শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
রাজু ইসলাম : আপাদমস্তক একজন কবিকে এতকাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য আমার আর হয়নি। ব্যক্তি জীবনে তিনি একটি আদর্শকে জীবন হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। যে জীবনের মূল্যায়ন আমরা এই সময়ে এসে খুব একটা করতে পারিনি।
কবি হারুন অর রশিদ বলেছিলেন-
‘আমি সে জীবন চাই-
যে জীবন বাঁচে হৃদয় থেকে হৃদয়ে।’
যদি সে জীবনের পথে আমরা নেমে থাকি, তাহলে সে পথের তিনি ছিলেন অন্যতম একজন পথিক। যে পথে হেঁটে হেঁটে তিনি অসংখ্য নুরি কুড়িয়ে কুড়িয়ে জমা করে বিশাল একটি ঢিপি গড়ে তুলেছিলেন।
সাহিত্য জীবনে তার অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও তিনি নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন নিজের ভেতর। আত্মকেন্দ্রিক, প্রচার বিমুখ একজন কবি বা ছড়াকার ছিলেন তিনি। আহম্মদ ছফা রুকনুজ্জামান দাদা ভাইয়ের মতো সাহিত্যিক তাকে বসিয়ে বসিয়ে লেখা আদায় করে নিয়েছিলেন। গল্প আড্ডায় তিনি ছিলেন মহামণির মতো। তবু তিনি প্রচারবিমূখতার দরুণ পিছিয়ে থাকতেন। ক্ষোভ আর অভিমান তাকে শেষ করে দিয়েছিল অনন্তের পথ থেকে বিচ্যুত করে। প্রায় ত্রিশ বছর তুচ্ছ একটি কারণে নিজেকে লেখালেখি থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। বাংলাদেশ বেতারের রেজিস্টার্ড গীতিকার তিনি। ‘আযান সুরে ভাঙে পাখিদের ঘুম’-এর মতো অসংখ্য গানের গীতিকার তিনি। শিশুদের জন্য লিখতেন মজার মজার ছড়া।
ব্যক্তিজীবনে কঠিন আদর্শকে সাথী করে জীবনে বহু কিছু ত্যাগ করেছেন তিনি। ক্ষোভ আর অভিমান থেকে পরিবার-বন্ধু-স্বজন এমনকি সন্ততি থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে নিতে কুণ্ঠাবোধ করতেন না। তথাপিও তার ভেতরে একটা মানুষ বাস করতো একটা অস্তিত্ব বাস করতো সেটা হচ্ছে- খুব সহজেই তিনি কাউকে বন্ধু বানিয়ে ফেলতে পারতেন। কথা-কাজ ও বিশ্বাসে তিনি অভদ্রতাকে দৃঢ়ভাবে পরিহার করতেন। সময় ও ওয়াদাকে তিনি প্রচ-ভাবে মূল্যায়ন করতেন।
তিনি ‘দৈনিক ইনকিলাব’ এর একজন নিয়মিত লেখক ছিলেন। ষাটের দশকে ‘দৈনিক পাকিস্তান’, ‘দৈনিক আজাদ’, বাংলা একাডেমির নিয়মিত প্রকাশনা ‘ধান শালিকের দেশ’ এ নিয়মিত লিখতেন। অসংখ্য অমর কীর্তির মাধ্যমে সাহিত্যে তার রয়েছে বিশেষ অবদান।
ইদানীং ত্রৈমাসিক জলকণা ও এশিয়া বার্তায় নিয়মিত লিখছিলেন। জলকণার প্রধান উপদেষ্টাও বটে। জলকণার প্রচার প্রসারে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন জীবনের সর্বশেষ সময়ের প্রায় সবটুকু। কৃষ্ণকলি সিরিজ নিয়ে ‘কৃষ্ণকলি’ নামে একটি বই করে তার মাধ্যমে অমর হবার ইচ্ছে ছিল তার প্রবল, সম্ভবত এটিই ছিল তার শেষ ইচ্ছে। যে বইটিতে তিনি পৃথিবীর আদি থেকে আজ অবধি কৃষ্ণকলিকে নানাভাবে, নানা রূপে উপস্থাপন করে চরিত্র রূপায়ন করেছেন একটি ভিন্ন মাত্রার।
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তার সময় ফুরিয়ে এসেছে। গত ২৫ অক্টোবর এশিয়া বার্তায় ছাপা হওয়া তার একটি কবিতা ‘সময় ফুরিয়ে গেছে’ তার জীবনের শেষপ্রান্তে আসার পুরোপুরি ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
তবে জীবনের শেষ সময়গুলো তিনি দুঃখ-কষ্ট ও একাকী নিঃসঙ্গ কাটিয়ে একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই ক্লান্তিকে কাটিয়ে উঠতেই সম্ভবত পৃথিবীর প্রতি চরম অভিমান করে আমাদের সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে গত ১১/১১/১৬ তারিখ দুপুরবেলা ৭৭ বছর বয়সে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে অনন্তের পথে যাত্রা করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আল্লাহ তাকে যেন তার ভুলগুলো থেকে ক্ষমা করে পবিত্র করে দেন (আমীন)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।