Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিলে ইউক্রেনের কী হবে?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ অক্টোবর, ২০২২, ১১:৩৪ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া আধুনিক ও শক্তিশালী অস্ত্র, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে ইউক্রেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতারা হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে তারা যদি কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ দখল করতে পারেন - তাহলে তারা ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া কমিয়ে দেবে।

ইউক্রেনকে মোট ১৮টি হিমারস রকেট দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র - যার পুরো নাম হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম । এটি হচ্ছে আমেরিকানরা ইউক্রেনকে যে ৫,২০০ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য দিয়েছে তারই একটা অংশ। বাকি সব দেশ মিলে ইউক্রেনকে যে পরিমাণ সাহায্য দিয়েছে - এ পরিমাণ তার দ্বিগুণ বেশি। ইউক্রেনের সরকার তো বটেই, সামরিক বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এই সহায়তা তাদের মিশনের জন্য অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল। "এটা না দিলে ইউক্রেনীয়ানরা সম্পূর্ণ পরাভূত হয়ে যেতো" - বলছিলেন মার্ক কানসিয়ান - একজন সাবেক মার্কিন মেরিন কর্নেল এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ। কিন্তু অচিরেই হয়তো এই সামরিক সাহায্য আর পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিতে পারে।

কারণ কিছু রিপাবলিকান আইন প্রণেতা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন। তারা বলছেন, আমেরিকানরা যখন জীবনযাপনের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে - তখন এসব সাহায্য দেবার যৌক্তিকতা কতটুকু? অক্টোবর মাসেই প্রথম দিকে মার্কিস প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু রিপাবলিকানদের একজন নেতা কেভিন ম্যাককার্থি আভাস দিয়েছিলেন যে, কংগ্রেসে যদি রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে তারা ইউক্রেনকে 'ব্ল্যাংক চেক' দিতে অতটা আগ্রহী হবে না। "আমার মনে হয় লোকে একটা মন্দা পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে" - বলেন ম্যাককার্থি। তার কথা, এই আমেরিকানরা ইউক্রেনকে ঢালাও সামরিক সাহায্য দেবার ব্ল্যাংক চেক দেবে না।

অন্য রিপাবলিকানরা একই রকম সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। মে মাসে মিসৌরি রাজ্যের সিনেটর জশ হাউলি বলেন, ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া "আমেরিকার স্বার্থের অনুকুল নয়" এবং এটা ইউরোপকে এই উদারতার সুযোগ নেবার রাস্তা করে দেবে। দৃশ্যত এসব মন্তব্যে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে একটা বিভক্তির আভাস পাওয়া যায়। কারণ, এই রিপাবলিকান পার্টিরই ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অতীতে কঠোর ভাষায় তার নিজের দলে যারা 'ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে সাফাই গায়' তাদের নিন্দা করেছিলেন।

শুধু তাই নয়, তিনি এও বলেছিলেন যে এদের কারণে বাকি বিশ্বের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। এরই পাশাপাশি সেনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল হোয়াইট হাউসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন ইউক্রেনকে সাহায্য দেয়া দ্রুততর করা হয়। কারণ তার ভাষায়, "রুশ আগ্রাসন ঠেকাতে ইউক্রেনের যা যা দরকার সেটা সরবরাহ করতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরো বেশি কিছু করতে হবে।"

মনে রাখতে হবে কিছুকাল আগে ইউক্রেনের জন্য ৪ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজের পক্ষে যারা ভোট দিয়েছিলেন তারা সবাই রিপাবলিকান। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ৫৭ জন বিপক্ষে ভোট দেন, আর উচ্চকক্ষ সেনেটে দেন ১১ জন। ইউরোপে এমন একটা উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছে যে আগামী দিনগুলোতে কি হতে যাচ্ছে।

"আমেরিকা যদি সরে যায়, তাহলে পুতিন হয়তো দ্রুত জয় ছিনিয়ে নেবেন" - ওয়াশিংটন পোস্টকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন টোবায়াস এলউড এমপি, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান। কিন্তু ইউক্রেনের কর্মকর্তা এবং মার্কিন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নভেম্বর মাসের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাই হোক না কেন - ইউক্রেনকে দেয়া মার্কিন সাহায্যের পরিমাণ অন্তত স্বল্পমেয়াদে কমে যাবে এমন সম্ভাবনা কম।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সেই রেজনিকভ বলেছেন, মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সাথে তার যেসব বৈঠক হয়েছে - তাতে তিনি আস্থাশীল যে মধ্যবর্তী নির্বাচনে যাই হোক - ইউক্রেনের জন্য উভয় দলের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তিনি যাদের সাথে কথা বলেছেন তাদের মধ্যে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান উভয় দলের আইনপ্রণেতারাই ছিলেন।

এমন সম্ভাবনা আছে যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর হয়তো পার্টির পপুলিস্ট এই অংশটি শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তবে তাতে ইউক্রেনের জন্য সাহায্য কমে যাবে কিনা তা বলা কঠিন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যেও যে একটি ভিন্নমতাবলম্বী অংশ নেই তা নয়। কয়েকদিন আগেই ডেমোক্র্যাটদের একটি বামপন্থী অংশ আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন যুদ্ধের নিষ্পত্তির পক্ষে আহ্বান জানিয়ে একটা চিঠি দিয়েছিল। সেই চিঠি অবশ্য তারা প্রত্যাহার করে নিয়েছে - কারণ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে তারা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে হেয় করেছেন।

জনমত জরিপে অবশ্য দেখা যায় যে ইউক্রেনকে সাহায্য করার পক্ষে আমেরিকানদের সমর্থন এখনো ব্যাপক। কিন্তু যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হতে থাকায় এ সমর্থন যে কিছুটা মিইয়ে এসেছে - তার আভাসও পাওয়া যায়। গতমাসে এক জরিপে দেখা যায়, ২০ শতাংশ আমেরিকান মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে "খুব বেশি" সাহায্য দিচ্ছে। পিউ রিসার্চের মতে - গত মে মাসেও এমন চিন্তাভাবনার লোক ছিলেন ১২% এবং মার্চ মাসে তাদের অনুপাত ছিল মাত্র ৭%। সূত্র: বিবিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ