নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা হয়ে ইতিহাস গড়ে দেশে ফিরলো বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। গতকাল দুপুর পৌঁনে ২ টায় নেপালের কাঠমান্ডু থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে নামেন সাবিনা খাতুন-কৃষ্ণা রানী সরকাররা। ঢাকায় ফিরে দেশের মানুষের ভালবাসা ও সংবর্ধনায় সিক্ত হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন দলের মেয়েরা। বিমানবন্দরে তাদের ফুলের মালা ও চ্যাম্পিয়ন লেখা উত্তরীয় পড়িয়ে বরণ করে নেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, এমপি। সেখানে প্রতিমন্ত্রী চ্যাম্পিয়ন দলের ফুটবলারদের নিয়ে একটি কেক কাটেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগসহ নির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যরা। বিমানবন্দরের বাইরে লাল-সবুজের নারী ফুটবলে ইতিহাস গড়া মেয়েদের বরণ করে নিতে উপস্থিত ছিলেন হাজারো ফুটবলপ্রেমী। তাদের উপস্থিতি দেখে উদ্বেলিত হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা, ভেসেছেন আবেগের উচ্ছ্বাসে। তাই তো সাফের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি দেশের সব মানুষকে উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। বিমানবন্দরে অনাকাঙ্খিত কারণে নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন করতে পারেনি সাফ জয়ী দল। তবে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় গণমাধ্যমে ছোট্ট করে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন সাবিনা। তিনি বলেন, ‘সবাইকে ধন্যবাদ, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ বলুন বা ১৮ কিংবা ২০ কোটি, এই ট্রফি বাংলাদেশের সব মানুষের।’ সাবিনা যোগ করেন, ‘আমাদের এত সুন্দর করে বরণ করে নেওয়ার জন্য আমরা অনেক কৃতজ্ঞ। মন্ত্রী মহোদয় ও বাফুফের যারা এসেছেন, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের মেয়েদের, দেশের ফুটবলকে যে আপনারা এত ভালোবাসেন, এসব দেখে আমরা অনেক অনেক গর্বিত।’
ভবিষ্যতে আরও বড় সাফল্য তুলে আনার কথা জানান সাফ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক। তার কথায়, ‘আমাদের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন স্যার, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, মন্ত্রী মহোদয়ের সহায়তায় ২০১২ সাল থেকে দেশের নারী ফুটবল ভালোভাবেই চলছে। মেয়েদের পরিশ্রম যদি দেখেন, পাশাপাশি গেল ৪-৫ বছরের সাফল্য দেখলে এতেই সব বোঝা যায়। সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আমাদের চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে সামনের দিকে আরও কিভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়।’
সরকারী নির্দেশে বিআরটিসির দ্বিতল বাসের ছাদ ফেলে দিয়ে ‘ছাদখোলা’ বাসে চড়ে সাবিনা-সানজিদা-কৃষ্ণাদের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার আশা পূরণ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সংস্থা। বিমানবন্দর থেকে সেই ছাদখোলা বাসে চড়েই মতিঝিলের বাফুফে ভবনে আসেন সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ দলের মেয়েরা। বাসের রুট ছিল- বিমানবন্দর থেকে কাকলী, জাহাঙ্গীর গেট, পিএম অফিসের রাস্তা, তেজগাঁও, মৌচাক, কাকরাইল, মতিঝিলের শাপলা চত্বর হয়ে বাফুফে ভবন। ইতিহাসগড়া মেয়েরা যখন শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরে আসেন, তখনই শুরু হয় মানুষের উচ্ছ্বাস। ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ শ্লোগানে চ্যাম্পিয়ন ফুটবলারদের স্বাগত জানায় জনতা। মেয়েদের বরণ করে নিতে তখন হাজার হাজার ফুটবল পাগল মানুষ ভিড় করে সাবিনা-স্বপ্না-কৃষ্ণাদের নাম ধরে শ্লোগান দিতে থাকেন। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে সাবিনা খাতুনরা ছাদখোলা বাসে চড়েন বিকেল সাড়ে ৩টার সময়। বাস যখন চলতে শুরু করে তখন পেছনে পেছনে ছুটে চলে হাজারো মানুষ। এরপর যে সড়ক দিয়েই সাবিনাদের বাস যায় সেখানেই তাদের অভিবাদন জানাতে থাকে জনতা। বাসে এসময় সাবিনাদের সঙ্গে ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। ছাদখোলা ‘চ্যাম্পিয়ন’ বাস। ইতিহাস গড়া নারী ফুটবলারদের নিয়ে ছুটে চলছে। আর বাঘিনীদের হাতে পতপত করে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের এই স্বর্ণকন্যাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। মেয়েরাও এই আবেগ ও ভালোবাসার জবাব দিচ্ছেন হাত নেড়ে। সে এক নজরকাড়া দৃশ্য। তবে মাঝে একটি দুর্ঘটনাও ঘটে গেল। ছাদখোলা বাসে করে বিজয় উদযাপন করতে করতে বিমানবন্দর থেকে বাফুফে ভবনে যাওয়ার পথেই ঘটলো দুর্ঘটনা। ঘটনাটি ঘটে মূলত ছাদখোলা বাস র্যাডিসন হোটেলের সামনে আসার পর। চ্যাম্পিয়ন দলের তারকা ফুটবলার রিতুপর্ণা চাকমা মোবাইল দিয়ে নিজেদের বিজয় উদযাপন লাইভ করছিলেন। র্যাডিসন ব্লু হোটেলের সামনেই বাস একেবারে রাস্তার আইল্যান্ডের কিনারায় চলে যায়। যেখানে ঝুলানো বিলবোর্ডের কোনায় লেগে মাথার এক পাশ কেটে যায় রিতুপর্ণার। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বাস থেকে নামিয়ে পাঠানো হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। জানা গেছে, রিতুপর্ণার মাথায় তিনটি সেলাই দিতে হয়েছে। তবে সিএমএইচে ভর্তি রাখা হয়নি তাকে। কাটা জায়গায় সেলাই করে এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয় বাফুফে ভবনে।
রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে ছাদখোলা বাস এগিয়ে চলে মতিঝিলের বাফুফে ভবনের দিকে। অবশেষে সাবিনারা ছাদখোলা বাসে চড়ে রাজকীয় সংবর্ধনা পেয়ে বাফুফে ভবনের কাছে এসে পৌঁছান। সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে বাফুফে ভবনের কাছে পৌঁছালেও হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে চ্যাম্পিয়নদের বাসটিকে ভবনের গেট পর্যন্ত নিয়ে আসতে হিমশিম খেতে হয় চালককে। শাপলা চত্বর থেকেই মূলত স্রোত নামে মানুষের। সেই স্রোত ঠেলে পিঁপড়ার গতিতে বাস এগিয়ে যায় বাফুফে ভবনের দিকে। সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটের বাফুফে ভবনের গেটে এসে পৌঁছায় চ্যাম্পিয়নদের ছাদখোলা বাস। কিন্তু চারপাশে বিজয়ীদের ঘিরে এত মানুষের ভিড়, সেই বাস থেকে সাবিনাদের নামার কোনো উপায় দেখা যাচ্ছে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বাফুফের নিরাপত্তা কর্মীদের গলদগর্ম হতে হয়েছে উপচে পড়া মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ রাখতে। চ্যাম্পিয়ন মেয়েরা বাফুফে ভবনের গেটে এসে বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে হাজারো কন্ঠের আওয়াজ, ‘চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন, বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন। মেয়েরা মানুষের ভিড় ঠেলে ভবনের ভেতর প্রবেশ করার পর তাদের বরণ করে নেন বাফুফের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। এর আগেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন,‘সাফ সেরার খেতাব জেতা হলো-এবার লক্ষ্য এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসর।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।