Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কন্টেইনারে দন্ড ভাড়া দ্বিগুন

চট্টগ্রাম বন্দরে বেসামাল জট

| প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : জটের সমস্যা ছাড়ছেই না চট্টগ্রাম বন্দরকে। বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্নমুখী প্রচেষ্টা, আমদানি-রফতানিকারকদের প্রতি বারবার তাগাদা সত্ত্বেও কন্টেইনারসহ কার্গো জট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না বন্দর। অবশেষে জটের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ আরোপ করেছে পেনাল রেন্ট বা দন্ড ভাড়া। এই দন্ড ভাড়া দিতে হবে ফ্রি-টাইমের মধ্যে প্রচলিত স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুন হারে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) থেকেই এই পেনাল রেন্ট কার্যকর হতে যাচ্ছে। দন্ড মাসুল আরোপ নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা বলছেন, পেনাল রেন্ট আদায়ের কারণে পণ্য আমদানি-রফতানিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্রমবর্ধমান কন্টেইনার জট সমস্যা সামাল দেয়ার জন্যই দ্বিগুন পেনাল রেন্ট আরোপ করা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না। বিশেষত এফসিএল কন্টেইনারের সংখ্যা ইতোমধ্যে ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে গেছে। এতে করে স্বাভাবিক বন্দর কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হচ্ছে।   
আমদানি কন্টেইনার পণ্যবাহী জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার খালাসের পরপরই প্রথম চার দিন ফ্রি-টাইম হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আর ফ্রি-টাইমের মধ্যে কন্টেইনার ডেলিভারি করে নেয়া হলে সে ক্ষেত্রে কোনো স্টোর রেন্ট দিতে হচ্ছে না। এর পরবর্তী প্রথম ৭ দিনের ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনার প্রতি ছয় ডলার হারে স্টোর রেন্ট দিতে হয়। এরপর অষ্টম দিন থেকে ২০ দিন পর্যন্ত প্রতিদিন ১২ ডলার হারে স্টোর রেন্ট গুণতে হয়। তারপর থেকে প্রতিদিন ২৮ ডলার করে নির্ধারিত স্টোর রেন্ট গুণতে হয়। আগামী ১৫ ডিসেম্বর থেকে স্টোর রেন্ট সমেত পেনাল রেন্ট আরোপ করা হবে উপরোক্ত হারের দ্বিগুণ। এখন যেখানে ছয় ডলার স্টোর রেন্ট রয়েছে তা হবে ১২ ডলার। আর ১২ ডলারের স্টোর রেন্ট হবে পেনাল রেন্টের কারণে ২৪ ডলার। ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনারের ক্ষেত্রেও দ্বিগুণ হারে দ- মাসুল কার্যকর করা হচ্ছে। কন্টেইনার জট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে না আসা পর্যন্ত দন্ড মাসুল আরোপ ও আদায় করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে এফসিএল কন্টেইনারের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ২৪ হাজার ২৫০ টিইইউএস। অব্যাহত জটের কারণে বর্তমানে এফসিএল কন্টেইনার ২৭ হাজার টিইইউএস ছাড়িয়ে গেছে। বন্দরে যে হারে আমদানি কন্টেইনার নামছে, সেই তুলনায় ডেলিভারি খালাস হচ্ছে অনেকাংশে কম। এতে করে বন্দরে বেসামাল জট সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে ইয়ার্ডে কন্টেইনার মজুদের জন্য স্থান সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। আমদানি ও রফতানিকারকদের তাগাদা দেয়া হলেও কন্টেইনার ডেলিভারি নেয়া হচ্ছে অতি ধীর গতিতে। সচরাচর বছরের এই সময়ে বন্দরে কন্টেইনারসহ কার্গোজট বৃদ্ধি পায়।  
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জটের অন্যতম কারণ হচ্ছে ন্যূনতম অপরিহার্য কন্টেইনারসহ কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের উপযোগী ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামের (ইকুইপমেন্ট) ঘাটতি। জাহাজ থেকে কন্টেইনার খালাস, ওঠানামা, স্থানান্তর, মজুদের উপযোগী যান্ত্রিক সরঞ্জামের এই ঘাটতি ব্যাপক হওয়ায় বন্দরের স্বাভাবিক অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ঘাটতিতে রয়েছেÑ কী গ্যানট্রি ক্রেন, রাবার টায়ারড গ্যানট্রি ক্রেন, সার্র্বক্ষণিক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কাজে অপরিহার্য (ফোর হাইটের ৪০ টনি) স্ট্র্যাডল ক্যারিয়ার প্রভৃতি।  
বন্দর ব্যবহারকারী তথা স্টেক হোল্ডাররা বলছেন, তারা ফ্রি-টাইমের মধ্যেই চালান খালাস ডেলিভারি নিয়ে যেতে চান। কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় ভারী যান্ত্রিক সরঞ্জামসহ বন্দরের অবকাঠামো সমস্যা-সীমাবদ্ধতার কারণেই ফ্রি-টাইমের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে এফসিএল কন্টেইনার খালাস ডেলিভারি করে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এসাইকুডা প্লাস প্লাস সিস্টেমে অনেক সময়ই গলদ ধরা পড়ে। এতে করে পণ্যসামগ্রীর ছাড়করণ প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পড়ে। আরও বিভিন্ন পদ্ধতিগত জটিলতার মুখে বন্দর থেকে চালান খালাস ডেলিভারি গ্রহণে পদে পদে সমস্যা দেখা দেখা দেয়। সর্বোপরি দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরকে সেবাখাত হিসেবেই দেখা উচিত, ব্যবসায় খাত হিসেবে নয়। তাহলেই বন্দর পরিচালনা অধিকতর ব্যবসাবান্ধব হয়ে উঠবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কন্টেইনার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ