পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : প্রাইম মুভার-ট্রেইলর ধর্মঘটে দেশের অর্থনীতির মূলচালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরে অচলাবস্থা নেমে এসেছে। বন্দরের জেটি ও ইয়ার্ডে জমেছে কন্টেইনারের পাহাড়। গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুর পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে সাড়ে ৪০ হাজার কন্টেইনারের স্তূপ জমে। যা বন্দরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাড়ছে জাহাজ জট। ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে কন্টেইনারবাহী জাহাজ থেকে বন্দরে যেকোন সময় কন্টেইনার নামানো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
টানা চারদিনের ধর্মঘটে পণ্য পরিবহন সেই সাথে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কন্টেইনার ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে সমুদ্রগামী বিদেশী জাহাজ। ধর্মঘটের গতকাল চতুর্থ দিনেও কন্টেইনার না নিয়ে বন্দর ছেড়ে গেছে বেশ কয়েকটি জাহাজ। রফতানি পণ্যভর্তি কন্টেইনার জাহাজীকরণ করতে না পারায় ক্ষতির মুখে পড়ছে রফতানিকারকেরা। চরম সংকটে পড়েছে শতভাগ রফতানিমুখী গার্মেন্টস কারখানা মালিকেরা। প্রাইম মুভার-ট্রেইলর ধর্মঘটের কারণে পণ্য পরিবহন অচল হয়ে পড়েছে। কল-কারখানায় দেখা দিয়েছে কাঁচামাল সংকট।
এদিকে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হওয়ায় প্রাইম মুভার-ট্রেইলরের পাশাপাশি এবার সব ধরনের পণ্যবাহী যানবাহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের দুইটি সংগঠন। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সাথে বৈঠক কোন সিদ্ধান্ত ছাড়া শেষ হওয়ার পর এ ধর্মঘটের ডাক দেয় মালিক-শ্রমিকরা। আগামীকাল শনিবারের মধ্যে দাবি মানা না হলে রোববার থেকে সকল ধরনের যানবাহন ধর্মঘটেরও হমকি দেয় তারা। প্রাইম মুভার-ট্রেইলরের লাগাতার ধর্মঘটের চারদিনের মাথায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সাথে বৈঠকে বসেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক শামসুল আরেফীন। কয়েক ঘন্টার টানা বৈঠকে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এ বৈঠক স্থগিত করে দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আবু মুসা বৈঠক থেকে বের হয়ে বলেন, ওভার লোডিংসহ সাত দফা দাবিতে ধর্মঘট করে আসছে প্রাইম মুভার-ট্রেইলর মালিক-শ্রমিকরা। বৈঠকে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত না হওয়ায় তাদের দাবির সাথে সংহতি জানিয়ে শনিবার সকল ধরনের পণ্য পরিবহন ধর্মঘট আহবান করা হয়েছে। শনিবারের মধ্যে দাবি মানা না হলে রোববার থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রামে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনসহ সকল ধরনের যান্ত্রিক পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে।
এর আগে চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারের সাথে বৈঠক হলেও কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওই বৈঠক শেষ হয়। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনও আন্দোলনরত সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করে আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। তবে দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মসূচি প্রত্যাহার না করার ব্যাপারে অনড় সংগঠনের নেতারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য গতিশীল রাখতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম। মেট্রোপলিটন চেম্বারের পক্ষ থেকে সংকট নিরসনে বাণিজ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। এরপরও ধর্মঘট চলছে।
মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ির অতিরিক্ত চাপ কমাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত ১৬ আগস্ট গাড়ি ভেদে পণ্য পরিবহনের ওজন নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। নির্ধারিত ওজন অতিক্রম করলে স্তরভেদে দুই থেকে ১২ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ করা হয় প্রজ্ঞাপনে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৪ চাকার প্রাইম মুভার সর্বোচ্চ ৩৩ টন পর্যন্ত মালামাল বহন করতে পারবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দি ওজন স্কেলে প্রাইম মুভার চালক শ্রমিকদের মারধর ও হয়রানির অভিযোগ তুলে গত রোববার সন্ধ্যায় সোমবার সকাল থেকে লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেয় প্রাইম মুভার-ট্রেইলর মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তাদের দাবি দাউদকান্দি এলাকায় বিপুল সংখ্যক কন্টেইনারবাহী ট্রেইলর প্রাইম মুভার আটকে আছে জরিমানার কারণে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবি তারা বিভিন্ন কন্টেইনার বহন করলেও ওজনের বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। কিন্তু ট্রেইলর প্রাইম মুভারে ৩৩ টনের পর প্রতি টনের জন্য দুই হাজার টাকা করে জরিমানা গুনতে হচ্ছে।
এদিকে টানা প্রাইম মুভার-ট্রেইলর ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত কন্টেইনার জমে আছে। বন্দরের জেটি ইয়ার্ডে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দু’একদিনের মধ্যে জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামানো বন্ধ করে দিতে হবে বলেও জানান বন্দরের কর্মকর্তারা। চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন) জাফর আলম জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউএস। কিন্তু কন্টেইনার পরিবহন বন্ধ থাকায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত বন্দর ইয়ার্ডে জমা আছে ৪০ হাজার ২৫৯ টিইউজ কন্টেইনার। এটি চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ধর্মঘটের কারণে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে রপ্তানিমুখী পণ্য নিয়ে প্রায় ছয় হাজার কন্টেইনার জমে আছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো’স এসোসিয়েশনের সচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিকদার। তিনি বলেন, গত সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটে বন্দরে কন্টেইনার নেয়া অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে। চারদিনের গত মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৬টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো থেকে শুধু তিন হাজার ৯৩০ টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কন্টেইনার) কন্টেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়েছে।
দেশের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ বেসরকারি ১৬টি কন্টেইনার ডিপোতে আনা হয়। সেখান থেকে কন্টেইনার ভর্তি করে চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। আর ১০ শতাংশ কমলাপুর কন্টেইনার ডিপো এবং দেশের বিভিন্ন রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলগুলো থেকে সরাসরি বন্দরে নেয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের আশি শতাংশেরও বেশি পরিবাহিত হয়। আমদানি পণ্যের মধ্যে খোলা পণ্য ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানে পরিবহন করা হলেও কন্টেইনার, বিলেট, স্টিল কয়েল, কারখানার যন্ত্রপাতিসহ সকল ভারি পণ্য পরিবহন করা হয় প্রাইম মুভার-ট্রেইলর দিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক দশ হাজারেরও বেশি প্রাইম মুভার-ট্রেইলর রয়েছে।
ধর্মঘটের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্য বোঝাই কন্টেইনারগুলো আটকা পড়ছে। একই সাথে ১৬টি অফডক থেকে বন্দরে রপ্তানি পণ্য পাঠানো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে একদিকে বন্দরে কন্টেইনারের পাহাড় গড়ে উঠছে। অন্যদিকে বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতকৃত কন্টেইনার বন্দরে নেয়া যাচ্ছে না। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার জটের পাশাপাশি বন্দর থেকে খালি জাহাজ ছেড়ে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।