শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ভুজা ফকির দুদিন ধরে না খেয়ে পড়ে আছে। এক পা পঙ্গু, তেমন চলতে ফিরতে পারে না। রাস্তার পাশে এক জায়গায় বসেই দিন পার করে দেয়। এতে যা আয়-রোজগার হয়Ñ ওতেই একাকী জীবন চলে যায়।
ভুজা ফকিরের স্ত্রী মারা গিয়েছে বেশ কয়েক বছর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ভুজা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেনি। তার দ্বিতীয় বিয়ের ইচ্ছে থাকলেও পঙ্গু-অসহায় জীবনের সাথী হতে এগিয়ে আসেনি কেউ। প্রতিবেশী বিধবা খড়কির মাকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল তার। কিন্তু খড়কির মা রাজি হয় নি খড়কির মুখের দিকে তাকিয়ে। মেয়েটি বড় হচ্ছেÑ বিয়ে-সাদি দিতে হবে। কিন্তু মেয়ের কোনো কেনারা করার আগেই বেচারা খড়কির মা হঠাৎই পরপারে পাড়ি জমাল। খড়কি এখন একদম একা। অভিভাবক বলতে এই ভুজা ফকির।
মায়ের মৃত্যুর পর অনেক দিনের অভ্যাসবশত কিছুদিন ভিক্ষা করেছে খড়কি। ভিক্ষাকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে চেয়েছিল সে। শিশুকাল থেকেই অন্ধ মায়ের যষ্টি ছিল। কিন্তু কিশোরী যুবতী মেয়েকে ভিক্ষা দিতে গিয়ে অনেকেই শরীরের দিকে হাত বাড়াতে চায়। অগত্যা বৃত্তশালী এক বাড়িতে ঠিকা কাজ নেয় সে।
খড়কি ওদের খুপরি ঘর খুলতেই পাশের খুপরিতে কোঁকানির শব্দ শুনতে পায়। মেঘলা বিকেল। টুপটুপ বৃষ্টি হচ্ছে। গামছায় পেঁচানো ভাতের থালাটা মেঝেতে রেখে পাশের খুপরির দরজায় গিয়ে উঁকি দেয়। ঘরের ভিতর মুখ ঢুকিয়ে বলে, কি অইচে চাচা?
Ñখিদা, খিদায় মইরা যাইতেছি। মেঝেতে শায়িত ভুজা ফকির জবাব দেয়।
Ñবাইরে যাওনি?
Ñএই বৃষ্টির মদ্যি বাইরে যাই কেমনে?
Ñরও। বলে খড়কি নিজের ঘরে এসে গামছায় পেঁচানো ভাতের থালাটি হাতে তুলে নেয়। রাতে খাবে বলে ভাতগুলো এনেছিল সে।
খড়কি ঘরের ভিতর ঢুকে শায়িত ভুজা ফকিরকে হাত ধরে টেনে তুলে মেঝেতে বসায়। গামছাটি খুলে থালাটি ভুজা ফকিরের দিকে এগিয়ে দেয়। ভুজা ফকির ভাতের থালার দিকে না তাকিয়ে খড়কির দিকে তাকিয়ে থাকে একদৃষ্টে। মেয়েটি এত ডাঙর হয়েছে! বেশ সোন্দর লাগছে ওকে। Ñকি অইলো চাচা, খাও। ভাতের কোণায় আলুভাজি আছে। পানি আছে তুমার এহানে?
খড়কির কোনো কথা ভুজা ফকিরের কানে ঢোকে না। সে একদৃষ্টে খড়কির দিকে তাকিয়ে আছে। খিদায় মলিন চোখ-মুখগুলো চকিতে যেন চক চক করে ওঠে। হঠাৎ খড়কির ডান হাত ধরে হেঁচকা টান মেরে ওকে বুকের সাথে ঠেসে ধরে বলে, তুই আমার বৌ হবি খড়কি?
Ñকি করছাও চাচা; আমারে ছাইড়া দ্যাও। অপ্রস্তুত খড়কি তার স্বরে আর্তনাদ করতে থাকে। খড়কির আর্তনাদ ভুজা ফকির ভ্রুক্ষেপ করে না। তার দেহে এখন প্রচণ্ড খিদা। এর কাছে পেটের খিদা তুচ্ছ। ভুজা ফকির খড়কির গায়ের ওপর পুরোপুরি সেটে যায়।
পেটের খিদা নয়, দেহের খিদা মেটাতে থাকে ভুজা ফকির।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।