ষিতে দেশটিতে ২০ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। ইউক্রেনের মিত্রদের সাহায্য, এমনকি যদি তা আসেও, তা কেবল প্রান্তিকভাবে দেশটিকে টিকিয়ে রাখতে পারবে। এটি এই যুদ্ধের হাজার হাজার কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ করতে সক্ষম হবে না।
পরাশক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে ইউক্রেনের হাসপাতাল, বন্দর, মাঠ-ঘাট, সেতু এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অবকাঠামোগুলি ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশটির কিছু শস্যের চালান বজায় রাখার জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি থাকা সত্ত্বেও এর কৃষি রপ্তানি ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ইউক্রেনীয় শিল্পের বিশাল অংশ এখন রাশিয়ার দখলকৃত অঞ্চলে রয়েছে। এখন, এর জ¦ালানী ব্যবস্থা ধ্বংসের পথে। ফেেল, কিইভ এবং এর মিত্ররা একটি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। দেশটির অর্থনীতির মূল স্তম্ভ কয়লা খনি, শিল্প উৎপাদন এবং তথ্য প্রযুক্তি বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট পরিষেবা ছাড়া সক্রিয় রাখা সম্ভব নয়। বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে যে, ইউক্রেনের দারিদ্র্য আগের থেকে দশগুণ বৃদ্ধি ঘটতে পারে। এর বেকারত্ব ইতিমধ্যে ৩০ শতাংশের কাছাকাছি, অচিরেই আরও বাড়তে পারে। ইউক্রেন সম্পর্কে এই ভয়ানক মূল্যায়নগুলি এমন সত্য প্রতিফলিত করছে, যা দেশটির কর্মকর্তারা এবং তাদের পশ্চিমা সমর্থকরা পরিষ্কারভাবে স্বীকার করতে পছন্দ করেন না। ক্রেমলিন ইউক্রেনের অর্থনীতিকে যুদ্ধের একটি প্রধান লক্ষ্যে পরিণত করেছে, যেখানে মস্কো যুক্তিযুক্তভাবে সম্মুখ সমরের চেয়েও অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করছে।
ইউক্রেনীয়রা অনড় ছিল যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধের মনোবল ভাঙবে না। কিন্তু ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকরা এখন মানিয়ে নিতে খাবি খাচ্ছে। দেশটিতে ইন্টারনেট সংযোগের হার তার যুদ্ধ-পূর্ব স্তরের থেকে ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া নয়, বরং সার্বিক দুর্ভোগ। শীতকালে জ¦ালানী এবং পানি পরিষেবার অভাব ব্যাপক জনসংখ্যাকে দেশত্যাগে বাধ্য করছে। কিইভ ইতিমধ্যেই বাসিন্দাদের সতর্ক করেছে যে, হিমাঙ্কের তাপমাত্রার মধ্যে উত্তাপ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেলে সেখান থেকে চলে যেতে প্রস্তুত থাকতে। এই পরিস্থিতিতে, সরবরাহ পাইপগুলিকে জমাট বাঁধা এবং ফেটে যাওয়া রোধ করতে শহরের পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
রাশিয়ার আক্রমণের অনেক আগে থেকেই ঋণগ্রস্ত ইউক্রেন আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। এরপর রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এর অর্থনীতিকে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পাঠিয়ে দিয়েছে। জেলেনস্কি এবং কানে গোড়া দিয়ে দ্বিতয়ি মেয়াদে নির্বাচিত হওয়া বাইডেন প্রশাসন ইতিমধ্যেই মার্কিন রিপাবলিকানদের সমালোচনার মুখে রয়েছে। সম্ভাব্য ভবিষ্যত স্পিকার রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছেন যে, আর কোনও ‹ব্ল্যাঙ্ক চেক› ইউক্রেনকে দেয়া হবে না।
সম্প্রতি ইউক্রেনের কর্মকর্তারা ‘আয় সহায়তা কর্মসূচির’ জন্য পশ্চিমা কর্মকর্তাদের কাছে ছয় মাসের মধ্যে ১২শ’ কোটি ডলার চেয়েছিলেন। বিষয়টির সাথে পরিচিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পশ্চিমা কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে, ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে একটি শীতল অভ্যর্থনা পেয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই ইউক্রেনের জন্য অত্যধিক সাহায্য সমর্থন করার বিষয়ে সতর্ক ছিল। জার্মান মার্শাল ফান্ড অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেট্স-এর সিনিয়র সদস্য ইয়াকব কিয়াকেগো বলেছেন, ‘মহামুদ্রাস্ফীতি এড়াতে আমরা ইতিমধ্যেই তাদের যথেষ্ট দিচ্ছি। তবে স্পষ্টতই আরও গুরুতর অর্থনৈতিক সংকোচনের ঝুঁকি রয়েছে এবং এটি বন্ধ করার একমাত্র উপায় হল আরও আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। তবে ইচ্ছা আছে কিনা জানি না।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।