Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউক্রেনের অধিকৃত চার অঞ্চলে মার্শাল ল’ জারি করলেন পুতিন

ইউক্রেনের এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংস একদিনে ছয়টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত :: ইউক্রেনের দুটি আর্টিলারি ব্যাটারি ও একাধিক রকেট লঞ্চার প্লাটুন ধ্বংস :: ইউক্রেনীয় বাহিনীর জাপোরোজিয়ে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইউক্রেনের রুশ অধিকৃত চার অঞ্চলে মার্শাল ল’ জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। চলমান তুমুল লড়াইয়ের মধ্যে বুধবার পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক ও দক্ষিণাঞ্চলের জাপোরেজিয়া ও খেরসনে সামরিক আইন ঘোষণা করেন তিনি। গতমাসে এ চার অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করে মস্কো।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এই অভিযানের মধ্যদিয়ে দেশটির এক পঞ্চমাংশ এলাকা দখলে নেয় রুশবাহিনী। নিয়ন্ত্রিত ওইসব এলাকার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চার অঞ্চলে গত মাসের শেষের দিকে গণভোট আয়োজন করা হয়। এরপর অঞ্চলগুলো নিজ ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। পশ্চিমা সরকারগুলো ও কিয়েভ বলছে, এ ভোট আয়োজন আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
গণভোটের পর ইউক্রেনের ওই চার অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। গত ৩ অক্টোবর একীভূতকরণ সম্পর্কিত একটি চুক্তি রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ স্টেট ডুমায় অনুমোদন পায়। এরপর ৪ অক্টোবর চুক্তিটিকে অনুমোদন দেয় রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ফেডারেশন কাউন্সিল। এরপর ৫ অক্টোবর এ সংক্রান্ত আইনে সই করেন পুতিন।
এর মধ্যদিয়ে ওই চার অঞ্চল আনুষ্ঠানিকভাবে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হয়। পুতিনের এ পদক্ষেপকে ‘অবৈধ ও প্রহসন’ অভিহিত করে এর তীব্র নিন্দা জানায় ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো। ওই চার অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার পর ইউক্রেনে সঙ্ঘাত আরো জোরদার হয়। এলাকাগুলো পুনর্দখলে পাল্টা হামলা শুরু করে ইউক্রেনীয় সেনারা।
অন্যদিকে অধিকৃত এলাকাগুলো ধরে রাখতে অভিযান জোরদার করে রুশবাহিনী। এই মুহূর্তে কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী খেরসনে উভয় বাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে।
এর মধ্যে খেরসনসহ অধিকৃত ওই চার অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করলেন পুতিন। গতকাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের এক সভায় বক্তব্য দিয়ে ওই চার অঞ্চলে মার্শাল ল জারির পাশাপাশি চলমান অভিযান সমন্বয়ের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুতসিনের তত্ত্বাবধানে ওই অঞ্চলগুলোতে একটি বিশেষ সমন্বয়ক কাউন্সিল গড়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
বর্তমানে খেরসনের পরিস্থিতি ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেনে নিযুক্ত রাশিয়ার নতুন কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন বলেছেন, খেরসনের পরিস্থিতি খুবই উত্তেজনাকর। এরই মধ্যে শহরটি থেকে নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া শুরু হয়েছে। খেরসনে রাশিয়ার নিয়োগ করা কর্মকর্তা ভøাদিমির সালদো জানিয়েছেন, ইউক্রেন হামলা শুরুর আগে খেরসন থেকে হাজার হাজার বেসামরিক লোক সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছেন তারা।
ভøাদিমির সালদো গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, দেনিপ্রো নদীর পশ্চিম তীরের চারটি শহর থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। রাশিয়ার সব কর্মকর্তাও নদী পার হয়ে যাবেন। রাশিয়ার গণমাধ্যমগুলোতে দেখানো হয়েছে, অনেক মানুষ দেনিপ্রোর কাছে জড়ো হয়েছেন। তারা নৌকার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তবে এটি নিশ্চিত নয় কতজন নদী পার হচ্ছেন।
ইউক্রেনের এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ধ্বংস : গতকাল ক্রোভোই রোগের মেয়র আলেকজান্ডার ভিলকুল বলেছেন, রাশিয়ার সামরিক স্ট্রাইকের ফলে ইউক্রেনীয় দেপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলের ক্রিভোই রোগ জেলার একটি বিদ্যুৎ সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘সম্প্রতি ঘোষিত বিমান হামলার সময় ক্রিভোই রোগ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধার ক্ষতির ফলে অনেক আবাসিক এলাকাকে বিদ্যুৎ শক্তি সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’ ভিকুল তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছেন। পূর্ববর্তী প্রতিবেদন অনুসারে, গতকাল ভোরে দেপ্রোপেট্রোভস্ক, পোলতাভা, সুমি, চের্নিগভ এবং খারকভ অঞ্চলের পাশাপাশি ইউক্রেন জুড়ে অন্যান্য অঞ্চলে বিমান হামলার সাইরেন বেজে ওঠে।
ইউক্রেন জুড়ে বিদ্যুৎ অবকাঠামো লক্ষ্য করে মঙ্গবারও একদফা হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন ইউক্রেনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এসব আক্রমণের ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে, এবং সারা দেশ জুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটেছে। তিনি বলেন, ক্রেমলিনের সাথে এখন আর কোন আলোচনার সুযোগ নেই। রাজধানী কিয়েভ এবং অন্য আরো কয়েকটি শহরে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। কিয়েভের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে রুশ হামলায় কমপক্ষে দু ব্যক্তি নিহত হয়েছে। দনিপ্রো, খারকিভ এবং জিতোমিয়ার শহরগুলোও আক্রান্ত হয়েছে।
একদিনে ছয়টি বিদ্যুৎ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে : ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিগাল বলেছেন, মঙ্গলবার একদিনেই সারা দেশে ছয়টি বিদ্যুৎ সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ‘ঝিটোমির, ডেনেপ্রোপেট্রোভস্ক, খারকভ, নিকোলায়েভ ও ডোনেৎস্ক অঞ্চলে এবং কিয়েভ শহরে বিদ্যুৎ খাতে আরও হামলা চালানো হয়েছে। ছয়টি বিদ্যুৎ সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে,’ তিনি একটি মন্ত্রিসভা বৈঠকে বলেছিলেন, যার একটি উদ্ধৃতি তিনি টেলিগ্রামে পোস্ট করেছেন।
তিনি বলেন, এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দশ হাজার বিদ্যুৎ সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্যামিগাল বলেন, ঝিটোমির এবং আশেপাশের অঞ্চলের কিছু জনবসতি, সেইসাথে কিয়েভের কিছু অংশে মঙ্গলবার সকালে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী জনগণকে বিশেষ করে সন্ধ্যার সময় বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানোর আহ্বান জানান। ‘ওয়াশিং মেশিন, ওয়াটার বয়লার, এয়ার কন্ডিশনার, স্পেস হিটার ব্যবহার করবেন না, বৈদ্যুতিক কেটল এবং স্টোভ ব্যবহার করা বন্ধ করুন, আপনি যদি সেখানে না থাকেন তবে ঘরের আলো নিভিয়ে দিন, আপনার বাড়ির দৈনন্দিন কাজ দিনের বেলায় করে ফেলুন,’ তিনি বলেন।
ইউক্রেনের দুটি আর্টিলারি ব্যাটারি ও একাধিক রকেট লঞ্চার প্লাটুন ধ্বংস : প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ বুধবার জানিয়েছেন, রুশবাহিনী গত দিনে ইউক্রেনের বিশেষ সামরিক অভিযানে পাল্টা ব্যাটারি ফায়ারে দুটি ইউক্রেনীয় আর্টিলারি ব্যাটারি এবং উরাগানে একাধিক রকেট লঞ্চার দুটি প্লাটুন ধ্বংস করেছে।
মুখপাত্র বলেছেন, দোনেৎস্ক গণপ্রজাতন্ত্রে ব্যাটারি বিরোধী যুদ্ধে খারকভ অঞ্চলের গ্লুশকোভকা বসতি এলাকায় দুটি আর্টিলারি ব্যাটারি এবং খারকভ অঞ্চলের ভলচানস্ক সম্প্রদায় এবং চাসভ ইয়ার এলাকায় উরাগান একাধিক লঞ্চ সিস্টেমের দুটি প্লাটুনসহ আঘাত করা হয়েছে।
কোনাশেনকভ রিপোর্ট করেছেন, রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের তিনটি গোলাবারুদ ডিপো এবং দুটি এস-৩০০ বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে।
মুখপাত্র বলেছেন, ‘খারকভ অঞ্চলের চেরভোনা ডোলিনা, জাপোরোজিয়ে অঞ্চলের নভোগ্রিগোরোভকা এবং নিকোলায়েভ অঞ্চলের বেরেজনেগোভ্যাটোয়ের জনবসতির এলাকায় তিনটি গোলাবারুদ ডিপো ধ্বংস করা হয়েছে’।
এছাড়াও, রুশবাহিনী খারকভ অঞ্চলের কুপিয়ানস্ক এবং ওডেসা অঞ্চলের নোভয়েলিজাভেটোভকা এলাকায় দুটি ইউক্রেনীয় এস-৩০০ সারফেস টু এয়ার মিসাইল লঞ্চার ধ্বংস করেছে।
ইউক্রেনীয় বাহিনীর জাপোরোজিয়ে পারমাণবিক প্ল্যান্ট দখলের চেষ্টা ব্যর্থ : কাখোভকা জলাধারের বাম তীরে রাশিয়ান সৈন্যদের আক্রমণ প্রতিহত করার সাথে সাথে ইউক্রেনের দুটি কোম্পানির আক্রমণকারী বাহিনী অবতরণ এবং জাপোরোজিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করার আরেকটি প্রচেষ্টা করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট-জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ গতকাল একথা জানিয়েছেন।
‘কিয়েভ শাসকরা জাপোরোজিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ের হুমকি তৈরির লক্ষ্যে উস্কানি বন্ধ করেনি। গতকাল ভোর ৪টার দিকে দুটি শত্রু কোম্পানি আক্রমণ বাহিনী অবতরণ করার আরেকটি প্রচেষ্টা চালিয়েছে। কাখোভকা জলাধারের বাম তীরে এবং পারমাণবিক কেন্দ্রের অঞ্চল দখল করে। শত্রুরা ৩৭টি নৌকা এবং ইউক্রেনীয় সৈন্যদের সাথে ১২টি ভারী এবং ২৫টি হালকা জাহাজসহ আক্রমণ বাহিনীকে অবতরণ করার জন্য নৌযান জড়িত করে’ মুখপাত্র বলেছেন। জেনারেল বলেন, জাপোরোজিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাহ্যিক ঘের রক্ষাকারী রাশিয়ান সৈন্যদের সক্রিয় অভিযানের ফলস্বরূপ শত্রুর আক্রমণ বাহিনী ধ্বংস হয়ে গেছে।
কোনাশেনকভ রিপোর্ট করেছেন, ‘ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি ৯০ জনেরও বেশি সৈন্য এবং ১৪টি নৌকা। আক্রমণকারী বাহিনীর অবশিষ্টাংশ কাখোভকা জলাধারের এলাকায় আর্টিলারি ফায়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে’।
রাশিয়া শত্রু বাহিনীকে পিষে ফেলছে : রুশ কমান্ডার : ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনীর ইন্টিগ্রেটেড গ্রুপ অফ ফোর্সের কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়ান সৈন্যরা ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানে দ্রুত অগ্রগতির চেষ্টা করছে না এবং তারা অবিরাম শত্রু বাহিনীকে গ্রাস করছে।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর পশ্চিমা উস্কানিদাতারা সামরিক ও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও নির্বিশেষে খেরসনের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, রাশিয়ান কমান্ডার বলেছেন। ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের অঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে,’ তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানে উচ্চ গতির অগ্রগতি চায় না। আমাদের একটি ভিন্ন কৌশল আছে... আমরা প্রতিটি সৈন্যকে রেহাই দিয়েছি এবং ক্রমাগতভাবে অগ্রসরমান শত্রুকে পিষে দিচ্ছি।’ কমান্ডার জানান, রাশিয়ান যুদ্ধ বিমান ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানে ৩৪ হাজারের বেশি অভিযান পরিচালনা করেছে, ৭ হাজারের বেশি নির্দেশিত যুদ্ধাস্ত্র নিযুক্ত করেছে।
সুরোভিকিন বলেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী প্রতিদিন ৬০০ থেকে ১ হাজার সৈন্য হারাচ্ছে। রাশিয়া চায় ইউক্রেন পশ্চিমা ও ন্যাটো থেকে স্বাধীন হোক এবং রাশিয়ার জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হোক। ‘শত্রু হল অপরাধী শাসন, যা ইউক্রেনের নাগরিকদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। আমরা ইউক্রেনীয়দের সাথে আছি,’ তিনি যোগ করেন।
ড্রোনের পাশাপাশি রাশিয়াকে ক্ষেপণাস্ত্রও সরবরাহ করবে ইরান : যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মতে, মাঝারি-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের একটি ব্যাচের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক সস্তা কিন্তু কার্যকর ড্রোন সরবরাহ করতে সম্মত হয়ে ইরান ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার জন্য অস্ত্র সরবরাহের প্রতিশ্রুতি আরও গভীর করেছে। আসন্ন শীতের আগে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোকে পদ্ধতিগতভাবে ধ্বংস করার একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইরানের সারফেস-টু-সারফেস ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করদে পারে রাশিয়া। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সচিব, বেন ওয়ালেস, যুদ্ধের বিপজ্জনক নতুন পর্ব নিয়ে আলোচনা করতে, ইরানের জড়িত থাকার বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য জানাতে জন্য এবং রুশ আক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য ইউক্রেনকে নতুন বিমান প্রতিরক্ষার কী প্যাকেজ সরবরাহ করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত নোটিশে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন।
৬ অক্টোবর এ নিয়ে রাশিয়া-ইরানের চুক্তি হয়। এদিন ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার, ইরান রেভ্যুলেশনারী গার্ডের দুইজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের দুইজন কর্মকর্তা রাশিয়ার মস্কো সফরে যান। তারা রাশিয়ায় অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে কথা বলতে যান। ইরানের একজন কূটনীতিক এ সফর সম্পর্কে জানিয়েছেন, রাশিয়ানরা আরও ড্রোন এবং আরও উন্নত নিখুঁত মিসাইল চেয়েছে, বিশেষ করে ফাতেহ এবং জোলফাঘার মিসাইল। এ দুটি স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যথাক্রমে ৩০০ কিমি (১৮৫ মাইল) এবং ৭০০কিমি (৪৩৫ মাইল) দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। ওই কূটনীতিক আরও বলেছেন, এগুলো (অস্ত্র) কোথায় ব্যবহার হবে সেগুলো বিক্রেতার (ইরানের) দেখার বিষয় না। আমরা পশ্চিমাদের মতো ইউক্রেন যুদ্ধে পক্ষ নেইনি। আমরা কূটনীতির মাধ্যমে এ দ্বন্দ্বের অবসান চাই।
তিন ছেলেকে যুদ্ধে পাঠালেন চেচেন নেতা কাদিরভ : দুই সপ্তাহ আগে চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ তার তিন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইনের ‘সবচেয়ে কঠিন’ অংশে লড়াই করার জন্য পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী এবার তার তিন কিশোর ছেলেকে এবার দেখা গেল ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ অভিযানে যোগ দিতে।
সোমবার তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে মারিউপোলে তার ছেলেদের যুদ্ধে যোগদানের একটি ভিডিও ফুটেজ শেয়ার করেন কাদিরভ। ফুটেজটি চেচনিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয়েছিল, যেখানে কাদিরভের কন্যা, চেচেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আইশাত কাদিরোভাকে স্থানীয় রাশিয়ান নেতাদের সাথে দেখা করতে দেখা গেছে। যদিও কাদিরভ টেলিগ্রামে গর্ব করেছিলেন যে, তার ছেলে ১৬ বছরের আখমত, ১৫ বছরের এলি এবং ১৪ বছর বয়সী অ্যাডাম অবশেষে ‘গানপাউডারে গন্ধ নিতে’ গিয়েছেন, ফুটেজে দেখা গেছে যে, তারা ভারী সশস্ত্র নিরাপত্তা দ্বারা বেষ্টিত। নিজের ছেলেদের ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকে যুদ্ধে পাঠিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির প্রতি আনুগত্য ও সংকল্প আবারও প্রমাণ করলেন চেচেন নেতা কাদিরভ।
ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণের বিরোধিতায় ক্রোয়েশিয়া : মঙ্গলবার ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোরান মিলানোভিচ বলেছেন যে, তিনি তার দেশে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণের বিরোধিতা করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি এই ধারণাকে সমর্থন করি না কারণ আমি ক্রোয়েশিয়াকে কোনভাবেই এই যুদ্ধে জড়াতে দিতে চাই না। কমান্ডার-ইন-চিফ হিসাবে, আমি এটি অনুমোদন করি না।’
মিলানোভিচ বলেছেন, তিনি মনে করেন যে ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণের মিশন বেশ কয়েকটি ইইউ দেশে গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে। ‘আমি এটা পছন্দ করি না। এটি ক্রোয়েশিয়ায় যুদ্ধ নিয়ে আসতে পারে,’ তিনি বলেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, ইউক্রেনের সঙ্ঘাত থেকে ‘রাজনৈতিক ভঙ্গি এবং নিম্ন নৈতিকতার লোকেদের বেশি লাভ’ হচ্ছে। সূত্র : তাস, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি নিউজ, দ্য ডেইলি বিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ