Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ফ্রিল্যান্সার তৈরীতে নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরীর অন্যরকম উদ্যোগ

মেয়েরা ঝুঁকে পড়ছেন আউটসোর্সিংয়ে

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৩২ এএম

নড়াইল জেলা সংবাদদাতা : বর্তমান বাংলাদেশে সবকাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। আইটির এই যুগে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে নেই। ইন্টারনেটে আউটসোর্সিংয়ে নড়াইলের মেয়েরা ও সমানতালে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে। আর এই কাজে সহায়তা করছে নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরী। এ সকল প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ কোর্স এবং টিম তৈরী করে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করে সদস্যদের কাজ পাইয়ে দেবার কাজ করে থাকে ডিজিটাল লাইব্রেরী।
২০১২ সাল থেকে নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরীর একদল আইটি কর্মী নিরলসভাবে গত কয়েকবছর ধরে এই কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমে নিজেদের অর্থে কর্মকাÐ পরিচালনা করলে ও পরবর্তীতে ২০১৪ সাল থেকে স্থানীয় সংস্থা নবান্ন এর মাধ্যমে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন এই কাজে সহযোগিতা করছে। এ যাবত বিনামূল্যে প্রায় শ’খানেক ছেলে মেয়ে কে এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজে লাগাতে পেরেছে ডিজিটাল লাইব্রেরী নামের এই প্রতিষ্ঠানটি। সরকারী চাকুরীজীবি, বেসরকারী কলেজের শিক্ষক, গৃহিনী, সাংবাদিক, আইনজীবিসহ প্রায় সব শ্রেণির মানুষই ঘরে বসে আয় করার এই কাজে অংশগ্রহণ করছে।
২০১০/১১ সালের দিকে এই অঞ্চলে আউটসোসিং-এর প্রশিক্ষণ দেন মাগুরার জনৈক ব্যক্তি। সেখান থেকেই শুরু। শুরুতে মাত্র ১৫ জন ছাত্র প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে মফস্বল জেলা গুলোর মধ্যে নড়াইলের পুরুষেরা আউটসোসিং-এর কাজে দেশের ২য় অবস্থানে আছে বলে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলার প্রায় ৬’শ যুবক এই পেশায় জড়িত থেকে মাসে গড়ে ২৫ হাজার থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। যার গড় হিসেবে ৪’শ আইডিতে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে অন্ততঃ এককোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রেমিট্যান্স আকারে নড়াইলে ঢুকছে। এলাকার আইটি আউটসোসিংয়ে প্রায় ৩০ টি ছোটবড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে অন্তঃত দেড়শ ছেলে কাজ করলে ও ঐ সকল প্রতিষ্ঠানে কোন মেয়ের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
গত ২৭ নভেম্বর থেকে নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরীতে ১০ দিন ব্যাপী আইটি আউটসোর্সিং কোর্স শেষ হয়েছে। এই কোর্সে ২০ জন পুরুষের মধ্যে প্রায় ৮ জন নারী প্রশিক্ষণার্থী অংশ নেয়। এদের অধিকাংশই অনার্স পাশ শেষ করে বেকার হয়ে থাকা ছাত্র। আইটি আউটসোসিংয়ে তাদের আগ্রহ এবং সফলভাবে প্রশিক্ষণ শেষ করা আয়োজকরা খুশী। এই প্রশিক্ষণ ছাড়াও গত দুই বছরে প্রায় ৩০জন নারীকে আউটসোসিং প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরী।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার প্রত্যন্ত চাকই গ্রামের মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া দিথি। নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচ এসসি পাশ করেছে। শহরতলীর মামা বাড়িতে থেকে সে। দিথির বক্তব্য, লেখাপড়ার পাশাপাশি আয় করার জন্য আউটসোসিং প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছি। আমি বর্তমানে আপওয়ার্কের মাধ্যমে কয়েকটি বায়ারের কাছে আবেদন করেছি আশাকরছি অল্পকয়েকদিনের মধ্যে কোন একটা কাজ পেয়ে যাবো। তার ধারণা ছেলেদের থেকে মেয়েরা ধৈয্য নিয়ে ভালোভাবে এই কাজ করে আয় করতে পারবে।
শহরের মহিষখোলা গ্রামের আয়েশা আক্তার আশা। ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে একাউন্টিং এ অনার্স শেষ করে একটি কোচিং সেন্টারে মাসে ৪ হাজার টাকা বেতনে পড়ায়। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো মেয়ে হিসেবে অন্য কাজ বাদ দিয়ে আউটসোসিং এ কেন? এই প্রশ্নের জবাবে আশা’র উত্তর, আমার ভাইকে আমি দেখছি সে আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আয় করছে, আর আমি মা বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের খরচ চালাই। ওদিকে ভায়ের কাছে শিখতে চাইলে সে না গড়িমশি করে তাই ডিজিটাল লাইব্রেরীতে বিনামূল্যে আউটসোসিং শিখতে এসেছি।
রক্ষণশীল পরিবার থেকে আসা লায়লা পারভিন সেতু। নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজে অর্থনীতির চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। নি¤œ মধ্যবিত্ত পরিবারের এই মেয়েটির আশা বাড়িতে বসে নিজের পর্দা এবং সম্ভ্রম ঠিক রেখে যদি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায় তা আমাদের দেশের জন্য যেমন উপকারী তেমনি নিজের বেকারত্ব ঘুচানো সম্ভব। তিনি বলেন ঘরে বসে আয় করার এমন সুযোগ আরো আগে আসা উচিত ছিলো যা আমরা ডিজিটাল লাইব্রেরীর মাধ্যমে পেলাম। সরকারী যুব উন্নয়ন কিম্বা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে এই ধরণের কোর্স থাকলে মেয়েদের অনেক উপকার হবে।
নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরীর প্রশিক্ষক মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা গত প্রায় ৪/৫ বছর ধরে আউটসোর্সিং নিয়ে কাজ করে আসছি। তবে গত ২ বছর যাবত এলাকার নারীরা এই কাজে আগ্রহী হচ্ছেন। বর্তমানে নারী শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত আগ্রহী এবং অভিজ্ঞ, এদের ধৈর্য ও পুরুষদের চেয়ে বেশী। আশা করছি অল্পদিনের মধ্যে নারীরা ঘরে বসে আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।
নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, নবান্ন এবং ডিজিটাল লাইব্রেরী অনেকটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই আউটসোসিংয়ের এই কাজটাকে বেছে নিয়েছে। এনজিও ফাউন্ডেশন এর অল্প কিছু টাকা দিয়ে কোর্সগুলো করাই। এর বাইরে আরো সরকারি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে যেমন সহজ হতো তেমনি আইটিতে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম আরো ভালো করতে পারতো।
নড়াইল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমা খাতুন বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত যে নড়ইলের মেয়েরা এই পেশায় এত আগ্রহী, আমি দেখেছি আউটর্সোসের মাধ্যমে অনেকেই লক্ষ-লক্ষ টাকা আয় করেছেন এবং নিজেদের স্বাবলম্বি করেছেন, আশা করি মেয়েরার নিজেদের কর্মসংস্থান নিজে তৈরি করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবেন।
নড়াইলের জেলা প্রশাসক মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, নড়াইলে আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে অনেক ছেলে কাজ করে। মেয়েরাও এই কাজে এগিয়ে আসছে। নড়াইল ডিজিটাল লাইব্রেরীর এই কাজ আমি দেখেছি। তাদের হাত ধরে আগামী প্রজন্ম বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। সরকারী সহায়তা করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সচেষ্ট আছে বলে তিনি জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেয়ে

৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ