পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই নির্বাচনে আসতে চায় না। তারা চায় সরকার উৎখাত করে এমন কেউ আসুক যারা তাদের পালকিতে করে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি এ ধারা বজায় রাখতে আবারও নৌকায় ভোট চান। শেখ হাসিনা উপস্থিত লাখো জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনারা ওয়াদা করুন, আবারও নৌকায় ভোট দেবেন। গতকাল রোববার চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। তার আগে তিনি ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং ৬টি নতুন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এই ৩৫টি প্রকল্প বিজয়ের মাসে চট্টগ্রামবাসীর প্রতি তার উপহার হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিগত ১৪ বছরে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে উন্নয়ন হয়, মানুষের কল্যাণ হয়। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসলে দেশে দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। ওরা ধ্বংস করে, আমরা সৃষ্টি করি। এ বাংলার মাটিতে আবার যেন যুদ্ধপরাধী খুনির দল ক্ষমতায় আসতে না পারে, আর যেন জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য তিনি দেশবাসীকে সতর্ক এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর পাকবাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু করেছিল। পাকিস্তানিদের পদলেহন করেছে বলেই ১০ ডিসেম্বর বিএনপির প্রিয় তারিখ। তারা ওইদিন ঢাকা দখলের ঘোষণা দিয়েছে। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি জনগণের ভোট চুরি করেছিল। জনগণ তা মেনে নেয়নি। আমরা জনতার মঞ্চ করেছি, তীব্র গণআন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বিএনপির সে কথা মনে রাখা উচিত।
ব্যাংকে টাকার কোন সঙ্কট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চলছে- ব্যাংকে টাকা নেই। এটি সত্য না, এসব গুজবে কান দেবেন না। দেশে খাদ্য সঙ্কটও নেই। রিজার্ভ এখনও ৩৪ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুৎ সঙ্কটও নেই। বিশে^র অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক ভাল আছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি জনগণকে সব ধরনের সাশ্রয় এবং উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানান।
নির্ধারিত সময়ের আগে দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা শুরু হয়। বিকেল ৩টা ৭ মিনিটে জনসভার মঞ্চে আসেন শেখ হাসিনা। মূহুর্মূহু সেøাগান আর করতালির মধ্যে সবুজ রঙের শাড়ি পরিহিত প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে সমাবেশে আগত জনতার উদ্দেশে শুভেচ্ছা জানান। বিকেল ৩টা ৪২ মিনিটে শুরু করে প্রায় ৫২ মিনিটের ভাষণে তিনি তার সরকারের উন্নয়ন এবং বিএনপির-জামায়াত সরকারের বিভিন্ন অপকর্ম তুলে ধরেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘অনেরা ক্যান আছন? গম আছননি? অনেরার লাই পেট পুড়ে’ (আপনারা কেমন আছেন? ভালো আছেন তো, আপনাদের জন্য পরাণ জ্বলে) বলে ভাষণ শুরু করেন তিনি। আর শেষ করেন কবিতা দিয়ে। তার আগে মঞ্চের পাশে উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন এবং মোনাজাতে শরিক হন প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর পর পলোগ্রাউন্ডের জনসভাকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দেয়। সকাল থেকে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা বর্ণিল টি-শার্ট এবং ক্যাপ পরে ঢোল-বাজনা বাজিয়ে নেচে গেয়ে মিছিলে মিছিলে জনসভায় আসতে থাকেন। জেলার ১৫টি উপজেলা থেকে মাইক্রোবাস, পিকআপ, বাস, ট্রাকে চড়ে নেতাকর্মীরা পলোগ্রাউন্ডে আসেন। চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসন থেকে দলীয় কর্মীরা হরেক রঙের পোশাক পরে আসেন। জনসভাস্থলকে ঘিরে আশপাশের টাইগার পাস, কদমতলী, সিআরবি, লালখান বাজারসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
আগে থেকেই এসব এলাকা বর্ণিল ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, তোরণ ও বিলবোর্ডে সাজানো হয়। জনসভায় আগত লোকজনকে বিরিয়ানির প্যাকেট, পানি বোতল ও কোমল পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করতে দেখা যায়। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে শরবত পান এবং ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিতরণ করা হয় চকলেট। জনসভায় যোগ দিতে বেশিরভাগ বাস-মিনিবাস রিজার্ভ করে নেওয়ায় নগরী এবং জেলার বিভিন্ন রুটে গণপরিবহনের সঙ্কট দেখা দেয়। জনসভা উপলক্ষে কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাতে জনদুর্ভোগ বাড়ে। জনসভাস্থল ছাড়া নগরীর অন্যান্য এলাকার সড়ক ছিল প্রায় ফাঁকা।
তবে দীর্ঘদিন পর দলের বড় কর্মসূচিতে উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সকাল থেকেই জনসভাস্থলে অবস্থান নিয়ে নেতাদের পক্ষে সেøাগান দিতে থাকেন কর্মীরা। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। তবে জনসভা শুরুর পর অনেকে মাঠ ছেড়ে যেতে থাকেন। বিকেল নাগাদ জনসভাস্থলের আশপাশের এলাকাও অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের অনেকে সকাল থেকে মাঠে অবস্থান করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যের শুরুতে চট্টগ্রামবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানান। চট্টগ্রামের প্রতি প্রধানমন্ত্রী তার বিশেষ টান রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে বিগত ১৪ বছরে অনেক কিছু করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন থেকে ছয় লেন করা হচ্ছে। কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন হচ্ছে। সিটি আউটার রিং রোড হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণ হয়েছে, বে-টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি চট্টগ্রামে মেট্রোরেল এবং কালুরঘাটে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়, আর বিএনপি-জামায়াত আসলে লুটপাট হয়। বিএনপির দুটি গুণ- ভোট চুরি ও মানুষ খুন। এতিমের টাকা চুরি করে খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। তার এক ছেলে মারা গেছে, তার পাচার করা টাকা সিঙ্গাপুর থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। জিয়ার আরেক ছেলেকে কুলাঙ্গার বানানো হয়েছে। সে লন্ডনে রাজার হালে আছে। সেখানে বসে বাংলাদেশে যত অপপ্রচার আর সন্ত্রাস, বোমাবাজি করছে। জীবনে আর রাজনীতি করবে না এমন মুচলেকা দিয়ে সে বিদেশে পালিয়ে গেছে। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তারা লুটপাট চালিয়েছে। জনগণের অর্থ বিদেশে পাচার করেছে। ২০১৪ সালে নির্বাচনে না গিয়ে তারা অগ্নি সন্ত্রাস করেছে। ৫০০ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। তিন হাজার মানুষ আহত হয়েছে। এরা যাতে জাতির ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে না পরে সে ব্যাপারে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। ‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি দেবার কিছু নাই, আছে শুধু ভালোবাসা দিলাম আমি তাই’ বঙ্গবন্ধুর প্রিয় কবিতার এ চরণ উচ্চারণ করে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির সাথে খেলা হবে। খেলা হবে রাজপথে। মির্জা ফখরুল সংবিধান সংশোধনের স্বপ্ন ভুলে যান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। নির্বাচনে আসুন। পলোগ্রাউন্ডে আপনারাও সমাবেশ করেছিলেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন দেখে যান আমাদের এখানে কত লোক হয়েছে। দেশের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার জন্য শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ করে বলেন, তারা সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের প্রতিহত করতে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তারা। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগ থাকবে আর বিএনপি বুড়িগঙ্গায় ঝাঁপ দিতে বাধ্য হবে।
মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ, উত্তর জেলা সভাপতি এম এ সালাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, মাহফুজুর রহমান মিতা এমপি, আবু রেজা নদভী এমপি, নজরুল ইসলাম এমপি প্রমুখ। জনসভা সঞ্চালনা করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম আসেন। প্রথমে তিনি ভাটিয়ারী বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ৮৩তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের প্রেসিডেন্ট কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি সেখানে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এরপর হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অবতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় যোগ দেন। জনসভা শেষে বিকেলে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফিরে গেছেন শেখ হাসিনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।