Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুই সাবমেরিন টাগ ও কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভাসান হচ্ছে রূপসা নদীতে

প্রকাশের সময় : ২৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : খুলনা শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন দুটি সাবমেরিন টাগ ও ২টি কন্টেইনার জাহাজ রূপসা নদীতে ভাসান হচ্ছে আগামী রবিবার ও সোমবার। একই সাথে প্রতিষ্ঠানটিতে নৌবাহিনীর জন্য একটি হাইড্রোগ্রাফী সার্ভে ভ্যসেল-এর নির্মাণ কাজেরও সূচনা হচ্ছে।  এর মধ্যে দিয়ে উপমহাদেশে প্রথমবারের মত সাবমেরিন টাগ নির্মাণের দক্ষতা ও কৃতিত্ব অর্জন করতে যাচ্ছে নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড। পাশাপাশি নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রথম কন্টেইনার জাহাজ নির্মাণেরও গৌরব অর্জন করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, ওএসপি, এনডিসি, পিএসসি সোমবার খুলনা শিপইয়ার্ডের সøীপওয়ে থেকে দুটি সাবমেরিন টাগ লঞ্চিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন। একইসাথে তিনি কিললে’র মাধ্যমে বিশেষায়িত নৌ জরিপ নৌযান হাইড্রোগ্রাফী সার্ভে ভ্যসেল-এর নির্মাণ কাজেরও সূচনা করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। এর আগে আগামীকাল (রবিবার) রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য নির্মাণাধীন ২টি কন্টেইনার জাহাজও নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটির সøীপওয়ে থেকে রূপসা নদীতে ভাসান হবে। কন্টেইনার জাহাজ দুটির লঞ্চিং অনুষ্ঠানে নৌ পরিবহন মন্ত্রী মোঃ শাহজাহান খান প্রধান অতিথি থাকবেন।
বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সমর বহরে চীন থেকে সংগৃহীতব্য দুটি সাবমেরিনের জন্য এসব টাগ-এর নির্মাণ কাজ শুরু করে খুলনা শিপইয়ার্ড। মালয়েশিয়ার নৌ নির্মাণ কারিগরি সহায়তা প্রতিষ্ঠান-জিওএমএস’এর তত্ত্বাবধানে এসব সাবমেরিন টাগ নির্মাণের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ডের কারিগরি দক্ষতায় এক অনন্য উচ্চতা অর্জন করতে যাচ্ছে। প্রায় ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব সাবমেরিন টাগ-এর পরিপূর্ণ নির্মাণ কাজ শেষে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে খুলনা শিপইয়ার্ড।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সমর বহরে চীন থেকে সংগ্রহ করা দুটি সাবমেরিন যুক্ত হতে যাচ্ছে খুব শিঘ্রই। পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দরের কাছে এসব সাবমেরিন-এর জন্য নির্মাণাধীন পোতাশ্রয়ে টাগগুলো অবস্থান করবে। গভীর সমুদ্র থেকে সাবমেরিনকে পোতাশ্রয়ে টেনে নিয়ে আসার জন্য শক্তিশালী টানা নৌযান বা টাগ-এর প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনায় নিয়েই বাংলাদশ নৌবাহিনী দুটি সাবমেরিন টাগ তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এসব সাবমেরিন টাগ-এর নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে রয়েছে বিশ্বখ্যাত নৌজরিপ প্রতিষ্ঠান- ‘ব্যুরো অব ভেরিটাস’।
প্রায় ১০৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৮ মিটার প্রস্থ টাগগুলো পূর্ণ লোডে ঘণ্টায় ১২ নটিক্যাল মাইল বেগে সামনে ও ১১ নটিক্যাল মাইল বেগে পেছনে চলতে পারবে। এসব নৌযানে ২ হাজার ৫শ’ অশ্বশক্তির আমেরিকার ‘কামিন্স’ ব্রান্ডের ২টি করে মূল ইঞ্জিন ছাড়াও একাধিক জেনারেটর ইঞ্জিনও সংযোজন করা হচ্ছে।
এদিকে অনেক বিপত্তি কাটিয়ে ২০১৪-এর ২৪ অক্টোবর বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য দুটি কন্টেইনার জাহাজ নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় খুলনা শিপইয়ার্ডে। ‘জাপান সরকারের ঋন মওকুফকরণ তহবিল’ এবং সরকারী উন্নয়ন বাজেটের মোট ১৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র জন্য যে ৪টি কন্টেইনারবাহী জাহাজ নির্মিত হচ্ছে, তার ২টি নির্মাণ করছে খুলনা শিপইয়ার্ড।
২০০৭ সালে ৪টি কন্টেইনার জাহাজ নির্মাণের লক্ষে ‘প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ প্রণয়ন করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পেস করে বিআইডব্লিউটিসি। দীর্ঘ দু’বছর পরে ২০০৯-এর ২২ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক’-এর সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পটি অনুমোদনকালে একনেক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব নৌযানের দুটি খুলনা শিপইয়ার্ডে ও অপর ২টি চট্টগ্রাম ড্রাই ডকে নির্মাণের নির্দেশ দেন। কিন্তু এর পরেই সংস্থাটির ভেতরে ও বাইরে বিষয়টি নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়।
এক পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে একটি মহল উচ্চ আদালতেরও শরণাপন্ন হয়। আইনী লড়াইসহ নানা টানা পোড়েনের পরে ২০১৪-এর এপ্রিলে দুটি নৌ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সাথে ৪টি কন্টেইনার জাহাজ নির্মাণে চুক্তি স্বাক্ষর করে বিআইডব্লিউটিসি। তবে ইতোমধ্যে একনেক-এর চূড়ান্ত অনুমোদনের পরে কেটে গেছে দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর। ফলে প্রকল্প ব্যয়ও বেড়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। অথচ ঐ কালক্ষেপণ না ঘটলে চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ের অনেক আগেই নৌযান দুটি নির্মিত হতে পারত। বুয়েট-এর নৌ-স্থাপত্য বিভাগের অনুমোদিত নকশা ও তাদের সরাসরি পরামর্শে এসব নৌযান নির্মিত হচ্ছে। তবে পুরো নির্মাণ কাজের তদারকি করছে আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি ‘ব্যুরো অব ভেরিটাস’।
নির্মাণাধীন এসব কন্টেইনারবাহী নৌযানের প্রতিটির দৈর্ঘ প্রায় আড়াইশ’ ফুট ও প্রস্থ প্রায় ৫০ ফুট। সংশোধীত নকশানুযায়ী এসব নৌযানের প্রতিটিতে একই সাথে ২০ ফুট দৈর্ঘের ১৫৮টি করে কন্টেইনার বহন করা যাবে। পরিপূর্ণ বোঝাই অবস্থায় নৌযানগুলোর গভীরতা দাঁড়াবে প্রায় ১৫ ফুটের মত। প্রতিটি নৌযানে ৮২৯ অশ্বশক্তির বিশ্বমানের দুটি করে মূল ইঞ্জিন ছাড়াও ১৯১ কিলোওয়াটের ২টি ও ৫০ কিলোওয়াটের ১টি করে জেনারেটর সংযুক্ত থাকবে। কন্টেইনারবাহী এসব নৌযান প্রতি ঘণ্টায় ১০ নটিক্যাল মাইল বেগে দেশের উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম করবে বলে জানা গেছে।
আগামীকাল (রবিবার) কন্টেননারবাহী ২টি নৌযান রূপসা নদীতে ভাসানোর মধ্যে দিয়ে খুলনা শিপইয়ার্ডই দেশে প্রথমবারের মত এ ধরনের নৌযান নির্মাণের গৌরব অর্জন করতে যাচ্ছে। চলতি অর্থ বছরের মধ্যেই নৌযান দুটির পরিপূর্ণ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে বিআইডব্লিউটিসি’র কাছে হস্তান্তর করবে খুলনা শিপইয়ার্ড। শিপইয়ার্ডটির দায়িত্বশীল মহল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুই সাবমেরিন টাগ ও কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভাসান হচ্ছে রূপসা নদীতে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ