Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে উচ্ছাস উদ্দীপনা

চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভা

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:১৪ এএম

চট্টগ্রাম নগরীর ঐতিহাসিক রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ডে আগামী ৪ ডিসেম্বর রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে সর্বত্র উৎসবের আমেজ। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উচ্ছ¡াস, উদ্দীপনা। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন দারুণ চাঙ্গা।

জনসভা সফল করার আহŸান আর দলীয় প্রধানকে স্বাগত জানিয়ে বর্ণিল ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, বিলবোর্ড ও সুসজ্জিত তোরণে নগর ও জেলাজুড়ে উৎসব মুখর পরিবেশ। মিছিল, পথসভা, মোটর শোভাযাত্রা, মাইকিংয়ে সরগরম অলিগলি, পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামীণ জনপদ। চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসভায় ব্যাপক লোকসমাগমের প্রস্তুতি এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

মহানগর থেকে জেলা থেকে উপজেলা, পৌরসভা, থানা ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে চলছে সাংগঠনিক সভা। কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্যরা মাঠে। তারা নিজ নিজ এলাকা থেকে জনসভায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর তাতে বেড়েছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কদর। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর রাজনৈতিক জনসভায় দলীয় সভাপতিতে কাছে দেখার অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় তারা। জাতীয় নির্বাচনের এক বছর আগে দলীয় সভাপতির জনসভাকে ঘিরে সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শনেরও প্রস্তুতি চলছে জোরে শোরে। এতে সরগমর তৃণমূলের রাজনীতি। মূলদল আওয়ামী লীগের সমান্তরালে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ ছাড়াও সহযোগী এবং সমমনা সংগঠনের নেতাকর্মীরাও জনসভা সফলে নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। মাঠে সরব হয়েছেন পেশাজীবীরাও। জনসভাকে সফলে রীতিমত শোডাউনের প্রতিযোগীতায় নেমে পড়েছেন দলের নেতারা। জনসভায় বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীরা ভিন্ন রঙের টি-শার্ট পরে যোগ দেবেন। আর এর মাধ্যমে তারা তাদের উপস্থিতির বিশালতার প্রমাণ দেবেন।

দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। এ দীর্ঘ সময় মাঠে কোন শক্ত বিরোধী দলকে মোকাবেলা করতে হয়নি। সরকারের দমন-পীড়নে কোণঠাসা বিএনপি মাঠে নামার তেমন সুযোগও পায়নি। গেল দুটি জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনেও একক আধিপত্য ছিল সরকারি দল আওয়ামী লীগের। ফলে মাঠের রাজনীতিতে সরকারি দলকে তেমন মনোযোগী হতে হয়নি। দলীয় এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দিবস পালনের মধ্যেই সীমিত থেকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। মাঠের রাজনীতিতে তেমন কোন কর্মসূচি ছিল না।

তবে চলতি বছরের মাঝামাঝিতে এসে পরিস্থিতি দ্রæত পাল্টে যেতে শুরু করে। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ সঙ্কট ও নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ নানা দাবিতে সরব হয়ে উঠে। সারা দেশে জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে টানা বিক্ষোভের পর দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনের কর্মসূচি হিসাবে চট্টগ্রাম থেকেই শুরু হয় দলটির বিভাগীয় গণসমাবেশ। গত ১২ অক্টোরব রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ডে মহাসমাবেশের মধ্যদিয়ে ওই কর্মসূচির সূচনা হয়।

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা ছাড়া প্রথম বিভাগীয় সমাবেশেই গণমানুষের ব্যাপক উপস্থিতি রাজনীতিতে রীতিমত বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। গণপরিবহন ধর্মঘটসহ শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে বিএনপির ধারাবাহিক বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে মানুষের ঢল দেশে সরকার বিরোধী চলমান রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। মূলত ওই কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বিভাগীয় শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে জনসভার কর্মসূচি ঘোষণা করে।
চট্টগ্রামে আগামী ৪ ডিসেম্বর জনসভাটি হবে সেই পলোগ্রাউন্ডে। আর তাই ওই জনসভা বিশালতার দিক দিয়ে যাতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশকে ছাড়িয়ে যায়- সে ব্যাপারে মনোযোগী হয়েছেন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডসহ দলের নেতারা। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে চট্টগ্রামে এসে জনসভা সফলে একাধিক সমন্বয় সভা করে গেছেন। দিয়ে গেছেন নানা নির্দেশনা। যে কোন মূল্যে এই জনসভা সফলে তাই মরিয়া নেতারা। নেতারা বলছেন, অতীতের মতো সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ ফাঁকা থাকবে না-এটা এখন নিশ্চিত। আর তাই প্রতিপক্ষকে মোকাবেলা করেই রাজনীতির মাঠ দখলের মাধ্যমে ক্ষমতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা ছাড়া বিকল্প নেই।

অতএব সর্বশক্তি দিয়ে মাঠেই নামতে হবে। আর এই জন্য তৃণমূলের কোন বিকল্প নেই। আর তাই শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে তৃণমূলকে সংগঠিত করতে মনোযোগী হয়েছেন নেতারা। তবে জনসভা সফলের প্রস্তুতিতেও দলীয় বিরোধ চোখে পড়ছে। সমন্বয় সভায় নেতারা এক টেবিলে বসলেও জনসভার প্রচারে এককাতারে নেই তারা। মহানগর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াই অনেকটা পৃথকভাবে নানা কর্মসূচি পালন করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতা। জনসভা সফলে ব্যানার পোস্টারেও বিভক্তির ছাপ স্পষ্ট।
মহানগর আওয়ামী লীগে মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারি হিসেবে পরিচিত দুটি ধারা বিদ্যমান। শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরেও এই দুটি গ্রæপের নেতাকর্মীরা দৃশ্যত পৃথক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এটাতে দোষের কিছু নেই বলে দাবি করেন নেতারা। তারা বলছেন, যে যেভাবে পারছেন জনসভার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন-এতে বিভক্তির কিছু নেই। কারণ আমাদের লক্ষ্য জনসভাকে সফল করা।

গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবেন শেখ হাসিনা : জনসভা সফলে গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ বছর পর পলোগ্রাউন্ডে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ও স্থানীয় ইস্যু সম্পর্কে ষোষণা দেবেন। তাই এই জনসভাকে সফল করে তোলার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ নাছির উদ্দীন। মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় নঈম উদ্দীন চৌধুরী, অ্যাড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, খোরশেদ আলম সুজন, এম জহিরুল আলম দোভাষ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, বদিউল আলম বক্তব্য রাখেন।

শেখ হাসিনার জনসভা সফল করুন : মনজুর আলম
শেখ হাসিনার জনসভা সফল করার আহŸান জানিয়েছেন সাবেক সিটি মেয়র মোস্তফা হাকিম গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মনজুর আলম। গতকাল এইচ এম ভবন অডিটরিয়ামে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহŸান জানান। হোছনে আরা মনজুর ট্রাস্টের পরিচালক তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান আহমদ চৌধুরী বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

মনজুর আলম বলেন, চট্টগ্রামবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরদ ও ভালোবাসা অফুরান। সফল এ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু টানেল, পানিবদ্ধতা নিরসনে মেগাপ্রকল্প, আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, পানি শোধনাগারসহ বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রামকে বদলে দিয়েছেন। তিনি মেট্রোরেল, বুলেট ট্রেন, মেরিন ড্রাইভ ও কালুরঘাটে নতুন ব্রীজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। দোহাজারী কক্সবাজার রেললাইন, বঙ্গবন্ধু শিল্পপার্ক, আনোয়ারায় শিল্পনগর, কক্সবাজার মহেশখালে গভীর সমুদ্র বন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্পজোনসহ বহুমাত্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ