পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলব। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। সারা বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ইনশাআল্লাহ কোনো দুর্ভিক্ষ হবে না। তার জন্য আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী। যারা বলেছিল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে তাদের মুখে ছাই পড়েছে। সেটা হয়নি, ইনশাআল্লাহ হবেও না। বিএনপি সরকারের সময়কার বিভিন্ন উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই এইট পাশ আর মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চললে সেই দেশের উন্নতি হয় না।
মহাসমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। আমিও বিশ্বাস করি কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। ওরা যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আমরা এগিয়ে যাব। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো।
গতকাল যুবলীগের ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন নাকি তারা চোখেই দেখে না। এখন চোখ থাকতে যদি কেউ অন্ধ হয় তাহলে তো কিছু করার নেই। তারা উন্নয়ন চোখে দেখে না। অথচ ব্যবহার ঠিকই করছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের সব সুফল তারা ভোগ করছে। বিএনপির আমলে তারা কী করেছে? তারা ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করেছে, দেশের কোনো উন্নয়ন তারা করেনি। খালেদা জিয়া ২০০১ সালে এসে হাজার হাজার নেতাকে অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে হত্যা করেছেন।
যুবলীগ নেতা-কর্মীদের অনুরোধ করে তিনি বলেন, যেহেতু ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন আর স্যাংশন, আমাদের আমদানি সকল পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। যুবলীগের নেতারা গ্রামে যান, নিজের জমি চাষ করতে হবে এবং অনাবাদী জমিতে চাষাবাদ করতে হবে।
বিএনপির নেতাদের কাছে প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির নেতারা কখনো ভেবেছিল বাংলাদেশের স্যাটেলাইট আকাশে উড়বে? আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তা করে দিয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, আজকের যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অর্থাৎ সুবর্ণজয়ন্তী। সকল যুবলীগ নেতাকে আমি অভিনন্দন জানাই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ১১ নভেম্বর যুবলীগ প্রতিষ্ঠিত করেন। জাতির পিতার নির্দেশে যে যুবলীগকে পরিচালনা করেছিলেন সেই শেখ মণিকে ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমি আজ যে মাঠে ভাষণ দিচ্ছি সেই ঐতিহাসিক মাঠে ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন জাতি পিতা। সেই ভাষণ বিএনপি নিষিদ্ধ করেছিল। এখন জাতির পিতার সেই ভাষণ ঐতিহাসিক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দার অভিঘাত ঠেকাতে ও সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি এড়াতে দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে তৃণমুলে যেতে যুবলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এজন্য আমি আহ্বান করেছিলাম যেন একইঞ্চি জমি অনাবাদী না থাকে। নিজের গ্রামে যান। সেখানে কোনো জমি যেন অনাবাদী না থাকে সেজন্য কাজ করতে হবে। অন্যের জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে সেটিও বলতে হবে। সারাবিশ্ব দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি কিন্তু আমাদের ইনশাল্লাহ কিছু হবে না। এজন্য প্রস্তুতি থাকবে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবসমাজকে উৎপাদন বাড়াতে হবে, দেশের মানুষের কল্যান করতে হবে। দারিদ্রতার হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছ। উত্তরবঙ্গে এখন আর মঙ্গা হয় না। সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি।
যুব সমাজকে নানাভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে আওয়ামী লীগ সরকারে নেয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে বিনা সুদে ঋন নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবে। পল্লী সঞ্চয়ী ব্যাংক, প্রবাসী ব্যাংক থেকে ঋন নিয়ে কাজ করতে পারে। সমগ্র দেশে আমরা হাইটেক পার্ক করে দিয়েছে। প্রত্যেকটি জায়গায় যুবকরা ট্রেনিং নিয়ে প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা নিজেরা নিজেদের পায়ে দাড়াচ্ছে। এটা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না হলে হতো না।
এ সময় যুব সমাজকে সন্ত্রাস, জঙ্গি, দুর্নীতি, মাদক থেকে দুরে থেকে দেশের কল্যাণকর কাজে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে পদ্মা সেতু হয়েছে। একসাথে ১’শটি সেতু উদ্বোধন করা, এর আগে কখনো হয়নি। জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
এইট পাস দিয়ে, মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চললে উন্নয়ন হয় না:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, এইট পাস দিয়ে, মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চললে উন্নয়ন হয় না। আমরা ক্ষমতায় আসার আগে সরকারে ছিল বিএনপি। ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল বিএনপির সময়। আমরা ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত নিয়েছিলাম। কোভিড টিকা কিনেছি, বিনিয়োগ করেছি, বিমান কিনেছি, পায়রা বন্দর নিজস্ব অর্থায়নে করেছি। এভাবে রিজার্ভ থেকে খরচ হয়েছে। ঘরের টাকা ঘরে থাকছে। দেশের জনগণের উন্নয়নে এই টাকা ব্যবহার করছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রা কেউ রুখতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক সমালোচনা করছে অনেকে। তারা নাকি উন্নয়ন চোখে দেখে না। এই যে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এগুলো কে করেছে? তিনি বলেন, বিএনপির অনেক নেতা মানি লন্ডারিং, লুটপাট, দুর্নীতির কথা বলে। তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। মানি লন্ডারিং মামলায় সে সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত। অস্ত্র মামলার আসামি। তাদের মুখে এই সমালোচনা মানায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা পর বঙ্গবন্ধু যখন দেশ গড়ার কাজে হাত দেন, তখন এক টাকাও রিজার্ভ ছিল না। কিন্তু তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশকে আবার উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। বাংলাদেশকে এখন কেউ অবহেলার চোখে দেখে না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে যুবকদের একটা অবস্থান আছে। তাই বঙ্গবন্ধু যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই জাতির পিতা ১৯৭১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ৭ মার্চের ভাষণ দেন। আজ এখানে বলতে চাই, আমি এই দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে চাই। তরুণরাই এতে নেতৃত্ব দেবে।
সবসময় মানুষের পাশে থাকতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাড. জাহাঙ্গীর কবির নানক।
যুব মহাসমাবেশটি পরিচালনা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। বেলা আড়াইটার পর প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। সভা মঞ্চের সামনে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ উত্তোলন করেন দলীয় পতাকা। এরপর বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে, জাতীয় সংগীত গেয়ে ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়।
বেলা দুইটায় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ পরিচালনা করেন যুবলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জয়দেব নন্দী সভাটি পরিচালনা করেন। সাংস্কৃতিক পর্ব সঞ্চালনা করেন সাংস্কৃতিক সম্পাদক বিপ্লব মোস্তাফিজ। এতে প্রথমে সৈয়দ শামসুল হক রচিত ‘আমার পরিচয়’ কবিতা আবৃত্তি করেন শিমুল মুস্তফা, যুবলীগ ‘শান্তির শারর্থী’ শিরোনামে এক নৃত্য পরিবেশনা করা হয়। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বিশেষ গান ‘বাঙালির নয়নমনি’ পরিবেশন করেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী বেগম মমতাজ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান পরিবেশন করেন শিল্পী বেগম মমতাজ, ‘তুমি বাংলার ধ্রুব তারা-তুমি হৃদয়ের বাতিঘর’ গানটির সঙ্গে যুবলীগের পতাকা নেড়ে গানটির সঙ্গে সুর মেলান উপস্থিত লাখো জনতা।
দুপুর আড়াইটায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে পেইন্টিং উপহার দেন ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা। পরে যুবলীগের উত্তরীয় পরিয়ে দেন যুবলীগের মহিলা নেত্রীরা। সুবর্ণ জয়ন্তী লোগো উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর যুবলীগের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।