Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মামলা দায়ের ও পুলিশের তদন্ত চলছে পুলিশ স্বামীকে যৌতুক দিয়েও বিপন্ন রুমার জীবন

| প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতাঃ পুলিশ স্বামীকে বাড়তি যৌতুক দিতে না পারায় নির্যাতন প্রতারণা ও হুমকিতে রুমা খাতুন নামে এক গৃহবধূর জীবন এখন বিপন্ন। উপায়ান্ত না পেয়ে ওই গৃহবধূ প্রতারক স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগের দায়েরের পর বিষয়টি নিয়ে একাধিক তদন্ত শুরু হয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পুলিশ সদস্য মামলা ও তদন্ত উপেক্ষা করে তার স্ত্রীকে তালাক দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ সদস্যের দ্বারা এই নারী নির্যাতন ও প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার কয়ড়া দত্তপাড়া গ্রামে।
আদালতে দায়ের হওয়া মামলা এবং পুলিশ বিভাগ বরাবর দায়ের হওয়া ওই গৃহবধূর অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া দত্তপাড়া গ্রামের আজাহার আলীর মেয়ে রুমা খাতুনের সাথে ২০ জানুয়ারী ২০০৮ সালে বিবাহ হয় একই উপজেলার পিয়ারা মোহনপুর গ্রামের লেবু সরকারের ছেলে আল-আমিনের সাথে। বিয়ের কিছুদিন পরেই রুমার স্বামী পুলিশের চাকরি নেয়ার নাম করে তার বাবার কাছে আবারো ৩ লাখ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। স্বামীর অত্যাচার ও নির্যাতনে চাকরি নেয়ার জন্য রুমারা বাবা আবারো তার স্বামীর পরিবারকে ৩ লাখ টাকা দেয়। সেই টাকা দিয়ে রুমার স্বামী আল-আমিন বিয়ের তথ্য গোপন করে প্রতারণার মাধ্যমে ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলা কোটায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি নেয়। আল আমিনের পুলিশের ট্রেনিং সময়ের যাবতীয় ব্যায়ভারও বহন করে রুমার বাবা। ট্রেনিং শেষে চাকরি স্থায়ীকরণের নামে ২০১১ সালে ৪ ফেব্রæয়ারি রুমার স্বামী উল্লাপাড়ার দূর্গানগর ইউনিয়ন কাজী অফিসে পুনরায় আবারো তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। এরপর ঘরসংসার করা অবস্থায় রুমার স্বামী আরো ১ লাখ টাকা বাড়তি যৌতুক দাবি করে তার পরিবারের সহায়তায় নির্যাতন করে ২০১৫ সালের ৬ জুলাই বাড়ী থেকে বের করে দেয় । এদিকে রুমার সু-চতুর স্বামী পুলিশ সদস্য আল-আমিন ২০০৮ সালে তার চাকরি নেয়ার আগে বিয়ের কাবিন নামাটি কাজীর সাথে যোগসাজশ করে গোপন করে আবার বিয়ে করার প্রস্তুতি নেয়।
বিয়ে পড়ানো মৌলভী উপজেলার সড়াতলা গ্রামের আব্দুল আওয়ালের ছেলে মো.শাহ আলমের সাথে কথা হলে তিনিও ওই তারিখে বর কনে বিয়ে পড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি উল্লেখ করেন,রুমা খাতুনের অভিযোগের পর প্রশাসনের তদন্তের সময় তাকে বিয়ে পড়ানোর স্বাক্ষী না দেয়ার জন্য প্রথমে লোক পাঠিয়ে, মুঠোফোনে হমকি এবং পরে টাকার লোভ দেখান। দূর্গানগর ইউনিয়নের নিকাহ রেজি›স্ট্রার মো.রুহুল আমিন বিভিন্ন তদন্তে দুটি বিয়ে রেজিস্ট্রি করার স্বীকারোক্তি দেন। কথা হলে এ প্রতিবেদকের কাছে তিনি ওই বর করেন ২০০৮ সালে বিয়ে রেজিস্ট্র করার কথা স্বীকার করলেও পরে জানান,তিনি ২০১১ সালে রেজিস্ট্রি করেছেন। তবে রুমার পরিবারের কাছে ওই নিকাহ রেজিস্ট্রারের দেয়া সিলমোহরসহ দুটি বিয়ে রেজিস্ট্রির নকল কপি রয়েছে।
রুমার বাবা কৃষক আজাহার আলী বলেন,জমি জমা বিক্রি করে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে জামাতাকে পুলিশে চাকরি দেয়াসহ কয়েক দফায় ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা সহ কয়েক ভরি স্বর্ণালঙ্কার দিয়েছি। কিন্তু তার যৌতুকলোভী স্বামী বার বার বাড়তি যৌতুক এবং পরকীয়ার কারণে আমার মেয়েকে নির্যাতন করে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়ে তালাক দিয়ে গোপনে বিয়ে করেছে। সে মোটা অংকের টাকা দিয়ে কাজীকে ম্যানেজ করে পূর্বের বিয়ের কাবিননামা গায়েব করে পুলিশের সকল তদন্ত ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে রুমার স্বামী পুলিশ সদস্য মো.আল-আমিনের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান,২০১১ সালে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করার কথা স্বীকার করেন। তবে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করা অস্বীকার করে বলেন,তার স্বভাব চরিত্র ভাল না হওয়া তালাক দেয়া হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সার্কেলের পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো.আবুল হাসানাতের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান,পুলিশের বিভাগীয় অফিস থেকে রুমা খাতুনের অভিযোগটি তার কাছে এসেছিল। বিষয়টি উভয় পক্ষের স্বাক্ষী প্রমান শুনে নিকাহ রেজিস্টারের লিখিত বক্তব্যসহ ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জীবন

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ