Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থের বিনিময়ে ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক ককেশাসের মুসলমানরা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৪৪ এএম

ইউক্রেনে যুদ্ধ করার জন্য গত মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আংশিক সেনা সমাবেশের ঘোষণা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ককেশাস অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। বেশকিছু সহিংস বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। তবে কাস্পিয়ান এবং কৃষ্ণসাগরের মধ্যবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী সার্কাসিয়ান এবং অন্যান্য মুসলিমরা অনেকেই লাভজনক মাসিক বেতনের বিনিময়ে যুদ্ধ করতে ইচ্ছুক। মিডল ইস্ট আই (এমইই) এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

আহমেদ, উত্তর ককেশাসে বসবাসকারী একজন সার্কাসিয়ান খনি শ্রমিক। তিনি এমইইকে জানিয়েছেন যে তিনি তার ছেলেকে সেনাবাহিনীতে চাকরি করতে রাজি করেছেন। কারণ তাদের শহরে কয়েকটি পুরনো কারখানা এবং খনি ছাড়া অন্য কোনো চাকরি ছিল না। তিনি বলেন, ‘একটি কারখানা বা একটি খনিতে কাজ খোঁজার চেয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা অনেক ভাল। আমরা এটি প্রত্যাখ্যান করতে পারি না। এতে অনেক টাকা।'
আহমেদ জানান, যদি তার ছেলে যুদ্ধে বেঁচে যায় এবং প্রতিশ্রুত অর্থ নিয়ে ফিরে আসে তবে তিনি নতুন কোনো ব্যবসা শুরু করতে পারবেন।
ককেশাস রাশিয়ান ফেডারেশনের সবচেয়ে অবহেলিত অঞ্চল। এখানে বিনিয়োগ এবং শিল্পের অভাব রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, উত্তর বা পূর্ব রাশিয়ার মত রুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলেই বেশি চাকরি রয়েছে। রাশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র অর্থনৈতিক অঞ্চল উত্তর ককেশীয় ফেডারেল ডিসট্রিক্ট। এই অঞ্চলের মাসিক ন্যূনতম মজুরি প্রায় ১৩ হাজার রুবল (২০৫ ডলার)। অথচ রুশ সরকার সৈন্যদের প্রতি মাসে ১ লাখ ৩৫ হাজার রুবল (২ হাজার ১৩১ ডলার) দেয়ার অঙ্গীকার করেছে।

ইব্রাহিম, একজন নিয়োগপ্রাপ্ত সার্কাসিয়ান সৈনিক। তিনি জানান, লাভজনক বেতনের কারণে তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে যেতে রাজি হয়েছিলেন। শুরুতে তিনি ভেবেছিলেন, স্থানীয় কর্মকর্তারা তার কাছে পৌঁছানোর আগেই তার অর্থ কেটে নেবেন। তিনি বলেন, ‘তবে এই বেতনের অর্ধেক পেলেও তা আমাদের জন্য যথেষ্ট।'

তবে সবাই যে অর্থের লোভে যুদ্ধে যাচ্ছেন তা কিন্তু নয়। অনেকেই হুমকির ভয়ে যুদ্ধে যেতে রাজি হচ্ছেন। তারা জানাচ্ছেন, যুদ্ধ করতে অস্বীকার করলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিশোধ নেবে।

কাম্বুলাত নামে কাবার্ডিয়ান গোত্রের আরেক সার্কাসিয়ান বলেন, ‘আমি জানি ইউক্রেনে রাশিয়ার অবস্থা ভাল না। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় কর্মকর্তারা যেন রাগ না করেন, এজন্য ছেলেকে যেতে দিতে হবে বলে মনে হচ্ছে।'
শামিল নামে দাগেস্তানের একজন জানান, তার ছেলের পরিবর্তে রাশিয়ানদেরই ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা উচিত। তারপরেও তিনি তার ছেলেকে যুদ্ধে যেতে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধে হাজার হাজার চেচেন যোদ্ধাদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এই বছরের শুরুর দিকে কৃষ্ণ সাগরের গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিউপোল দখলে তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

পুতিনের অনুগত হিসেবে পরিচিত চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ। তিনি রাশিয়ান ফেডারেশনের অন্তর্গত একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত ককেশাস অঞ্চল চেচেন প্রজাতন্ত্রের প্রধান। রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের সবচেয়ে বড় সমর্থক তিনি। এই অঞ্চলের অনেকেই কাদিরভকে ভয় পান। তার হুমকির ভয়েও যুদ্ধে যেতে বাধ্য হচ্ছেন চেচেনরা।

সম্প্রতি কাদিরভ দাবি করেন, আরো ৭০ হাজার চেচেন যোদ্ধা ইউক্রেনে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। প্রসঙ্গত, বর্তমানে ইউক্রেনে ১০ হাজার চেচেন যুদ্ধ করছেন। সূত্র: মিডল ইস্ট আই



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ