Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাশিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হচ্ছে ইউরোপে

পুতিনের জন্য এটি একটি বিজয় হবে : ড্রাঘি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইউক্রেনে অভিযান চালানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। পাশাপাশি, তারা কিয়েভেও অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু এসব নিষেধাজ্ঞা বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে তাদের জন্য। তেল ও গ্যাসের সঙ্কট দেখা দেয়ার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যও আকাশ ছোঁয়া। যার ফলে ইউরোপজুড়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া ও কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জোরালো হয়েছে। এ কারণে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ছে ইউরোপের দেশগুলো।

সম্প্রতি ইতালির বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মারিও ড্রাঘি তার সহকর্মী ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতাদের বলেছিলেন যে, অঞ্চলটি মন্দার মধ্যে রয়েছে এবং ব্লকের মধ্যে বিভাজন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের জন্য একটি বিজয় হবে। ইইউ নেতারা একটি বিতর্কিত জ্বালানি প্যাকেজ নিয়ে বিতর্ক করার সময় এবং জার্মানির ২০০ বিলিয়ন ইউরোর (১৯৬ বিলিয়ন ডলার) জাতীয় সহায়তা পরিকল্পনার সমালোচনা করার পরে এই সতর্কতা আসে। অনেক বিশ্লেষক বলেছে যে, ইইউতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হবে।

প্রধানমন্ত্রী ড্রাঘি ইইউ দেশগুলোকে রাশিয়ান নেতার জন্য অর্থায়ন করার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। পিপলস পত্রিকাকে তিনি বলেছিলেন যে, ব্লকের অর্থনীতি একটি মন্দার মধ্যে রয়েছে, বাজারের বিভাজন দ্বারা এটি আরও প্রকট হয়েছে, যা ইইউ এর ঐক্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ইইউ দেশগুলির মধ্যে বিভাজন তৈরি করা পুতিনের কৌশলের অংশ এবং যদি ইইউ ঐক্য না দেখায়, তবে পুতিন জয়ী হবেন, ড্রাঘি বলেছেন।

গত মাসে ইতালির সাধারণ নির্বাচনে জয়ী ডানপন্থী জোটের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাতারেল্লার সাথে দেখা করেন। সাধারণত, প্রতিটি দল তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি দল পাঠায়। কিন্তু এবার ডানপন্থী দলগুলো জর্জিয়া মেলোনির অধীনে জোটে শাসন করার জন্য তাদের ঐক্য এবং প্রস্তুতি প্রদর্শন করতে চায়। এ জোটের অন্যতম অংশীদার হচ্ছে ফোর্জা ইতালিয়া পার্টি। যার নেতা সিলভিও বারলুসকোনি। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের পক্ষ সমর্থনে কথা বলে সমালোচনার ঝড়ে পড়া ইতালির সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সেই ঝড় আরও উস্কে দিয়েছেন পুতিনের সঙ্গে তার সখ্য নিয়ে দম্ভ করে।

বারলুসকোনির কথায়, দীর্ঘদিনের বন্ধু পুতিনের সঙ্গে তিনি সম্প্রতি আবার মেলামেশা শুরু করেছেন। গত মাসে তার জন্মদিনে পুতিনের সঙ্গে নতুন করে কথা হয়েছে এবং তারা একে অপরের সঙ্গে ভদকা, ওয়াইন ও মধুর চিঠি বিনিময় করেছেন। প্রকাশ হওয়া একটি অডিও টেপে তিনি এমন কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। ইতালির সংবাদ সংস্থা লাপ্রেসে গত মঙ্গলবার গোপনে ধারণ করা এই অডিও রেকর্ড প্রকাশ করে। বারলুসকোনি ফোর্জা ইতালিয়া দলের নেতা হিসেবেই ইতালির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এবার ইতালিতে জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন নতুন ডানপন্থি জোট সরকারের শরিক হতে চলেছে তার দল। ফলে, ইতালির নতুন সরকারে একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র পাচ্ছেন পুতিন। যার কারণে, পরবর্তীতে ইতালির জন্য রাশিয়া বিরোধী কোন সিন্ধান্ত নেয়া কঠিন হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটো জোটের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানিতেও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার জার্মানির সংসদ বুন্ডেসটাগে বিরোধী দল পপুলিস্ট অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) সহ-চেয়ারম্যান টিনো ক্রোপাল্লা দাবি করেছেন, জার্মান সরকারকে অবশ্যই সমস্ত রুশ-বিরোধী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে এবং কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে হবে, সেইসাথে তার নীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর একতরফা মনোযোগ বন্ধ করতে হবে।

ডানপন্থী এ পার্টির নেতা জোর দিয়ে চ্যান্সেলর শলৎজকে বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে আপনারা একতরফা মনোযোগ দিয়ে জার্মান অর্থনীতিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা প্রতিদিন তা দেখতে পাচ্ছি। আপনার নিষেধাজ্ঞা নীতি ছেড়ে দিন এবং ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করুন। আলোচনার মাধ্যমে ইউরোপে সংঘাতের সমাধানে সহায়তা করুন।’ অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির কো-চেয়ারম্যান দাবি করেছেন যে, চ্যান্সেলর নর্ড স্ট্রীমস ফেটে যাওয়ার পরিস্থিতি তদন্ত করবেন এবং নিশ্চিত করবেন যেন, পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস ইউরোপে প্রবাহিত হয়। ‘এ প্রসঙ্গে, আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করি, চ্যান্সেলর, নর্ড স্ট্রিম এবং নর্ড স্ট্রিম ২-এ নাশকতার তদন্তের ফলাফল কোথায়? আমি আপনাকে এক সপ্তাহ আগে এটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। আপনি গত সপ্তাহে বলেছিলেন যে, সেগুলো শীঘ্রই উপস্থাপন করা হবে,’ ক্রোপাল্লা বলেন।

তিনি স্মরণ করেন যে সুইডেন এই বিষয়ে তাদের তথ্য জার্মানির সাথে শেয়ার করতে অস্বীকার করেছে। ‘ইউরোপীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে সম্পর্ক কি এমন দেখায়? বন্ধুদের কি আমাদের সাথে এমন আচরণ করা উচিত?’ রাজনীতিবিদ জিজ্ঞেস করেন, ‘আমদের জার্মানির জন্য নর্ড স্ট্রীমসের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি সরবরাহ করার একটি নির্ভরযোগ্য সুযোগ ছিল এবং এখনও আছে,’ ক্রোপাল্লা উল্লেখ করেছেন।
জার্মানি ও ইতালির পাশাপাশি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও রাশিয়ার পক্ষে সমর্থন বাড়ছে। ফ্রান্স, ব্রিটেন, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র ও হাঙ্গেরির মতো দেশগুলোতেও রাশিয়ার পক্ষে বিক্ষোভ হচ্ছে। ফলে, ইউরোপের দেশগুলোর জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ধরে রাখা ও কিয়েভে অস্ত্র সরবরাহ করা সামনে আরও কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র : দ্য ইকোনিমস্ট, তাস, ব্লুমবার্গ।



 

Show all comments
  • রশিদা খাতুন ২২ অক্টোবর, ২০২২, ৬:১৯ এএম says : 0
    ফাটল ধরাতে পারলে একদিন ইউরোপ শিশুরা বাংলার গল্প তাদের সিলেবাসে দেখবে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Umor Salman ২২ অক্টোবর, ২০২২, ৬:২০ এএম says : 0
    ইনকিলাবের খবর গ্রহণযোগ্য নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Ranju Ahmed ২২ অক্টোবর, ২০২২, ৬:১৯ এএম says : 0
    ধন্যবাদ রাশিয়া
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ