নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জাপানি দর্শক মানেই ভিন্ন কিছু। রঙ-বেরঙের সাজ, নানা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সবসময় স্টেডিয়াম গরম করে রাখা। কাতার বিশ^কাপে গতপরশু জার্মানির বিপক্ষে ম্যাচেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। পুরো খেলা জুড়ে জাপানি দর্শকরাই ছিলেন গ্যালারির প্রাণ। গোটা সময় নাচে-গানে চিৎকার আর হৈ-হুল্লোড়ে খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামকে তারা বানিয়ে ফেলেছিলেন এক টুকরো মিনি জাপান। কে জানতো এই উদযাপন একটু বাদেই রূপ নিতে যাচ্ছে রূপ কথায়! সমর্থকরা যেমন গ্যালারি মাতিয়েছেন, মাঠের লড়াইয়ে শক্তিশালী চারবারের বিশ^চ্যাম্পিয়ন জার্মানদের ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাসই বদয়ে দিয়েছে বøা সামুরাইরা।
জার্মানির সঙ্গে খেলায় প্রথমার্ধে পিছিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত মনকাড়া, অভাবনীয় জয়ের পর জাপানি দর্শকরা বাঁধভাঙা উল্লাসে ফেটে পড়তেই পারতেন; শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গে মেতে উঠতে পারতেন হুল্লোডে, ভেসে যেতে পারতেন উৎসবের আনন্দে। এমন উপলক্ষ, তাও বিশ্বকাপে। বাঁধনহারা উদযাপন তো স্বাভাবিকই। অথচ জাপানি ফ্যানরা ত া করলেন না; করলেন সেটিই, যা তাদের মজ্জাগত। ছোট থেকেই তারা যে ভালো আচরণ আর অভ্যাসে অভ্যস্ত, জার্মানির সঙ্গে জয়ের পরও রাখলেন তারই স্বাক্ষর। জয়োল্লাসকে অপেক্ষায় রেখে আগে করলেন গ্যালারি সাফসুতরো; তাদের এ কর্ম বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভ‚য়সী প্রশংসা আদায় করে নিচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি, আল জাজিরাসহ বিশে^র প্রভাবশালী সকল সংবাদমাধ্যম।।
সাধারণত, শেষ বাঁশি বাজার পর দর্শকরা যখন গ্যালারি থেকে বের হতে থাকেন, তখন স্ট্যাডিয়ামের স্ট্যান্ডগুলোকে মনে হয় উচ্ছিষ্টের ভাগাড়। জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে ব্যবহৃত খাবারের ট্রে, প্যাকেট, পানীয়ের খালি ক্যান, কাপ। থরে থরে কাগজ আর কাপড়েরও যেন কমতি থাকে না। দর্শকরাও এগুলো ফেলে যান অন্য কারও জন্য, যারা সেগুলো পরিষ্কারের দায়িত্বে। কিন্তু না, সামুরাই ব্লু’রা শহরে থাকলে এমনটা হবে না। যেমনটা দেখল বুধবার কাতারের খলিফা আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামও।
খেলা শেষ। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে ২-১ এ হারিয়ে জাপানের খেলোয়াড়রাও একে একে মাঠ ত্যাগ করছেন; আর এদিকে জাপানি দর্শকরা আনন্দ উল্লাস খানিকক্ষণের জন্য চেপে রেখে লেগে পড়লেন গ্যালারি পরিষ্কারের কাজে। নিজের আসন আর আশপাশ তো সাফসুতরো করছেনই, দেখছেন দৃষ্টিসীমায় আর কোথাও কোনো আবর্জনার সন্ধান মেলে কিনা। মিললে সেখানে ছুট। তারপর সব একসঙ্গে পলিথিনে বেঁধে রেখে দিচ্ছেন একজায়গায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজ থাকলো কেবল সেসব পলিথিন সরিয়ে নেওয়া। জাপানি দর্শকদের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে এদিন গ্যালারি পরিষ্কারের সময় অন্য অনেক দর্শকও তাদের সঙ্গী হয়েছেন। মজার তথ্য হচ্ছে, এদিন তাদের আগের ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে গ্যালারি পরিস্কার করেছেন মরোক্কান সমর্থকরাও!
চার বছর আগের রাশিয়া বিশ্বকাপেও এমনই করেছিলেন জাপানি দর্শকরা। বিশেষ করে শেষ ১৬-র ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে ৩-২ গোলে হেরে যাওয়ার পর তাদের গ্যালারি সাফের চিত্র এখনও অনেকেরই মনে থাকার কথা। এমনকী এবারের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচেও জাপানি দর্শকরা খেলা শেষে গ্যালারি সাফে মন দিয়েছিল, পরে যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। অথচ সেদিন, রোববার জাপানের খেলাই ছিল না। খেলেছিল কাতার ও ইকুয়েডর। শুধু জাপানি সমর্থকই নন, দলের ফুটবলাররাও এই দীক্ষায় দীক্ষিত। ম্যাচ শেষে তাদের ড্রেসিং রুমে গিয়ে দেখা যায়, ম্যাচের আগে সবকিছু যেভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয় ঠিক সেভাবেই সাজানো। ছবিতে দেখে মনে হয়েছে, এখনই বুঝি এই ড্রেসিংরুমে নতুন একটি দল আসবে এবং নতুন ম্যাচ খেলতে নামবে। টেবিলে সাজানো ছিল সম্মানসূচক ১১টি ওরিগামি (জাপানি হস্তশিল্প)! আরবি ও জাপানিজ ভাষায় ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিরকুটও টেবিলে রেখে গেছে এশিয়ার দলটি।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও নিজেদের ম্যাচ শেষে সব সময় ড্রেসিংরুম পরিষ্কার করে তারপর হোটেলমুখো হয়েছে জাপানের ফুটবল দল। ২০১৯ এশিয়া কাপেও তাই দেখা গেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জাপানের সংস্কৃতির অংশ; শিশুকাল থেকেই তাদের মধ্যে এ সংক্রান্ত বোধ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্তে¡র অধ্যাপক স্কট নর্থ ২০১৮ সালে বিবিসিকে বলেছিলেন, স্কুলে জাপানিদের যে শিক্ষা দেওয়া হয়, তারই বিস্তৃত রূপ হচ্ছে খেলা শেষে গ্যালারি পরিষ্কার করা।
গ্রæপ ই-তে জাপানের পরবর্তী খেলা রোববার, কোস্টারিকার বিপক্ষে। পরে ২ ডিসেম্বর তারা মুখোমুখি হবে স্পেনের। মাঠের খেলায় জাপান আরো জয় পাবে কিনা, তা সময়ই বলে দেবে; কিন্তু তাদের দর্শকরা তো এর মধ্যেই সবার মন জিতে নিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।