মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ন্যাটো সদস্য তুরস্ক এবং জোটটির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ককে বড় ধরনের পরীক্ষার মুখে ফেলবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তাদের সম্পর্কটি আরো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বুধবার তুরস্ককে ইউরোপে রাশিয়ান গ্যাস সরবরাহের মূল সঞ্চালকে পরিণত করার প্রস্তাবও দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার কাজাখস্তানের অস্তানায় তাদের বৈঠকে তিনি বলেছেন যে, তুরস্কে রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পূর্ণ পরিমাণে সরবরাহ করা হয়েছে এবং আঙ্কারা ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের জন্য আজ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদারে পরিণত হয়েছে।
পুতিন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের প্রশংসা করে বলেন যে, তুর্কি-স্ট্রিম প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের বিষয়ে তার অটল অবস্থানের কারণে এই ধরনের ফলাফল অর্জন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হাইড্রোকার্বন শক্তি সম্পর্কে বলতে গিয়ে আমার বলা উচিত যে, প্রাকৃতিক গ্যাসসহ আমাদের হাইড্রোকার্বন সরবরাহ সম্পূর্ণ পরিমাণে এবং আপনার অনুরোধ অনুসারে সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা তুরস্কের মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলোতে গ্যাস পরিবহনের ব্যবস্থাও করেছি এবং ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহের জন্য তুরস্ক আজ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রুট হয়ে উঠেছে।
বছরের পর বছর ধরে তুরস্ক ন্যাটোতে রাশিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত অংশীদার হিসেবে রয়েছে। এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ দেশটির গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তুরস্ক রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখার জন্য পশ্চিমের বেশিরভাগ অংশে একটি বিশ^াসঘাতক হিসাবে সমালোচিত হলেও, যুদ্ধ চলাকালীন ইউক্রেনকে সাহায্য করে ন্যাটো সদস্য হওয়ার দায়িত্ব পালন করেছে। তুরস্ক ইউক্রেনকে সশস্ত্র ড্রোন বিক্রি করেছে, এবং চারটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন বিধ্বংসী ‘আদা-ক্লাস’ যুদ্ধ জাহাজ তৈরিতে সহায়তা করছে, যার প্রথমটি এই মাসের শুরুতে পানিতে নামানো হয়েছে। রাশিয়াকে তার কৃষ্ণ সাগরের নৌবহরকে শক্তিশালী করতে বাধা দেওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির আহŸান জানিয়েছে এবং চারটি ইউক্রেনীয় প্রদেশকে সংযুক্ত করার রাশিয়ান পদক্ষেপের নিন্দাও করেছে।
এই গ্রীষ্মে তুরস্কের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তির অধীনে ইউক্রেন সমুদ্রপথে শস্য রপ্তানি আবার শুরু করেছে, যা রাশিয়ান নৌ-অবরোধের অধীনে ছিল। তবে, আজকাল, এরদোগানকে ইউক্রেন নিয়ে পুতিনের নিন্দা করার চেয়ে রাশিয়াকে ‘উস্কানি’ দেওয়ার জন্য পশ্চিমা সরকারগুলোকে ধাতানি দিতে বেশি আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। রাশিয়া নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার পর গত মাসে এরদোগান মন্তব্য করেন, ‘ইউরোপ যা রোপন করেছে, তার ফল ভোগ করছে।’
তুরস্ক রাশিয়ার জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে। এটি রাশিয়ার বাজারকে স্বাগত জানানো ইউরোপের একমাত্র দেশ। এবং বিশ্ব মঞ্চে তার অবশিষ্ট বৈধতা উদ্ধার করতে এরদোগানের সহযোগিতা প্রয়োজন পুতিনের। তুরস্কের জন্য রাশিয়া আরো মূল্যবান ব্যবসায়িক অংশীদার এবং নগদ অর্থের উৎস। এছাড়া, আগামী বছর জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পুতিনের সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে এরদোগানের।
তুরস্ক শুধু রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতাই করছে না, নিষেধাজ্ঞাগুলো থেকে লাভবান হওয়ার পথও বের করেছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য পুরো ২০২১ সালের ৩ হাজার ৪শ’ ৭০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ইতিমধ্যেই এই বছর ৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। এটি একটি নতুন রেকর্ড। পাশাপাশি, প্রতিদিন মস্কো থেকে পর্যটক ও রাশিয়ান যাত্রী ভর্তি প্রায় ২০টি ফ্লাইট ইস্তাম্বুলে নামছে। এবছর ৮ হাজারেরও বেশি রাশিয়ান তুরস্কে বাড়ি কিনেছে এবং রেকর্ডে প্রথমবারের মতো বিদেশী ক্রেতাদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। শুধুমাত্র আগস্টেই রাশিয়ানরা তুরস্কে ১শ’ ২৮টি নতুন কোম্পানি স্থাপন করেছে বলে জানা গেছে।
রাশিয়া তুরস্কের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাতেও একটি বুস্টার শট দিয়েছে। গ্রীষ্মে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ‘রোসাতম’ তুরস্কের ভ‚মধ্যসাগর উপক‚লে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়নের জন্য তুরস্ককে প্রায় ৫শ’ কোটি মার্কিন ডলার দিয়েছে। তবে, একজন মার্কিন ট্রেজারি কর্মকর্তা রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো এড়াতে তুরস্ককে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং তুর্কি কোম্পানিগুলোকে নিষিদ্ধ রাশিয়ানদের সাথে ব্যবসা করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। তুর্কি ব্যাঙ্কগুলো শুধুমাত্র রাশিয়ার এমআইআর অর্থ পরিষেবা ব্যবহার স্থগিত করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
তুরস্কের মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরে ৮৩ শতাংশে পৌঁছেছে। এরদোগান আগামী বছরের নির্বাচনের আগে কঠিন প্রতিক‚লতার মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি সউদী আরব এবং ইউএই’র কাছ থেকে অর্থনৈতিক সমর্থন নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এখন এরদোগান পুতিনের সমর্থন খুঁজছেন বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বের বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিকারক হওয়া ছাড়াও সউদী আরবের পর রাশিয়া দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক এবং ওপেকপ্লাসের সদস্য, যারা গত সপ্তাহে তেল উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে, পুতিন বলেছিলেন যে, রাশিয়া ২০২৫ সাল পর্যন্ত বর্তমান মাত্রায় তেল উৎপাদন ও রপ্তানি ধরে রাখার পরিকল্পনা করেছে এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও মস্কো বিশ্ব শক্তির বাজারে তার শীর্ষস্থানীয় অবস্থান ছাড়বে না।
তুরস্ক সম্প্রতি তার রাশিয়ান গ্যাস বিলের ২৫ শতাংশ রুবলে পরিশোধ করতে সম্মত হয়েছে এবং বøুমবার্গের মতে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাশিয়াকে অন্তত কিছু গ্যাস ঋণ স্থগিত করতে আহŸান করেছে। যখন ইউরোপীয় নেতারা রাশিয়ান গ্যাস ছাড়া ভয়ঙ্কর শীতের মধ্য দিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন, তখন এরদোগান উচ্ছসিতভাবে ১০ অক্টোবর বলেছিলেন, ‘আমি তাদের বলেছি আমাদের এই ধরনের উদ্বেগ নেই।’ তবে, আগামী নির্বাচনে এরদোগান ক্ষমতা হারালেও রাশিয়ার প্রতি তুরস্কের নীতির নাটকীয় কোনও পরিবর্তন ঘটবে না। কারণ তুরস্কের কোনো রাজনৈতিক দলেরই রাশিয়ার সঙ্গে মোকাবিলা করার আগ্রহ নেই। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট, ইউরেক্টিভ, তাস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।